অনুপ চেটিয়ার হস্তান্তর নিয়ে বিজেপির সঙ্গে দরকষাকষি?

আসামের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক আসাম ট্রিবিউন ইঙ্গিত দিয়েছে যে, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাকে নিয়ে ঢাকা ভবিষ্যতে দিল্লির সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারে। কারণ ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি কি ধরনের মনোভাব গ্রহণ করে সেটা ঢাকা এখন পর্যবেক্ষণ করছে। গত ডিসেম্বরের মধ্যে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরে আশ্বাস দিয়েছিল বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার আসামের ধুবরি সীমান্ত দিয়ে অনুপ চেটিয়ার স্ত্রী মনিকা ও দুই মেয়ে বুমিয়া ও বুলবুলিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। বুমিয়া স্নাতক ও বুলবুলি মেডিকেলে পড়ছিল। ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরে একটি তীব্র আইনি লড়াইয়ে ভারত ঘনিষ্ঠভাবে অংশগ্রহণ করে। ১৭ বছর পরে অনুপ চেটিয়াকে বাদ দিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হস্তান্তর করা হলো। এবিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখে।
ভারতীয় পত্রিকায় এবিষয়ে নানা ধরনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে।  কলকাতার টেলিগ্রাফ ১৮ই মে বলেছে, এখন আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে যে, অনুপকে বাংলাদেশ ‘শিগগিরই’ ভারতের হাতে তুলে দেবে। তারা অনুপ পরিবারের একটি আলোকচিত্রও প্রকাশ করেছে। মনিকা কি করে আসাম পৌঁছাল তা বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেন। তিনি তার দুই মেয়েকেও মিডিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তবে মনিকা মিডিয়ার মাধ্যমে তার স্বামীকে ভারতে ফেরত পেতে আবেদন জানিয়েছেন। টেলিগ্রাফ আরো বলেছে, উলফার সংলাপপন্থি অংশের নেতারা মনিকাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মনিকা উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার মায়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। অনুপ চেটিয়া ১৯৯২ থেকে ভারতের ওয়ানটেড তালিকায় রয়েছেন। উভয় নেতার বাড়ি একই গ্রামে, আত্মীয়তাও আছে। তাদের মন্ত্র হচ্ছে, আসাম কখনও ভারতের অংশ ছিল না। তাই আসামের স্বাধীনতা কাম্য। 
গত ১৯শে মে আসাম ট্রিবিউন খবর দিয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ আকস্মিকভাবে উলফার জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ চেটিয়ার পরিবারকে দু’দিন আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কারণে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রগুলো বলেছে, নিকট ভবিষ্যতে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের সম্ভাবনা কম। কারণ বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন ধরনের আইনগত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। উপরন্তু বাংলাদেশ সরকার পর্যবেক্ষণ করছে যে, পরবর্তী কি ধরনের পদক্ষেপ ভারতের নতুন সরকার ঢাকার প্রতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য যে, তিন বছর আগে আসাম ট্রিবিউনে কল্যাণ বড়ুয়া একই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এতে বলা হয়েছিল, অনুপ চেটিয়াকে শিগগিরই ভারতের কাছে বাংলাদেশ হস্তান্তর করবে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ অনুপ চেটিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাংলাদেশের আদালতে বিবেচনাধীন রয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলেছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিকে পিল্লাই আসাম ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশ তাকে হস্তান্তরে সহযোগিতা করছে। এ নিয়ে তার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সন্তোষজনক আলোচনা হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে যে, অনুপ চেটিয়া যদি তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে তার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে। উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন বর্তমান শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে অনুপ চেটিয়ার অংশগ্রহণ দরকার।
টাইমসের ইন্ডিয়া গত ১৮ই মে ডিব্রুগর ডেটলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, উলফা জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ চেটিয়া এবং তার দুই সন্তান গত শুক্রবার ঢাকা থেকে এখানে পৌঁছায়। চেটিয়া বর্তমানে বাংলাদেশে ‘প্রটেকটিভ কাস্টডিতে’ রয়েছেন। তিনি ভারতে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় আছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে অনুপ চেটিয়ার পরিবার ঢাকার একটি ভাড়াটে বাসায় বসবাস করছিলেন। ওই বছরই উলফার অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় নেতা ঢাকা থেকে তাদের ঘাঁটি সরিয়ে ফেলেন। ১৯৯৭ সালে অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। গত ১৪ই মে চেটিয়ার স্ত্রী মনিকা বড়ুয়া ও তাদের কন্যা বুমন (২২) এবং বুলবুলি (১৭) ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা শুক্রবার সকালে আসামের ধুবরী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছায়।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ১৮ই নভেম্বর আগরতলা থেকে দি হিন্দুতে সৈয়দ সাজ্জাদ আলীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর আগরতলায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে উল্লেখ করেছেন যে, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে এখনই ভারতের কাছে তুলে দেয়া যাবে না। কারণ তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একটি আপিল করেছেন। অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে ৭ বছর কারাদণ্ড পেয়েছিলেন এবং তিনি তা ভোগ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.