একরাম হত্যা-র‌্যাবের কাছে স্বীকার করলেন গ্রেফতার ৮ যুবক

উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে গুলি করে আবিদ। পিস্তল সংগ্রহ করেন জাহিদ চৌধুরী। শিবলু নামের এক যুবক কিলারদের পিস্তল চালানো শিখিয়ে দেয়। ফেনী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ হেল বাকি ওরফে শিবলু কমিশনার ২৫-৩০ জন কিলারকে সংগঠিত করেন এবং তাদের সবার হাতে অস্ত্র তুলে দেন।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ৮ যুবক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের শনিবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। তারা হলেন- আবিদুল ইসলাম আবিদ, জাহিদুল ইসলাম সৈকত, চৌধুরী মোঃ নাফিজ উদ্দিন অনিক, কাজী সানান মাহমুদ, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, শাহজালাল উদ্দিন শিপন, হেলাল উদ্দিন ও জাহিদ হোসেন। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই গ্রেফতারকৃতরা ঢাকায় এসে আত্মগোপন করেন। গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছেন, বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জিহাদ চৌধুরীর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে খুন করা হয়েছে। তবে এ খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগেরই শীর্ষ পর্যায়ের আরও কয়েকজন নেতা।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান শনিবার র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ঘটনার পরিকল্পনা করা হয় ফেনীর সালাম জিমনেশিয়ামে। সেখানে সিফাত, সানি, আবিদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ১৯ মে রাতে এ পরিকল্পনা করা হয় আর ২০ মে সকালেই প্রায় ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। এ হত্যাকাণ্ডে মোট পাঁচটি পিস্তল ব্যবহার করা হয়। এ পিস্তলগুলো সংগ্রহ করেন জাহিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। ফেনীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিপলু পিস্তল চালানো শিখিয়ে দেয় আর উপজেলা চেয়ারম্যানকে সেই পিস্তল দিয়ে সরাসরি গুলি করে আবিদ।
র‌্যাব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, খুনিরা কয়েকটি গ্র“পে ভাগ হয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। প্রতিটি গ্র“পের সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে হত্যার জন্য পরিকল্পনাকারীরা ওই দিন সকাল ৮টা থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নেয়। সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান গাড়ি করে নিজের বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হত্যাকারীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের অবস্থান নেয়া গ্র“পগুলোর মধ্যে যোগাযোগ শুরু করে দেয়। উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের গাড়িটি সিনেমা হলের সামনে এলেই একটু ভিন্ন কায়দায় নসিমন, করিমন ও টেম্পো দিয়ে পথ রোধ করা হয়। এ সময় গাড়িটি রাস্তার ডিভাইডারে উঠে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে তারা সেখানে ব্যাপকভাবে ককটেল ফাটিয়ে আতংক তৈরি করে। এতে লোকজন ভয়ে ও আতংকে সেখান থেকে দূরে সরে যায়। এ সময় একরামের গাড়িতে চালকসহ মোট ৪ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন গাড়িতে থাকা একরামের নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে প্রতিরোধ করারও চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। পরে তারা সেখান থেকে সরে যান। যেহেতু হত্যাকারীদের টার্গেট ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান, তাই তিনি আর বের হতে পারেননি বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা। গুলি করার পর সেই গাড়িটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় হত্যাকারীরা। তখনও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক তৈরি করা হয়। যাতে সাধারণ মানুষ কাছে আসতে না পারে। গুলি করার সময় এ ঘটনার পরিকল্পনাকারীদের কয়েকজন ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
আট যুবককে গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেয়া র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ একরামুল হক প্রতিদিনের মতো শহরের মাস্টারপাড়ার বাসা থেকে গাড়িতে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের দিকে রওনা হন। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফেনী প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মহিবুল্লাহ ফরহাদসহ মোট ৫ জন। তাদের বহনকারী গাড়িটি শহরের একাডেমি এলাকায় বিলাসী সিনেমা হলের সামনে পৌঁছামাত্রই আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা একদল দুষ্কৃতকারী গাড়িটিকে একটি ইজিবাইক দিয়ে পথরোধ করে। দুর্বৃত্তরা প্রথমে চেয়ারম্যান একরামকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে কয়েকটি গুলি করে ও বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটায়। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তরা লাঠি ও রামদা দিয়ে গাড়িতে উপর্যুপরি হামলা চালায়। তখন গাড়িতে থাকা চালকসহ চারজন আহত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে পারলেও গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যান একরামুল হক গাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। পরে সন্ত্রাসীরা তার গাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে।
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মোঃ আবিদুল ইসলাম আবিদ। তার সঙ্গে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সদস্য নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থান করছে- গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল বসুন্ধরা বি ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১৩৯ নম্বর বাসা থেকে আবিদুলসহ অন্যদের গ্রেফতার করে। ভোররাতে জাহিদ হোসেনকে র‌্যাব-৭ এর একটি দল ফেনীর রামপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জিহাদ চৌধুরী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ একরামুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৯ মে রাতে সালাম জিমনেশিয়ামের ভেতরে একটি কক্ষে মোঃ জিহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আরও কয়েকজনের উপস্থিতিতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিন ২০ মে সকালে তারা সবাই শহরের একাডেমি এলাকায় অবস্থান নেয়। জিহাদ চৌধুরী উপস্থিত সবার উদ্দেশে উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে হত্যার বিষয়ে প্রত্যেকের কার্যক্রম সম্পর্কে চূড়ান্ত ব্রিফিং প্রদান করে। এরপর জিহাদ চৌধুরী. মোঃ আবিদ, কাজী শানান, সিফাত, সানী ও সৈকতকে সর্বমোট ৫টি ৭.৬২ মিমি. পিস্তল প্রদান করেন।
বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে চেয়ারম্যানকে বহনকারী প্রাডো গাড়িটি বিলাস সিনেমা হলের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবিদের নেতৃত্বে একটি ইজিবাইক দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। রুটি সোহেলের নেতৃত্বে কিছু লোক হাতবোমা নিক্ষেপ, রামদা, লাঠি ইত্যাদি সরঞ্জামাদি দিয়ে আতংক সৃষ্টিসহ গাড়িটি ভাংচুর করে। এরপর আবির উপজেলা চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে ২ রাউন্ড গুলি করে। এর পরপরই পিস্তল বহনকারী অন্য সদস্যরা উপর্যুপরি গুলি করতে থাকে। এরই মধ্যে গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ ৪ জন গাড়ি থেকে আহত অবস্থায় বের হতে সক্ষম হন। হত্যাকারীদের মূল টার্গেট উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হওয়ায় তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গাড়িটিতে রুটি সোহেল তার লোকজন দিয়ে পূর্বে সংগৃহীত পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হকের মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে আসামিরা জিহাদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে পিস্তলগুলো ফেরত দিলে জিহাদ চৌধুরী তাদের আÍগোপনে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়। র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ ও অভিযানকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত সাত কিলারের আদ্যোপান্ত : গ্রেফতার হওয়া যুবকরা জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছে, ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো ভাই আবিদুল ইসলাম ওরফে আবিদ আগে ছাত্রদল করতেন। নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি হওয়ার পর সে ছাত্রলীগে যোগ দেয়। আবিদের বাবার নাম ফকরুল ইসলাম বাবর। ২০০৯ সালে সে এসএসসি ও ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করে। এলাকায় সে বখাটে হিসেবে পরিচিত। একরামকে খুনের আগের দিন রাত ৮টার দিকে ট্রাংক রোডের দিঘিরপাড়ে সে শানান, রুটি সোহেল ও বক্করের সঙ্গে মিটিং করে। এদিন বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জিহাদ চৌধুরী তাদের বলে, একরামকে মারধর করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিপন, সিফাত, অসিক ও সৈকত, সানী, মোহন ও রাহাতকে একাডেমি রোডে ডেকে আনা হয়। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মিটিং চলে। একপর্যায় জিহাদ তাদের বলে একরামকে শুধু মারধর করলে হবে না, তাকে মেরে ফেলতেও হবে। তবে রাত ২টার দিকে জিহাদ আবার ফোন করে আবিদকে বলে খুন করা লাগবে না, শুধু মারধর করলেই চলবে। লোকজন নিয়ে সকাল ৮টার দিকে একাডেমি রোডে সবাইকে চলে যেতে বলে। ২০ মে ঘটনার দিন একাডেমি রোডে যায় ভাড়াটে খুনি মানিক, পাংকু আরিফ, ছুট্টু, বক্কর আনিস, আসিফ, রকি, রাসেল, কাইউম ও নয়নসহ আরও অনেকে। রুটি সোহেল তিনটি পিস্তল নিয়ে সেখানে হাজির হয়। এর একটি দেয়া হয় শানানকে, একটি রুটি সোহেল নিজে নেয় এবং আরেকটি নেয় জিহাদ চৌধুরী। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, কেউ বাধা দিতে এলে তাদের গুলি করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ৬-৭টি গ্র“পে ভাগ হয়ে অবস্থান নেয় কিলাররা। কিছুক্ষণের মধ্যে একরামকে বহনকারী গাড়িটি ঘটনাস্থলে চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে মানিক, পাংকু আরিফ, রুটি সোহেল ও কাইউম মিলে একটি অটো ইজিবাইক দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। বাধা পেয়েই একরাম নিজে আত্মরক্ষায় তার লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ে। এ সময় তিন কিলার আতংক ছড়াতে ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। রুটি সোহেল একরামের দেহ লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটি গুলি করে। পাপন, নয়ন এবং আরও কয়েকজন পাশের একটি দোকান থেকে কেরোসিন নিয়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিশন শেষে আবির শানানের কাছ থেকে পিস্তল নিয়ে নেয়। এরপর বড়বাড়ী এলাকায় গিয়ে তার এবং শানানের পিস্তল দুটি ম্যাগাজিনসহ জিহাদ চৌধুরীর কাছে জমা দেয়। দিনের বেশির ভাগ সময় তারা স্টেডিয়াম এলাকায় লুকিয়ে থাকে। ২০ মে রাতে শিপন ও সিফাত রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাদের পূর্বপরিচিত হেলাল উদ্দিনের বাসায় এসে আত্মগোপন করে।
র‌্যাব জানিয়েছে, ফেনীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও একরাম খুনের মিশনে অংশ নেয়া কাজী শানান মাহমুদের পিতা কাজী কামাল উদ্দিন। সে নেশাগ্রস্ত। ঘটনার আগে জিহাদ তাকে বলে, নির্বাচনে তাকে প্রার্থী হতে দেয়নি একরাম। তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করেছে। এর প্রতিশোধ নিতে হবে। কাজী শানান একরামকে খুন করে প্রতিশোধ নেয়ার কথা জানায় জিহাদকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফেনী স্টেডিয়ামে উপস্থিত আবিদ, সৈকত এবং সানীকে পিস্তল চালানো শেখায় জিহাদ। কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী চৌধুরী নাফিজউদ্দিন ওরফে অনিক ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র। ১৯ মে আবিদ, সৈকত, শানানসহ আরও কয়েকজন কিলারের সঙ্গে একরামকে খুনের বিষয়ে বৈঠক করে। ২০ মে সকাল ৯টায় একাডেমি রোডে সালামের দোকানে সে চা পান করছিল। এ সময় পিস্তল হাতে রুটি সোহেল, মানিক, ছুট্ট, পাংকু আরিফ, কাইউম তার কাছে যায়। ১০টা ৪০ মিনিটে একরামের গাড়িটি একাডেমি রোডে এলে অনিকসহ সবাই মিলে গাড়িতে হামলা চালায়। আরেক কিলার সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাতের বয়স মাত্র ২৩ বছর। সে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের (বিবিএ) ছাত্র। একরামের গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করার পর অন্যদের সঙ্গে সিফাতও ঢাকায় পালিয়ে আসে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত আরেক যুবক জাহিদুল ইসলাম ওরফে সৈকত আবিদের পরামর্শে ঘটনার দিন একাডেমি রোডে আসে। এখানে এসে সে তার আরও ৩০ থেকে ৩৫ জন বন্ধুকে দেখতে পায়। এরা হল পিয়াস, আবির, মোহন, রাহাত, সানী, সাফায়েত, নাইম, ছোট আসিফ, কাউসার, রাকিব, মিসাল, সানাম, বাপ্পী, রুপু ও আসফাতসহ অন্যদের সঙ্গে হাত মেলায়। এ সময় ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহেল বাকি ওরফে শিবলু তাদের কাছে এসে বলে এখানে একটা গাড়ি আসামাত্রই তোমরা গাড়িটা আটকে রাখবা। কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়িটি এলে সৈকতসহ অন্যরা মিলে রড, চাপাতি ও ছোরা নিয়ে গাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনার পরদিন সে ২১ মে ঢাকায় পালিয়ে আসে। গ্রেফতারকৃত কিলার শাহজালাল ওরফে শিপনও কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়। ঘটনার আগের দিন সালাম কমিউনিটি সেন্টারে আবিদ, সৈকত, শানান ও পিয়াসের সঙ্গে কিলিং মিশনের বিষয়ে সিপনের কথা হয়। আবিদ শিপনকে বলে একটা মিশনে যেতে হবে। এ জন্য শিবলু কমিশনার জাহিদ চৌধুরী ও মিস্টার প্রয়োজনীয় অস্ত্র জোগান দেবে। ঘটনার দিন ভোরে শিপন তার কাছে দেয়া শিবলু কমিশনারের অস্ত্রগুলো ফেনী স্টেডিয়ামের পাশে একটা ঝোপের মধ্যে ফেলে রাখে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের গাড়িটি এলে অন্যদের সঙ্গে শিপনও গাড়িতে হামলা চালায়। এরপর গভীর রাতে পালিয়ে ঢাকার উত্তরা এলাকায় আত্মগোপন করে। কিলারদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন হেলাল উদ্দিন নামে ২৩ বছরের এক যুবক। র‌্যাব জানায়, হেলাল ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়। তবে সে কিলারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। ২২ মে তার কাছে আশ্রয় নেয় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত সিফাত, শাহজালাল, সৈকত, রিয়াদ, জনি, হাসান, অনিক ও শানান। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জাহিদ হোসেন ভুঁইয়া নামের ১৮ বছরের এক কিশোরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তার বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করছেন বলে জানিয়েছেন। ওদিকে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতার সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন আছেন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। আর দু’জন হলেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা।

No comments

Powered by Blogger.