প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংরক্ষণ করুন by ডা. মোঃ শহীদুর রহমান
পৃথিবীর
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস
পালন করে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সেই ১৯৯৮ সাল থেকে গুরুত্ব সহকারে
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে তা পালন করছে। বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ, যা
বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ, কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী এবং তাদের
বেশিরভাগই উন্নয়নশীল বিশ্বের। বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী লোকেরা প্রতিনিয়তই
শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে অবজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা
তাদের সমাজের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা করে রাখে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চাকরি
এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে তারা ভীষণভাবে বৈষম্যের শিকার। তাই
উন্নয়নের মূল স্রোতে তারা প্রায়ই অনুপস্থিত।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শতাব্দী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংরক্ষণ এবং সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবন্ধীদের বিশ্ব জনস্বাস্থ্য এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকার ইস্যু বলে মনে করে। কারণ স্বাভাবিক শিক্ষা, চাকরি, আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং চিকিৎসা খরচের কারণে প্রতিবন্ধীদের দরিদ্রতা বাড়িয়ে দেয়।
শত কোটি প্রতিবন্ধীর মধ্যে প্রায় দু’শ কোটি বয়স্ক প্রতিবন্ধী কর্মক্ষম নয়, যাদের অধিকাংশের জীবনমান অমানবিক। তারা উন্নয়নের প্রতিবন্ধক এবং সমাজের বোঝা। প্রতিবন্ধিত্ব আনুপাতিক হারে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন মহিলা, বৃদ্ধ ও দরিদ্রদের বেশি মাত্রায় ভোগায়। দরিদ্র ঘরের শিশু, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুরা বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বেশি আয়ের দেশ থেকে স্বল্প আয়ের দেশের লোকেরা বেশি প্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়ে থাকে। জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট প্রস্তাবাকারে গ্রহণ করা হয় এবং সেই অনুসারে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কথা বলা হয়। ওই কর্মপরিকল্পনার স্লোগান হল ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য উন্নততর স্বাস্থ্য’।
বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান উন্নয়নের চিত্র খুব একটা সুখকর নয়। সরকারি পরিকল্পনা চমৎকার হলেও বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিল নেই। সমাজভিত্তিক পুনর্বাসনের ধারণাটা ব্যাপ্তি লাভ করেনি। দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের একটা বিরাট অংশ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন কাটায়। এদেশে এখনও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধীরা প্রাধিকারপ্রাপ্ত নয়। সমাজ এখনও তাদের অবজ্ঞা ও করুণার চোখে দেখে। সমাজকে সচেতন করার জন্য, সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ভাঙ্গো বাধা খোল দ্বার, সমাজে সবার জন্য সবকিছু’। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবন্ধীদের আলাদা ও অগ্রাধিকারমূলক সেবা নেয়ার ব্যবস্থা নেই। বিপণি বিতানে হুইল চেয়ারের জন্য র্যাম্প নেই, গণপরিবহনে আলাদা সিট নেই। পাবলিক টয়লেটে আলাদা ব্যবস্থা নেই। টিকিট কেনায় আলাদা লাইন নেই। সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায়ে বাধ্যতামূলকভাবে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবন্ধীদের প্রাধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের আরও এগোতে হবে। গণমাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ডা. মোঃ শহীদুর রহমান : সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শতাব্দী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংরক্ষণ এবং সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবন্ধীদের বিশ্ব জনস্বাস্থ্য এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকার ইস্যু বলে মনে করে। কারণ স্বাভাবিক শিক্ষা, চাকরি, আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং চিকিৎসা খরচের কারণে প্রতিবন্ধীদের দরিদ্রতা বাড়িয়ে দেয়।
শত কোটি প্রতিবন্ধীর মধ্যে প্রায় দু’শ কোটি বয়স্ক প্রতিবন্ধী কর্মক্ষম নয়, যাদের অধিকাংশের জীবনমান অমানবিক। তারা উন্নয়নের প্রতিবন্ধক এবং সমাজের বোঝা। প্রতিবন্ধিত্ব আনুপাতিক হারে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন মহিলা, বৃদ্ধ ও দরিদ্রদের বেশি মাত্রায় ভোগায়। দরিদ্র ঘরের শিশু, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুরা বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বেশি আয়ের দেশ থেকে স্বল্প আয়ের দেশের লোকেরা বেশি প্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়ে থাকে। জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট প্রস্তাবাকারে গ্রহণ করা হয় এবং সেই অনুসারে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কথা বলা হয়। ওই কর্মপরিকল্পনার স্লোগান হল ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য উন্নততর স্বাস্থ্য’।
বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান উন্নয়নের চিত্র খুব একটা সুখকর নয়। সরকারি পরিকল্পনা চমৎকার হলেও বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিল নেই। সমাজভিত্তিক পুনর্বাসনের ধারণাটা ব্যাপ্তি লাভ করেনি। দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের একটা বিরাট অংশ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন কাটায়। এদেশে এখনও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধীরা প্রাধিকারপ্রাপ্ত নয়। সমাজ এখনও তাদের অবজ্ঞা ও করুণার চোখে দেখে। সমাজকে সচেতন করার জন্য, সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ভাঙ্গো বাধা খোল দ্বার, সমাজে সবার জন্য সবকিছু’। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবন্ধীদের আলাদা ও অগ্রাধিকারমূলক সেবা নেয়ার ব্যবস্থা নেই। বিপণি বিতানে হুইল চেয়ারের জন্য র্যাম্প নেই, গণপরিবহনে আলাদা সিট নেই। পাবলিক টয়লেটে আলাদা ব্যবস্থা নেই। টিকিট কেনায় আলাদা লাইন নেই। সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায়ে বাধ্যতামূলকভাবে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবন্ধীদের প্রাধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের আরও এগোতে হবে। গণমাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ডা. মোঃ শহীদুর রহমান : সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
No comments