নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ-ভোটারদের রায়ের প্রতি সম্মান দেখান

রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পালা শেষ। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। কে হবেন পরবর্তী নগরপিতা, ভোটাররা সে ব্যাপারে তাঁদের রায় দিয়েছেন।
দু-একটি জায়গায় অনাহূত পরিবেশ সৃষ্টির যেসব অপচেষ্টা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেগুলো রুখে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের সচেতনতাও ছিল আশানুরূপ। এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। কোথাও কোথাও তা মোট ভোটারের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে এবার নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অন্য যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় বেশি। অবশ্যই এটি একটি শুভ লক্ষণ। যদিও কিছু প্রার্থী এবং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কিছু অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে, তবু নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন সুষ্ঠুই হয়েছে।
বিজ্ঞজনরা বলেন, যারা পরাজয়কে মানতে পারে না, তাদের খেলায় নামা উচিত নয়। কারণ খেলায় বা প্রতিযোগিতায় সবাই জয়ের আশায় অংশ নেবে, কিন্তু সবাই জয়ী হবে না। নির্বাচনও এক ধরনের প্রতিযোগিতা। কিন্তু আমাদের দেশে কী স্থানীয়, কী জাতীয় নির্বাচন- কোথাও পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় না। কারচুপি-অনিয়মের অভিযোগ যেমন থাকে, তেমনি বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার বাজে নজিরও দেখা যায়। সেই বিবেচনা থেকেও এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনেকটাই ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পদ্ধতিরও অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম তেমনি একটি পদ্ধতি। উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে এর আগে কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে আংশিকভাবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হয়েছে। এবারও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে আংশিকভাবে ভোট নেওয়া হয়েছে। যাঁরা এই পদ্ধতিতে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আমরা আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনেও এই পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে অনুষ্ঠিত হলো চারটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নির্বাচনের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। আনুষ্ঠানিকভাবে অরাজনৈতিক হলেও বাস্তবে এই নির্বাচনে রাজনীতির যথেষ্ট ছোঁয়া ছিল। প্রার্থীদের প্রতি দল বা জোটের প্রকাশ্য সমর্থন যেমন ছিল, তেমনি নির্বাচনী প্রচারণায়ও দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার ঘোষণাও রয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে। আবার বর্তমানে রাজনীতিতে যে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, সিটি নির্বাচনেও তার প্রকাশ দেখা গেছে। এই লেখার সময় ভোট গণনা চলছিল। আমরা আশা করি, ফলাফল যাই হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই তা মেনে নেবে এবং ভোটারদের রায়ের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখাবে।

No comments

Powered by Blogger.