প্রতিবন্ধী রুমকির এগিয়ে চলা
লিখতে কষ্ট হচ্ছে? জবাবে বলে, ‘না’। ভবিষ্যতে কী হতে চাও? ‘লেখাপড়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে ভালো শিক্ষক হতে চাই। সংসারের অভাবও ঘোচাতে চাই।’
এভাবেই দৃঢ়তার সঙ্গে প্রশ্নের জবাব দিয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী রুমকি খানম। মেয়েটি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
রুমকি ঈশানগাতী রেজিস্ট্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাড়ি কাশিপুর ইউনিয়নের ঈশানগাতী গ্রামে। গত শুক্রবার ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দুটি বেঞ্চ একত্র করে তার ওপর বসে মনোযোগ দিয়ে লিখছে রুমকি। কোনো হাত-পায়েই পুরো বল পায় না সে। তাই বাঁ হাত ও পায়ের সাহায্যে কলম ধরে লিখছে। ডান পায়ের ওপর খাতা ও প্রশ্ন। এক লাইন লেখা হলে বাঁ পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খাতা ওপরে তুলে নিচের লাইন লিখছে।
পরীক্ষাকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (হল সুপার) হোসনে আরা পারভীন বলেন, এ অবস্থাতেও তার লেখার গতি স্বাভাবিক। পরীক্ষায় প্রতিবন্ধীরা ২০ মিনিট অতিরিক্ত সময় পায়। তবে সে গণিত পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময় নেয়নি। অন্য বিষয়েও অতিরিক্ত সময়ের পুরোটি লাগেনি। তার লেখাও খুব সুন্দর।
ঈশানগাতী রেজিস্ট্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রমজান আলী বলেন, রুমকি খুব মেধাবী ও আত্মবিশ্বাসী। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক ক্লাসেই সে প্রথম হয়েছে। সুন্দর ছবি আঁকতে পারে সে। তার বাবা আবদুর রউফ মোল্লা এ বিদ্যালয়েরই সহকারী শিক্ষক।
রুমকির মা আবেদা সুলতানা বলেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে রুমকি মেজো। জন্মগতভাবেই সে প্রতিবন্ধী। তবে লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী। নিজের প্রচেষ্টায় লেখা শিখেছে। সব সময় লেখাপড়ার মধ্যে থাকতে চায় সে। পাঠ্যবই ছাড়াও অন্য বইও নিয়মিত পড়ে। বাম হাত দিয়ে নিজেই খায়। তবে কাপড় পরা ও গোসল করাসহ অন্য সব কাজে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থের অভাবে রুমকির চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। আমাদের কোনো জমিজমা নেই। অন্য কোনো আয় নেই। ওর বাবার সামান্য বেতনে কোনো রকমে চলে পাঁচ সদস্যের সংসার।’
No comments