এমন আইন করা হচ্ছে যে মিডিয়ার স্বাধীনতা থাকবে না

কয়েকটি ঘটনায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ার (টেলিভিশন চ্যানেল) ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেছেন, এমন আইন হচ্ছে যে, তাদের (ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার) কোন স্বাধীনতা থাকবে না। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভিক্ষুকমুক্ত করতে গতকাল সচিবালয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জে খুনের ঘটনার বীভৎস চিত্র ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড করে বার বার দেখাচ্ছে। এটা দেখিয়ে তারা মানুষকে উত্তেজিত করছে। ৫ থেকে ৭টি লাশ নিয়ে টেলিভিশনগুলোতে যা ইচ্ছা তাই দেখানো হচ্ছে। আপনারা কিনা করছেন? এটা কি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাজ? আপনারা সিএনএন, বিবিসি দেখেন, বড় বড় ঘটনার বীভৎসতা কি সেখানে দেখানো হয়? গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, পুলিশ আত্মত্যাগ করে সেটা নিয়ে খবর আসে না, খবর আসে সন্ত্রাসীদের পক্ষে। টাঙ্গাইল থেকে পতিতাপল্লী উচ্ছেদের বিষয়ে মন্ত্রী মহসিন আলী বলেন, টাঙ্গাইলের প্রাচীন যৌনপল্লীটি যে সব মাওলানা উচ্ছেদ করেছেন তাদের সৌদি আরবের আইনে শিরশ্ছেদ করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, সমপ্রতি টাঙ্গাইল শহরে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো একটি যৌনপল্লী উচ্ছেদ করেন স্থানীয় জনতা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। পতিতাপল্লী উচ্ছেদে বিদেশী চাপের কথা জানিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আমার কাছে ফোন এসেছে। তারা জানতে চেয়েছে, তোমাদের ওখানে কেন ক্রমাগত এগুলো হচ্ছে? এর কি জবাব দেবো? এরপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে যেমন শিরশ্ছেদের আইন আছে, আমাদের এখানেও এটা করা দরকার। যারা এগুলো (পতিতাপল্লী) উচ্ছেদ করেছে সেখানে শরিয়াহ আইন জারি করে তাদের শিরশ্ছেদ করা উচিত। উল্লেখ্য, প্রথমবার মন্ত্রী হওয়া মৌলভীবাজার  থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন মন্তব্য ও কর্মকা-ে সমালোচিত হয়েছেন। ‘হু ইজ বিএনপি’, প্রকাশ্য মঞ্চে সিগারেটে সুখটান, ‘মুখ ঢাকলে চলবে না, খুলতে হবে’- এসব মন্তব্য ও কর্মকা-ের কারণে তিনি গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। ওদিকে রাজধানীর সাতটি এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর এবার সে সব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে একই সভায়। সভা শেষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জানান, রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা, হোটেল সোনারগাঁও, রূপসী বাংলা, রেডিসন, বেইলি রোড এবং কূটনৈতিক জোন ও দূতাবাস এলাকাগুলো ভিক্ষুকমুক্ত রাখতে রোজার ঈদের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এর আগে গত বছরের ২২শে জানুয়ারি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ সাত এলাকা ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ করতে সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়। এসব এলাকার ভিক্ষুকদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম নয়, তাদের সরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তরের পাশাপাশি রাজধানীতে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া, ওই সব এলাকায় কেউ ভিক্ষা করলে তার বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘যথাযথ’ ব্যবস্থা নেয়া, এ কাজে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেয়া এবং প্রয়োজনীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। আগের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়া সম্পর্কে সৈয়দ মহসিন আলী বলেন, ঢাকা শহরকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে এর আগে উদ্যোগ নিয়েও অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন আমরা আর ব্যর্থ হতে চাই না। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে কাজটি এমনভাবে করবো যেন আর ভিক্ষা না হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর আগে ওই সব এলাকায় মাইকে প্রচার চালানো হবে। ‘ভিক্ষুক চক্রের’ বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে পুরো দেশকেই বদলে ফেলা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবার নাগরিক অধিকার দেয়ার কথা দিয়েছেন। এরপরও কেন তারা ভিক্ষা করবে? আমরা তো সরকারে আছি, আমরা ঘোড়ার ঘাস কাটি নাকি? সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাছিমা বেগম ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মহানগর পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.