প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি হোক

গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে আড়াইশ'র মতো নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলা হয় দুই শতাধিক। কিন্তু মঙ্গলবার সমকাল খবর দিয়েছে, 'রেলে নাশকতার তদন্তে গতি নেই'। প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো মামলার জন্য অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দাখিল করেনি রেলওয়ে পুলিশ। রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে গত কয়েক বছরে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠছিল। এ খাতের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। সরকার বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী রেলপথ ও গাড়িগুলোতে নাশকতা চালাতে শুরু করে। স্টেশনে স্থির থাকা বগি ও ইঞ্জিনে আগুন দেওয়া, স্টেশন ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ, লাইন তুলে ফেলা এমনকি চলন্ত গাড়িকে দুর্ঘটনায় ফেলা_ এসবই তারা করেছে পরিকল্পিতভাবে। অতীতে কোনো সময়েই রেলওয়ে খাত এমন সহিংসতার শিকার হয়নি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির কর্মীরাও রেলওয়ে খাতকে বিপর্যস্ত করার কর্মকাণ্ডে শামিল হয়েছে। সরকার-বিরোধিতার নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্পূর্ণ অনুচিত। বাস্তবে দেখা গেল, নাশকতা ও হিংসার আগুনে রেল পুড়লেও সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিকই সম্পন্ন করেছে। এখন খেসারত দিচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়। তাদের নতুন করে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে এবং এর জোগান সহজ হওয়ার কথা নয়। আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলন একেবারে হিংসামুক্ত থাকে না। তাই বলে এ ধরনের পরিকল্পিত নাশকতা কেন? সংশ্লিষ্ট সবাইকেই এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। দেশের স্বার্থ এভাবে উপেক্ষার পরিণতি কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনে না। রেল পুলিশ নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলোর তদন্ত করেছে বলে জানিয়েছে। এ তদন্তের গতি কেন মন্থর_ সেটা স্পষ্ট নয়। মামলা সংখ্যা অনেক এবং বিষয়টি রাজনীতি সংশ্লিষ্ট_ এটি একটি কারণ হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিএনপি সুপরিকল্পিতভাবেই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। এ জন্য ঢালাওভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়েরের কোনো যুক্তি নেই। সন্দেহভাজন হিসেবে কিছু লোকের নামে মামলা দায়ের করাও ঠিক নয়। অভিজ্ঞতা বলে যে, এভাবে মামলা দায়েরকে জনগণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা হিসেবে দেখে থাকে এবং বিরক্ত হয়। এ ধরনের মামলার ভিতও দুর্বল হয়ে থাকে। আমরা আশা করব, রেল পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করায় সক্রিয় হবে। দেখা গেছে, কোনো কোনো স্থানে এক থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত রেললাইন দুর্বৃত্তরা তুলে ফেলেছে। এ ধরনের কাজ করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। গোয়েন্দারা যদি এর সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে না পারে, তাহলে তাদের এ দায়িত্বে রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে ঢালাওভাবে মামলা দায়ের মেনে নেওয়া যায় না। পরিকল্পিতভাবে রেলের ক্ষতি করার সঙ্গে যুক্তদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে এবং এর প্রধান শর্ত হচ্ছে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা। যে ব্যাপকতায় নাশকতা হয়েছে, তাতে অপরাধীদের খুঁজে বের করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। সংশ্লিষ্টরা এ কাজে সফল হবে_ এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.