রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতন কতটা আইনসিদ্ধ by ইকতেদার আহমেদ

আমাদের দেশে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ কম বেশি ‘রিমান্ড’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। এ শব্দটি ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে আসামি সংশ্লেষে ব্যবহৃত হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর দুটি ধারায় ‘রিমান্ড’ শব্দের উল্লেখ থাকলেও কার্যবিধির কোথাও রিমান্ড শব্দটির সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। ধারা দুটি হল- ১৬৭ ও ৩৪৪। ধারা নং ১৬৭ তে রিমান্ড বিষয়ে বলা হয়েছে- একজন ব্যক্তি পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কার্য সমাপ্ত না হলে এবং ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বস্তুনিষ্ঠ বিবেচিত হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিকটবর্তী আদালতের ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রিমান্ড প্রার্থনা করতে পারেন যা একসঙ্গে ১৫ দিনের অধিক হবে না। ধারা নং ৩৪৪-এ রিমান্ড বিষয়ে বলা হয়েছে- আসামির অপরাধ সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য পাওয়ার পর যদি প্রতীয়মান হয় রিমান্ডের মাধ্যমে অধিকতর সাক্ষ্যপ্রাপ্তি সম্ভব, সেক্ষেত্রে একটি মামলার তদন্ত বা বিচার চলাকালীন আদালত একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন। ধারা নং ১৬৭-এর অধীন রিমান্ডের ক্ষেত্রে পুলিশি হেফাজত হতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপনপূর্বক রিমান্ড চাওয়া হয়, অপরদিকে ধারা নং ৩৪৪-এর রিমান্ডের ক্ষেত্রে একজন আসামি বিচারিক হেফাজতে থাকাকালীন আদালতের কাছে রিমান্ড চাওয়া হয়। একজন আসামির আদালতের নির্দেশনায় কারাগারে অবস্থানকে বিচারিক হেফাজত বলা হয়। ধারা নং ৩৪৪-এ আদালত বলতে ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা আদালতগুলোকে বোঝানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকার কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণীর বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ব্যতীত অপর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড আদেশ প্রদানের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত নন। উল্লেখ্য, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সবসময় একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে থাকেন।
ইংরেজি ‘রিমান্ড’ শব্দটির অর্থ আসামিকে পুলিশি হেফাজতে পুনঃপ্রেরণ। বাংলায় এ শব্দটির অর্থ ও প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় সঠিক কোনো শব্দ ব্যবহৃত না হওয়ায় ‘রিমান্ড’ শব্দটি বিদেশী শব্দ হিসেবে বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং ১৬৭ ও ৩৪৪-এর সংমিশ্রণে ‘রিমান্ড’ শব্দটির ব্যাখ্যা করলে যে অর্থ দাঁড়ায় তা হল- ‘রিমান্ড’ বলতে একজন আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের বিচারিক আদেশের মাধ্যমে পুলিশি হেফাজত হতে পুনঃপুলিশি হেফাজতে অথবা বিচারিক হেফাজত থেকে পুলিশি হেফাজতে প্রেরণ বোঝায়। মামলা প্রমাণের জন্য প্রাপ্ত সাক্ষ্য অপর্যাপ্ত বিবেচিত হলে রিমান্ড চাওয়া যেতে পারে। তবে রিমান্ডে থাকাকালীন শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন আইন দ্বারা সমর্থিত নয়। রিমান্ডের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অধিকতর সাক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের সময় এক আসামির সঙ্গে অপর আসামির মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদসহ বিভিন্নভাবে প্রশ্ন পাল্টা-প্রশ্ন করে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৩৩(২) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং ৬১-এর বিধান অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার পরবর্তী যাতায়াতের সময় ব্যতিরেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করতে হয়। ২৪ ঘণ্টার অতিরিক্ত সময় পুলিশি হেফাজতে রাখতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক আদেশের প্রয়োজন রয়েছে।
সম্প্রতি রিমান্ডে নেয়ার ঘটনা একদিকে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরদিকে রিমান্ডে নেয়ার পর পুলিশ কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। স্বভাবতই জনমনে প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে- অধিকতর সাক্ষ্যপ্রাপ্তির অভিপ্রায়ে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আইনসিদ্ধ কিনা?
এ বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৩৫-এর দফা (৫) ও (৬)-এর বিধানাবলী প্রণিধানযোগ্য। উক্ত দফাদ্বয়ে বলা হয়েছে- প্রচলিত আইনের নির্দিষ্ট দণ্ডের বাইরে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না কিংবা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না।
দণ্ডবিধিতে আদালতকে ৫ ধরনের দণ্ডারোপের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ ৫ ধরনের দণ্ড হল (১) মৃত্যুদণ্ড, (২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, (৩) সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড (৪) সম্পতির বাজেয়াপ্তি এবং (৫) অর্থদণ্ড।
বর্তমানে বলবৎ দণ্ডবিধিটি ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে প্রণীত হয়। দণ্ডবিধি প্রণয়নকালে বেত্রাঘাত সাজা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ১৯৪৯ সালে অবলুপ্ত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে প্রণীত জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের অনুচ্ছেদ নং ৫ আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৩৫(৫)-এর অনুরূপ। জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদে যেসব দেশ স্বাক্ষর প্রদান করেছে সেসব দেশ সনদের বিধানাবলীর সঙ্গে দেশে কার্যকর আইনের সামঞ্জস্য করার অভিপ্রায়ে শারীরিক নির্যাতনকে দণ্ডের প্রকারভেদ থেকে অবলুপ্ত করেছে।
আইনের বিধান অনুযায়ী আদালত ব্যতীত অপর কোনো কর্তৃপক্ষ দণ্ড প্রদানের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত নন। স্পষ্টত শারীরিক নির্যাতন দণ্ড নয়। শারীরিক নির্যাতন সংবিধানের ধারা নং ৩৫-এর দফা (৫) ও (৬)-এর পরিপন্থী। আর পরিপন্থী হলে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নব সন্নিবেশিত অনুচ্ছেদ নং ৭ক (১)(খ)-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অনুচ্ছেদ নং ৭ক (১)(খ) তে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এ সংবিধান বা এর কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে কিংবা উহা করবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তার এ কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে। এ অনুচ্ছেদটির (২) নং দফায় এ কার্যের সহযোগিতা প্রদানকে একই অপরাধ গণ্য করা হয়েছে। অনুচ্ছেদটির দফা নং (৩)-এ সাজার ব্যাপারে বলা হয়েছে, এ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের মধ্যে নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদ অবলোকনে প্রতীয়মান হয় শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করাসহ অসাংবিধানিক পন্থায় এ সংবিধান বা এর কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহ হবে এবং সহায়তাকারী ব্যক্তিও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে অপরাধী হবে।
সংবিধানে নব সন্নিবেশিত ৭ক অনুচ্ছেদে কোন ধরনের কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা বিষয়ে দণ্ডবিধির ১২৪ক ধারায় যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা সংবিধানের অধীনে কৃত রাষ্ট্রদ্রোহিতার ক্ষেত্রে আকৃষ্ট হবে না। তাছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের সাজা নির্ণয়ার্থে দণ্ডবিধির ১২৪ক ধারায় যে সাজার কথা বলা হয়েছে সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ সংঘটিত হলে প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডের বিষয় উল্লেখ থাকায় সে সাজার পরিবর্তে দণ্ডবিধির অধীনে সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
সম্প্রতি ‘অধিকার’ নামক মানবাধিকার সংগঠনের মহাসচিব সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আদিলুর রহমান শুভ্র-এর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে হাইকোর্ট বিভাগের একটি অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ রুল ইস্যুপূর্বক রিমান্ড আদেশটি স্থগিত করত জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা দিয়ে কেন আদেশটি বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলে। অতঃপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য ও শীর্ষ তিন নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু ও চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক রিমান্ড মঞ্জুর করা হলে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ রিমান্ড আদেশ বাতিল করে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা দেন। এর পর দেখা গেল বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্রিগেডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত হান্নাহ শাহের গ্রেফতারের অব্যবহিত পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপনপূর্বক রিমান্ড চাওয়া হলে দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের উপরোক্ত দুটি আদেশ দ্বারা দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছে যে, দুটি মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান শুভ্রকে এবং বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও শিমুল বিশ্বাসকে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে নিপীড়নের আশংকা থেকে মুক্ত হওয়া গেছে। কিন্তু দেশবাসীর প্রশ্ন এ দুটি আদেশ প্রায়শই বিভিন্ন মামলা সংশ্লেষ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের যে নিপীড়নের শিকার হতে হয় তা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার নজির সৃষ্টি করবে কি?
রিমান্ডে নেয়ার পর আসামি নিপীড়নের শিকার হলে রিমান্ড আবেদনকারী পুলিশ কর্মকর্তা অথবা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এর দায় এড়াতে পারেন না। তাছাড়া রিমান্ডের আদেশ প্রদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও আদালতেরও দায়িত্ব রয়েছে। হাইকোর্টে যাওয়া আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই রিমান্ড প্রদানের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ও আদালত উভয়কে দায়িত্বশীলতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক রাজনৈতিক নেতাদের এভাবে ঢালাওভাবে রিমান্ড মঞ্জুর অপ্রত্যাশিত এবং রিমান্ড সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধানের পরিপন্থী। এ বিষয়ে একাধিক বিশিষ্ট আইনজ্ঞের অভিমত, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রের বিচারিক দায়িত্বরত থাকাবস্থায় ঢালাওভাবে এ ধরনের রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনা বিরল ছিল। তাই তাদের প্রশ্ন- বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব বিচারকদের দেয়ার অর্জন কি আইন ও বিধিবিধানের উপেক্ষায় নির্বাহী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় রিমান্ড মঞ্জুর?
পুলিশি রিমান্ডে নেয়ার পর সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের নামে মামলা সংশ্লিষ্ট আসামিরা যে শারীরিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এ বিষয়টি আজ আর কারও অজানা নয়। শারীরিক নিপীড়ন বিষয়ে পুলিশের জনৈক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- রিমান্ডে নিয়ে নিপীড়ন না করে তাদের আদর সোহাগ করলে তথ্য উদ্ঘাটিত হবে না। পুলিশ কর্মকর্তার এ বক্তব্য আইন দ্বারা সমর্থিত নয়। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্য প্রদান ও মানসিকতা পোষণ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে তথ্য উদ্ঘাটনে নিপীড়নকে অবলম্বন হিসেবে ব্যবহারে উৎসাহিত করবে। রিমান্ডে নেয়ার পর তথ্য উদ্ঘাটনের নামে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে যেহেতু সংবিধানসহ দেশের প্রচলিত আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে সেহেতু জেল গেটে জিজ্ঞাসার অনুমতি দেয়া হলে আইনের অপপ্রয়োগ রোধ ও হয়রানির অবসান হবে।
একজন আসামিকে একাদিক্রমে ১৫ দিন অতিক্রান্তের পূর্বক্ষণে পুনঃম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বা আদালতে উপস্থাপনপূর্বক একাধিকবার রিমান্ডে নেয়ার নজির রয়েছে।
মামলার আসামি শিশু বা কিশোর হলে বিচার পদ্ধতি ভিন্নতর হয়। কিশোর অপরাধীকে পুলিশি হেফাজতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো সুযোগ নেই। কিশোর অপরাধীকে সেফ হোম বা কারেকশনাল সেন্টার বা রিফরমেটরি স্কুলে সমাজকল্যাণ বা প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। আইনের বিধানকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করে কিশোর অপরাধীকে রিমান্ডে নেয়া হলে তার অপরাধ প্রশমনের চেয়ে অপরাধপ্রবণ হওয়ার আশংকাই বেড়ে যায়। শিশু ও কিশোররা জাতির ভবিষ্যৎ বিধায় এ বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে আইনানুগ ও যথাবিহিত আচরণ প্রত্যাশিত।
রিমান্ডে নেয়ার পর নিপীড়ন সংবিধান ও আইন উভয়ের লংঘন। কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের লংঘন কাম্য নয়। ফৌজদারি অপরাধ অপরাধীর মৃত্যু ব্যতীত সময় দ্বারা বারিত নয়। রিমান্ডে নিয়ে নিপীড়ন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার অবকাশ আছে। রিমান্ডে নিপীড়নের শিকার অনেকে হয়তো সময় ও সুযোগ প্রতিকূল বিবেচনায় প্রতিকার প্রার্থনায় উদ্যোগী হচ্ছেন না। তবে সময় ও সুযোগ অনুকূল হলে প্রতিকার প্রার্থনায় উদ্যোগী যে হবেন না সে নিশ্চয়তা কেউ কি দিতে পারবে? আর উদ্যোগী হওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধান ও আইন উভয়ই যে নিপীড়িতের পক্ষে সে বিষয়ে আইন প্রয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতাই হতে পারে অপপ্রয়োগের হাত থেকে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার রক্ষাকবচ।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক

No comments

Powered by Blogger.