থাইল্যান্ডে গণঅভ্যুত্থান

থাইল্যান্ডে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন এখন নতুন মাত্রা নিয়েছে। বিক্ষোভের ৮ম দিনে সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছে দেশটির হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। সরকারি ভবনগুলোতে ঢুকে পড়ে সরকারবিরোধী নাশকতা শুরু করেছে বিক্ষোভকারীরা। এদিকে এতদিন অবরোধ করে রাখা রাজধানী ব্যাংককে এবার সমবেত হয়েছে সরকারদলীয় সমর্থকরাও। ফলে, সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত দু’জন নিহত ও ৪৫ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার বিক্ষোভের একপর্যায়ে ৩০ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ঢুকে পড়লে সেখানে অবস্থানরত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা শেষ পর্যন্ত পুলিশ সদর দফতর থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এদিন সরকারি একটি গণমাধ্যমও নিজেদের দখলে আনে বিরোধীরা। অন্যদিকে, শনিবার রাজধানীতে অন্তত ৭০ হাজার সরকারি দলের সমর্থক জড়ো হন।
সরকারি দল সমর্থকদের গায়ে লাল শার্ট, বিরোধীদের গায়ে হলুদ, দুয়ে মিলে ব্যাংকক এখন হলুদ আর লালের শহর। সরকারের ইরাওয়ান ইমার্জেন্সি সেন্টার এ খবর দিয়েছে। ইংলাক সিনাওয়াত্রা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ৭ম দিনে রাজধানীর রাজামঙ্গলা স্টেডিয়ামে সরকারবিরোধী ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দু’জনের মৃত্যু হয়। একজন রামখমহেয়িং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নিহত অপর জনের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শহরের একটি জরুরি বিভাগের কর্মকর্তারা রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন। শহরের একটি স্টেডিয়াম এলাকায় সরকারবিরোধী ও সরকার সমর্থকরা বিক্ষোভ র‌্যালি বের করে। এ সময় সংঘর্ষে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরপরই পরবর্তী বড় সহিংসতা এড়াতে রেড শার্ট গ্র“প তাদের র‌্যালির সমাপ্তি ঘোষণা করে। এদিকে, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ দমাতে দাঙ্গা পুলিশকে সহযোগিতা করতে রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। বিরোধীদের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবরোধের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী নামানো হয়। তবে, দেশটির সেনা কর্মকর্তারা বিক্ষোভ দমাতে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে অনিচ্ছুক। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দাঙ্গা পুলিশকে সহযোগিতা করতে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তে তারা সম্মত হয়েছে। সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর কোনো অস্ত্র প্রয়োগ করবে না বলে জানা গেছে। সেনা সদর দফতর মুখপাত্র লে. জেনারেল প্যারাডন পাট্টানাথাবুট বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতার আক্রোশ থেকে সরকারি দফতরগুলো রক্ষার্থেই কেবল রাজধানীতেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে থাকসিনের দল ক্ষমতায় আসে এবং ইংলাক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। গত মাসে ইংলাক থাকসিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন এবং থাকসিনকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও দায়মুক্তি দেয়ার পদক্ষেপ নেন। তার এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশটির বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করে। তবে বিক্ষোভের সূত্রপাত হলে বিলটি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখেন ইংলাক। কিন্তু তারপরও গত রোববার থেকে তার পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামে বিরোধীরা। পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোটেও জয়ী হন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা।
ধর্মঘটের আহ্বান : থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই সোমবার (আজ) থেকে দেশজুড়ে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেতা সুথেপ থাংসুবান। থাইল্যান্ডের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী থাংসুবানের বক্তব্যটি দেশের প্রায় সবক’টি সম্প্রচার মাধ্যমেই দেখানো হয়েছে। সরকারকে অচল করে দিতে থাংসুবান সরকারি ও ব্যক্তিগত সব প্রতিষ্ঠানেই কাজ বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছন। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা রোববারকে ‘ভি-ডে’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা এটাকে মনে করছে গণঅভ্যুত্থান। বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.