নিয়মরক্ষার মন্ত্রিসভা

নিয়মরক্ষার নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত মন্ত্রিসভাকে নিয়মরক্ষার হিসেবেই গণ্য করতে হবে। গত রোববার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলো, সেটি নানা কারণে আলোচনার দাবি রাখে। এই মন্ত্রিসভায় নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় ঘটেছে, যা ভারসাম্যমূলক। দ্বিতীয়ত, এতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি কয়েকটি ছোট দলের প্রতিনিধিত্ব আছে। এটি সরকারদলীয় ও তার মিত্রদের রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হলেও জাতীয় সংসদে সত্যিকারের বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিত্ব অমীমাংসিত থাকছে। উপরন্তু সরকারে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব থাকায় সরকার ও বিরোধী দলের বিভাজনরেখা মুছে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তবে শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, গত মন্ত্রিসভার বিতর্কিত ও সমালোচিত সদস্যদের বাদ পড়া। বিগত মন্ত্রিসভার ৫১ জন সদস্যের মধ্যে ৩৫ জনের বাদ দেওয়াকে সামান্য ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এঁদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও অতিকথনের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বাদ পড়া এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর হলফনামায় দেখা যায়, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে কারও কারও সম্পত্তি বেড়েছে শতগুণ বা তারও বেশি। কয়েকজন মন্ত্রীর অযোগ্যতা ও গোঁয়ার্তুমির কারণে বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শুধু মন্ত্রী না থাকা যথেষ্ট নয়, আইনকেও তার পথে চলতে দিতে হবে।
দুদকীয় নীরবতা ভাঙতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি এসব সমালোচনা বিবেচনায় নিয়ে অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজদের ঝেড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেটি প্রাথমিক ভালো কাজ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তবে এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে, বিগত মন্ত্রিসভার সব বিতর্কিত ব্যক্তি যেমন বাদ পড়েননি, তেমনি নতুনদের মধ্যেও কারও কারও নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর এখন সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হবে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে নতুন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করা এবং একই সঙ্গে সুশাসনে ব্রতী হওয়া। সাম্প্রতিক আন্দোলনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহনব্যবস্থা প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, যার বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে অর্থনীতি ও জনজীবনে। তাই, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। মহাজোট আমলের পুরো সময়টা জুড়ে যেভাবে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দৌরাত্ম্য চলছিল, এবারে যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়েও সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার। পাশাপাশি বিরোধী দল যাতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কর্মসূচি পালন করতে পারে, সে জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে না পারলে রাজনীতির অনিয়মতান্ত্রিক পথে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। নতুন সরকারের জন্য সেই ঝুঁকি নেওয়া মোটেই সমীচীন হবে না।

No comments

Powered by Blogger.