পুলিশ জলদস্যুর মতো কার্যালয়ে প্রবেশ করেছে: বিএনপি
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার ও কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘জঘন্যতম’ বলে বর্ণনা করেছে দলটি। বিএনপির ভাষায়, পুলিশ জলদস্যুদের মতো দলের কার্যালয়ে প্রবেশ করেছে।
দলের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র, যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ আজ শনিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ওই ঘটনার নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে দলের কার্যালয়ে পুলিশির অভিযানের একটি বর্ণনাও দেওয়া হয়।
অন্যান্য অবরোধের দিনের মতো সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্থিতি তুলে ধরা না হলেও সন্ধ্যায় এই বিবৃতিতে অবরোধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। দলের সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফের সই করা ওই বিবৃতিতে সালাহউদ্দিনকে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
আজ সকালে সালাউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও দুপুরের পর থেকে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তাঁকে যেতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে পুলিশ সালাউদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালায়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অবৈধ সরকারের’ মন্ত্রীরা আলোচনার নামে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে। আলোচনার আগে সব নেতা-কর্মীর মুক্তি দিয়ে, মামলা প্রত্যাহার করে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনো গোপন সংগঠন করি না। তলে তলে নয়, আলোচনা যদি হয়, তা প্রকাশ্যে হতে হবে। অবশ্যই আলোচনার পূর্বে নির্দলীয় সরকারের দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিতে হবে।’
বিএনপির বর্ণনায় পুলিশের অভিযান
বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ উল্লেখ করেন, ‘গত রাতে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাদাপোশাকধারী ডিবি পুলিশ ডাকাতি কায়দায় গভীর রাত্রে সাড়ে তিনটার দিকে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় জলদস্যুদের ন্যায় কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা গ্রিল কেটে দরজা ভেঙে দুজন সাংবাদিককে এক কক্ষে বেঁধে ফেলে, তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের লাঞ্ছিত করে। তারা প্রথমে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং কক্ষের সব আসবাব তছনছ করে। এরপর তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং সব আসবাব তছনছ করে। সবশেষে তারা বিএনপির (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কক্ষে ঢুকে কম্পিউটার, টেলিফোন লাইন, টেলিভিশনসহ কক্ষের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আসবাব ভেঙেচুরে তছনছ করে এবং ঘুমিয়ে থাকা রিজভী আহমেদকে তাঁর কক্ষের কাচের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাঁর চোখ বেঁধে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে উঠিয়ে নিয়ে যায়।’
অবরোধের প্রথম দিনে আজ শনিবার সারা দেশে একজন নিহত, ২৬৮ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এবং ৩৩৭ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণ-আন্দোলনে তীব্রতা দেখে সরকার অতিমাত্রায় ভীত হয়ে দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, হত্যা-গ্রেপ্তারের চালিয়ে শেষ রক্ষা পেতে চায়।
বিএনপির বক্তব্য তুলে ধরার কেউ নেই!
দপ্তরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তারের পর থেকে কার্যত দল ও জোটের বক্তব্য তুলে ধরার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
হরতাল-অবরোধ চলাকালে প্রতিদিন বিকাল চারটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দিনের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। কিন্তু আজ শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিনে দল বা বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের কোনো সংবাদ সম্মেলন হয়নি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দায়িত্বশীল কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি। দলের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাই আছেন আত্মগোপনে। তবে সন্ধ্যায় বিবৃতির মাধ্যমে দলের বক্তব্য গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
আজ ভোরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কথা বলেন। কিন্তু দুপুরের পর তাঁকেও আর পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুলিশ তাঁর খোঁজে তাঁর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায় তল্লাশি চালিয়েছে। দলের মুখপাত্র ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আত্মগোপনে আছেন। তাঁর ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফোন করে দলের স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ সদস্যের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ৮ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যসহ পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তারের পরও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় বেশির ভাগ নেতা আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। তবে সে সময় হরতালের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে দলের বক্তব্য তুলে ধরতেন রিজভী। তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আর কোনো নেতাকে যেতে দেখা যায়নি। সকাল থেকে কার্যালয়ে ছিলেন কর্মচারীরা। এর মধ্যে দুপুরে বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল বিএনপির কার্যালয় পরিদর্শন করে।
বিকেলে ঢাকা মহানগর বিএনপি এক ই-মেইল বার্তায় ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে অবরোধের সমর্থনে মিছিল এবং নেতা-কর্মীদের আটক করার খবর জানিয়েছে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্যসচিব এম এ সালাম ওই বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নির্যাতন ও নিপীড়নের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তাঁরা নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
No comments