জাতীয় পরিবেশ অলিম্পিয়াড ২০১৩ পরিবেশ রক্ষার ব্রত by মারুফা ইসহাক

কথায় বলে, বেশি খেতে করে আশ, তার নাম হলো সর্বনাশ। এই অতিভোজনে সর্বনাশ কেবল একার নয়, আশপাশের পরিবেশের জন্যও তা অনেকটাই সর্বনাশের কারণ।
আর এই বিষয়টির ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যই এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ভেবেচিন্তে খাই, অপচয় কমাই, পরিবেশ বাঁচাই’। পরিবেশ দিবসের এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এ বছর ৩১ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত আয়োজন করে ‘জাতীয় পরিবেশ অলিম্পিয়াড ২০১৩’। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন। এই আয়োজনের মধ্যে ছিল অলিম্পিয়াড পরীক্ষা, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রতিযোগিতা ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা। এই অনুষ্ঠানটির সমন্বয়কারী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের পরিবেশ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ইজাজুল হক বলেন, ‘আমাদের বিভাগের পড়াশোনা হলো পরিবেশ নিয়ে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিবেশ অনেক বেশি হুমকির সম্মুখীন। যে প্রজন্ম ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে, তাদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা একটা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই পরিবেশ ক্লাব এ ধরনের একটি আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও বেশি খাদ্য ও পরিবেশ সচেতন এবং পরিবেশ ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের তরুণদের যদি একটা সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম থাকত, তবে পরিবেশবিষয়ক কাজগুলো আরও সুসংগঠিতভাবে করা সম্ভব হতো।’
অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারী ওসমান বিন আতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ফেনী থেকে ঢাকায় এসেছেন। নতুন কিছু জানার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ। তিনি বিশ্বাস করেন, কেবল জানলেই হবে না, এই জানাটাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বুয়েটের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে প্রথম হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোকে শুধু উপস্থাপন করলেই হবে না, বাস্তবিক অর্থে এর প্রয়োগ করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।’ পুরো আয়োজনের মধ্যে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিহাব রোনো। তাঁর ছবিটি ছিল পদ্মাপাড়ের ছবি। তিনি মূলত এই ছবির মাধ্যমে পদ্মাপাড়ের মানুষগুলোর জীবনযাত্রা, তাঁদের খাদ্যসংকট—এসব কিছুই দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং অনুষ্ঠানের আহবায়ক তৌহিদা রশিদ বলেন, ‘সুস্থ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য একটা সুস্থ পরিবেশ দরকার। সমাজের নানা অসামঞ্জস্যতা কখনো একা বদলানো সম্ভব নয়। প্রত্যেকেরই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে হবে ও পালন করতে হবে। পৃথিবীতে প্রতি সাতজনের একজন এখনো না খেয়ে রাতে ঘুমুতে যায়। যদিও কয়েক বিলিয়ন টন খাবারের অপচয় হচ্ছে প্রতিবছর। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আরেকজন অভুক্ত মানুষকে সাহায্য করা এবং খাবারের অপচয় যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

No comments

Powered by Blogger.