তবুও দেশে শান্তি আসুক by ফকির ইলিয়াস
প্রতিটি
রাজনৈতিক দলেই কিছু সুবিধাবাদী থাকে। তারা কখনোই গণমানুষের স্বার্থ দেখে
না। তাদের দল ক্ষমতায় গেলে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বাংলাদেশে অবরোধের নামে
যা ঘটছে, এর মূল পরিকল্পকও এরাই। কোনো রাষ্ট্রে যখন রাজনৈতিক গৃহবিবাদ শুরু
হয়, তখন অবৈধ অস্ত্রধারীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারাই এখন সক্রিয়। এই চরম
ক্রান্তিকালের সব কুফল ভোগ করছে দেশের নিুবিত্ত মানুষ। তাদের যাওয়ার জায়গা
নেই। তারা যাবে কোথায়? তাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। তাই বাস-রিকশাই ভরসা। আর
পোড়ানো হচ্ছে মূলত বাস-টেম্পো-রিকশাই। যাদের পোড়ানো হয়েছে, তাদের দেখতে
গিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ওরা যা বলেছে, তা মিডিয়ায় আমরা পড়েছি,
দেখেছি। এ কাজ কোনো মানবতাবাদী মানুষ করতে পারে না। তাহলে যারা করছে, তারা
কার স্বার্থে করছে? আমরা আবারও পড়তে পারি একজন গীতা সরকারের বক্তব্য। তিনি
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের
তৈরি করেননি। আমরা আমাদের স্বামীরটা খাই। আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি
খেলছেন। ... আমরা ভালো সরকার চাই। ... আমরা অসুস্থ সরকার চাই না।’ তিনি
বলেছেন, ‘ওরা যে বোমাগুলো মারে বা যাই মারে, ওদের শনাক্ত করুন এবং যারা
অর্ডার দেয়, তাদের পরিবারের লোককে ধরে ধরে আপনারা আগুনে পুড়িয়ে দেন। ওরা
অর্ডার দিতে পারে, আমাদের তো রক্ষা করতে পারে না। আমাদের জন্য আপনারা
সরকার।’
মানুষ কতটা অসহায় হলে এমন কথা বলতে পারে! এই যে অবরোধ চলছে, এর শেষ কোথায়? ট্রেন চলছে না। বিমানের ফ্লাইট ছেড়ে আসতে পারছে না। কারণ মানুষ ঢাকা আসতে পারছেন না। সবকিছু এখন নষ্টদের দখলে। এই যে ফ্রাংকেনস্টাইন রাজনীতিকরা তৈরি করেছেন, এদের রুখবে কে?
প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার সাহায্য চেয়েছেন। আমরা বিভিন্ন চ্যানেলের টিভি ফুটেজে দেখেছি কারা আগুন লাগিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। এদের শনাক্ত করা গোয়েন্দাদের দায়িত্ব। মিডিয়া কিংবা সাধারণ মানুষ তা পারবে না। এর মাঝে আমরা পড়েছি আরও কিছু অদ্ভুত সংবাদ। কোথায় ককটেল মারা হবে, কোথায় শিবির মিছিল করবে তা নাকি আগেভাগেই জানেন কিছু সাংবাদিক! জানানো হয়, ওই স্থানে যান এখনই ককটেল ফুটবে কিংবা এখনই মিছিল হবে। ক্যামেরা রেডি- মোবাইলে জানাতেই ককটেল বিস্ফোরণ। কিংবা মিছিল।
সাংবাদিকতায় এটি নাকি এখন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। হেফাজতের আন্দোলনের সময় এপিসি দিয়ে গুলির ফুটেজ না পেয়ে পুলিশকে অনুরোধ করলে অযথাই গুলি ফুটানো হতো। ঠিক এমনই একটি ঘটনায় আটক হয়েছেন একটি বেসরকারি টিভির এক সাংবাদিক ও এক ক্যামেরাম্যান। বিরোধী দলের অবরোধ চলাকালে ককটেল হামলার প্ররোচনার অভিযোগে আটক দু’জনকে চারদিনের রিমান্ড দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়ার আদালত। এর আগে সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ককটেল হামলার ছবি সংগ্রহের সময় তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা। কোথায় যাচ্ছে দেশ? এসব সংবাদের শিরোনাম হবেন সাংবাদিকরা? কী জঘন্য ক্রান্তিকাল!
অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের কেউ কেউ নাকি নিজ এলাকায়ই যেতে পারছেন না। এটা কেমন রাজনীতি? নেতা এলাকায়ই যেতে পারবেন না! কী করেছেন অতীতে তারা? কেন তারা গণরোষের শিকার? খবর বেরিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও প্রতিরোধের মুখে যেসব প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না, তাদের মনোনয়ন বাতিলের চিন্তাভাবনা করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা ও মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হলেও এখনও অনেক প্রার্থী ঢাকায় বসে আছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে এলাকায় বিক্ষোভ, ভাংচুর, সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। কোনো কোনো প্রার্থীকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন অর্ধশত প্রার্থীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। মনোনয়ন যারা পেয়েছেন তাদের পক্ষে-বিপক্ষে মারামারি, আনন্দ উল্লাস শুরু হয়েছে রীতিমতো। এটা কেমন গণতান্ত্রিক আচরণ?
আমরা বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে দেখি, নির্বাচনী বোর্ড মনোনয়ন ফাইনাল করার পর ওই প্রার্থীর পক্ষেই সবাইকে খাটতে হয়। অথচ আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজ নিজ দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হওয়ার লাইন দীর্ঘ করছেন। কী বিচিত্র মানসিকতা! কী অভিনব ক্ষমতার খায়েশ!
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক দল যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। জাতিসংঘ এই নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না, কিংবা রাখতে পারবে কি-না- প্রশ্ন আসছে তা নিয়েও। আপাতদৃষ্টিতে বিদেশে বসে আমরা পর্যবেক্ষক হিসেবে যা ধারণা করছি, তার কিছু চুম্বক অংশ পাঠককে শেয়ার করতে চাই। দৃশ্যগুলো (আমার ব্যক্তিগত মতে) এ রকম।
রাজনৈতিক সমঝোতা শেষ পর্যন্ত হবে না। একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দশম জাতীয় সংসদ শপথ নেয়ার পর ওই সংসদের নেপথ্য প্রহরী হিসেবে দেশে জরুরি অবস্থাকালীন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে। সামরিক বাহিনী নির্বাচনের আগেই যদি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস দমন ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে আসে, তাদের মেয়াদকাল কিছুটা দীর্ঘই হতে পারে। এই ক্রান্তিকালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কোনো সুযোগ-সুবিধা কাটডাউন করে কি-না তা দেখার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
এ অবস্থার মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ যদি দুই থেকে তিন বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে, তাহলে ওই সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন হবে, তা এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তারপরও বলি, আমার এ ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হোক। রাজনৈতিক সমঝোতা হোক। অবরোধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাক বাংলাদেশ। এটা বিজয়ের মাস। এ মাসে বাঙালি জাতি বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আমরা কি প্রজন্মের জন্য এ বিজয়কে চিরস্থায়ী শান্তিতে পরিণত করে যেতে পারব না? আমরা কি পারব না মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হতে?
না, ঐক্যের নামে আলবদর-রাজাকার শক্তির আস্ফালনকে মেনে নেয়া যায় না। যারা এদেশের শিল্প-সংস্কৃতি-জাতীয় সঙ্গীত-জাতীয় স্মৃতিসৌধকে সম্মান করে না, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে না। বিজয়ের মাসে আমাদের অগ্রসরমান প্রজন্মের মননে এই চেতনা জাগ্রত হোক।
ফকির ইলিয়াস : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক
মানুষ কতটা অসহায় হলে এমন কথা বলতে পারে! এই যে অবরোধ চলছে, এর শেষ কোথায়? ট্রেন চলছে না। বিমানের ফ্লাইট ছেড়ে আসতে পারছে না। কারণ মানুষ ঢাকা আসতে পারছেন না। সবকিছু এখন নষ্টদের দখলে। এই যে ফ্রাংকেনস্টাইন রাজনীতিকরা তৈরি করেছেন, এদের রুখবে কে?
প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার সাহায্য চেয়েছেন। আমরা বিভিন্ন চ্যানেলের টিভি ফুটেজে দেখেছি কারা আগুন লাগিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। এদের শনাক্ত করা গোয়েন্দাদের দায়িত্ব। মিডিয়া কিংবা সাধারণ মানুষ তা পারবে না। এর মাঝে আমরা পড়েছি আরও কিছু অদ্ভুত সংবাদ। কোথায় ককটেল মারা হবে, কোথায় শিবির মিছিল করবে তা নাকি আগেভাগেই জানেন কিছু সাংবাদিক! জানানো হয়, ওই স্থানে যান এখনই ককটেল ফুটবে কিংবা এখনই মিছিল হবে। ক্যামেরা রেডি- মোবাইলে জানাতেই ককটেল বিস্ফোরণ। কিংবা মিছিল।
সাংবাদিকতায় এটি নাকি এখন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। হেফাজতের আন্দোলনের সময় এপিসি দিয়ে গুলির ফুটেজ না পেয়ে পুলিশকে অনুরোধ করলে অযথাই গুলি ফুটানো হতো। ঠিক এমনই একটি ঘটনায় আটক হয়েছেন একটি বেসরকারি টিভির এক সাংবাদিক ও এক ক্যামেরাম্যান। বিরোধী দলের অবরোধ চলাকালে ককটেল হামলার প্ররোচনার অভিযোগে আটক দু’জনকে চারদিনের রিমান্ড দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়ার আদালত। এর আগে সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ককটেল হামলার ছবি সংগ্রহের সময় তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা। কোথায় যাচ্ছে দেশ? এসব সংবাদের শিরোনাম হবেন সাংবাদিকরা? কী জঘন্য ক্রান্তিকাল!
অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের কেউ কেউ নাকি নিজ এলাকায়ই যেতে পারছেন না। এটা কেমন রাজনীতি? নেতা এলাকায়ই যেতে পারবেন না! কী করেছেন অতীতে তারা? কেন তারা গণরোষের শিকার? খবর বেরিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও প্রতিরোধের মুখে যেসব প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না, তাদের মনোনয়ন বাতিলের চিন্তাভাবনা করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা ও মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হলেও এখনও অনেক প্রার্থী ঢাকায় বসে আছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে এলাকায় বিক্ষোভ, ভাংচুর, সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। কোনো কোনো প্রার্থীকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন অর্ধশত প্রার্থীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। মনোনয়ন যারা পেয়েছেন তাদের পক্ষে-বিপক্ষে মারামারি, আনন্দ উল্লাস শুরু হয়েছে রীতিমতো। এটা কেমন গণতান্ত্রিক আচরণ?
আমরা বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে দেখি, নির্বাচনী বোর্ড মনোনয়ন ফাইনাল করার পর ওই প্রার্থীর পক্ষেই সবাইকে খাটতে হয়। অথচ আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজ নিজ দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হওয়ার লাইন দীর্ঘ করছেন। কী বিচিত্র মানসিকতা! কী অভিনব ক্ষমতার খায়েশ!
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক দল যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। জাতিসংঘ এই নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না, কিংবা রাখতে পারবে কি-না- প্রশ্ন আসছে তা নিয়েও। আপাতদৃষ্টিতে বিদেশে বসে আমরা পর্যবেক্ষক হিসেবে যা ধারণা করছি, তার কিছু চুম্বক অংশ পাঠককে শেয়ার করতে চাই। দৃশ্যগুলো (আমার ব্যক্তিগত মতে) এ রকম।
রাজনৈতিক সমঝোতা শেষ পর্যন্ত হবে না। একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দশম জাতীয় সংসদ শপথ নেয়ার পর ওই সংসদের নেপথ্য প্রহরী হিসেবে দেশে জরুরি অবস্থাকালীন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে। সামরিক বাহিনী নির্বাচনের আগেই যদি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস দমন ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে আসে, তাদের মেয়াদকাল কিছুটা দীর্ঘই হতে পারে। এই ক্রান্তিকালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কোনো সুযোগ-সুবিধা কাটডাউন করে কি-না তা দেখার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
এ অবস্থার মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ যদি দুই থেকে তিন বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে, তাহলে ওই সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন হবে, তা এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তারপরও বলি, আমার এ ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হোক। রাজনৈতিক সমঝোতা হোক। অবরোধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাক বাংলাদেশ। এটা বিজয়ের মাস। এ মাসে বাঙালি জাতি বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আমরা কি প্রজন্মের জন্য এ বিজয়কে চিরস্থায়ী শান্তিতে পরিণত করে যেতে পারব না? আমরা কি পারব না মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হতে?
না, ঐক্যের নামে আলবদর-রাজাকার শক্তির আস্ফালনকে মেনে নেয়া যায় না। যারা এদেশের শিল্প-সংস্কৃতি-জাতীয় সঙ্গীত-জাতীয় স্মৃতিসৌধকে সম্মান করে না, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে না। বিজয়ের মাসে আমাদের অগ্রসরমান প্রজন্মের মননে এই চেতনা জাগ্রত হোক।
ফকির ইলিয়াস : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক
No comments