বাজিমাত! রাজপথের রাজনীতিতে বিপর্যস্ত এক পক্ষ বাজিমাত করেছে...

এ এক অভাবনীয় বিজয়। রাজপথের রাজনীতিতে বিপর্যস্ত এক পক্ষ বাজিমাত করেছে ব্যালটের শক্তি পরীক্ষায়। সেই সঙ্গে বুলেটের চেয়ে ব্যালট যে অনেক শক্তিশালী তা আরও একবার প্রমাণ করে ক্ষমতাসীনদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এই ক্ষমতাহীন পক্ষ। সামনে জাতীয় নির্বাচন। রাষ্ট্রশক্তির লড়াই।
এ চ্যালেঞ্জ সেই শক্তি পরীক্ষার দিকেই। গতকাল তাই কেবল সাধারণ নির্বাচনের দিন ছিল না। ভোট প্রদান ও গণনার দিন ছিল না। দিনটি ছিল জাতীয় রাজনীতিতে পালাবদলের ইঙ্গিতবাহী পটপরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ঘোষণার এক ঐতিহাসিক দিন। ব্যালটের বিজয়ে ঘটেছে উপেক্ষিত দেশবাসীর আশা-আকাঙক্ষার প্রতিফলন। নিপীড়িত ও লাঞ্ছিত জনগণের প্রতিশোধ। সেই সঙ্গে এক নিঃশব্দ জাগরণ। জনউত্থানের স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান। এক নীরব ভোট বিপ্লবে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই জয়ের বন্দরে পৌঁছেছে বিএনপি তথা ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীরা। পরাজয়ের ঠিকানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলের প্রার্থীরা। এ যেন ভোটের রাজনীতিতে নকআউট হলো ক্ষমতাসীনরা। বাজিমাত করলো বিপর্যস্ত শক্তি। নামে নির্দলীয় হলেও সিটি নির্বাচন বস্তুত পরিণত হয়েছিল জাতীয় নির্বাচনের মহড়ায়। সারা দেশের মানুষ নজর রাখছিলেন সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল আর খুলনার এ নির্বাচনের দিকে। দৃশ্যত নির্বাচন ছিল শান্ত। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। কিছু কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে কোথাও কোথাও। উত্তেজনা ছিল বরিশালে। সেখানে ক্ষমতাসীন সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের সমর্থকরা দিনভর চেষ্টা করেছে কেন্দ্র দখলের। সে তুলনায় বাকি তিন সিটিতে অভিযোগ ছিল না বললেই চলে। অবশ্য খুলনায় পুলিশের ধাওয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন একজন। আপাত চার সিটি নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের এ বিজয় সামনের দিনগুলোর রাজনীতিকে আরও কঠিন করে তুলবে। ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনের হিম্মত এখন ত্যাগ করবেন কেউ কেউ। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ কথা বলে জনতাই। এ নির্বাচন সেই শেষ কথা বলারই এক স্পর্ধিত চ্যালেঞ্জ।
আরিফ, মনি, বুলবুল, কামাল চার সিটির নগরপিতা
নির্বাচনী লড়াইয়ে খসে পড়লেন চার নক্ষত্র। চার সিটি করপোরেশনের মধ্যে সিলেটে বিদায়ী মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। তাকে কামরান অভিনন্দন জানিয়েছেন। খুলনার নগরপিতা হয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি হারিয়েছেন সদ্য বিদায়ী মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে। বরিশালের বিদায়ী মেয়র শওকত হোসেন হিরণকে হারিয়ে নগরপিতার আসনটি দখলে নিয়েছেন বিএনপি নেতা আহসান হাবীব কামাল। খুলনার বিদায়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে বড় ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মনিরুজ্জামান মনি। চার সিটিতেই বড় ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীরা ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন। চার প্রার্থীর মধ্যে সিলেটে পরাজিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান রাতেই নবনির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাজশাহীতে পরাজিত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফল ঘোষণার পর খুলনা ও রাজশাহীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে রাতে বিজয়ী প্রার্থীরা শোডাউন না করলেও সমর্থকরা রাস্তায় আনন্দ-উল্লাস করেন। এক সঙ্গে চার সিটিতে চার নক্ষত্রের পরাজয় রাজনীতিতেও এক নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে। ভোটের হিসাব আর বিরোধী জোটের প্রার্থীদের বিপুল বিজয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গতকাল রাতেই  বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বিজয় ছিল অনিবার্য। তারা জানিয়েছেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই রায়ের মধ্য দিয়ে। এদিকে রাজশাহীতে ভোটে পিছিয়ে থাকা মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন মিডিয়া ক্যু’র অভিযোগ তুলে প্রকাশিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় রাত দুইটায় চার প্রার্থীকেই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রির্টানিং অফিসাররা।  বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে সিলেটের ১২৮টি কেন্দ্রে আরিফুল হক চৌধুরী ১০৭৩৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান পেয়েছেন ৭২১৭৩ ভোট। এছাড়া অপর প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিমন পেয়েছেন ১০২২ ভোট।  রাজশাহীর ১৩৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৬টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অন্য একটি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতির ভোটে কারিগরি ত্রুটি থাকায় তা স্থগিত রাখা হয়। নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ নিয়ে এ কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। প্রাপ্ত ফলে বুলবুল পেয়েছেন ১৩১৭৬৯ ভোট। আর খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ৮৩৩৮৯ ভোট।
খুলনায় ২৮৮টি কেন্দ্রের ভোটে প্রায় ৬১ হাজার ভোটের বড় ব্যবধানে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে হারান ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি। মনি ১৮০০৯৩ ভোট পেয়েছেন। আর খালেক পেয়েছেন ১১৯৪২২ ভোট।
বরিশালে আহসান হাবীব কামাল ৮৩৭৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। শওকত হোসেন হিরণ পেয়েছেন ৬৬৭৪১ ভোট। রাতে ফল ঘোষণাকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসগুলোতে উত্তেজনা থাকলেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে রাতে প্রার্থীদের বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।  এদিকে রাতে ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে খুলনায় সংঘর্ষ ঘটে।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আনিসুর রহমান বিশ্বাসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে পরাজিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাসান ইফতেখার চালুর সমর্থকরা কেন্দ্র লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং র‌্যাব ও ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স প্রধান নির্বাচনী কেন্দ্রে নিয়ে যান।
সিলেটে কামরান-আরিফের পাল্টাপাল্টি
সিলেট থেকে মিজানুর রহমান ও ওয়েস খছরু: সিলেটে মেয়রপ্রার্থী আরিফের মুখে ছিল আশঙ্কার কথা। আর কামরানের মুখে ছিল উৎসবের নির্বাচন। আর এ পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের ১২৮ কেন্দ্রে। তবে, ভোট দিতে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানালেন, তাদের বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা রাবিশ এবং বোগাস। এ অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। সিলেটের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতকাল মূল ফোকাস ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার অবস্থান ও গতিবিধির দিকে লক্ষ্য ছিল সকলের। দুপুর তখন সাড়ে ১১টা। সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টের পাশের দুর্গাকুমার পাঠশালা। এ পাঠশালার নতুন নাম দুর্গাকুমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। হঠাৎ কেন্দ্রে ভিড় লেগে গেল। নেতাকর্মীদের ভিড় শুরু হলো। কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান এলেন গাড়ি নিয়ে। আরও কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার আশপাশের কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সময় নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্স থেকে রিকশা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছলেন অর্থমন্ত্রী। মূহূর্তে ভিড় বেড়ে গেল। চলে এলেন নেতাকর্মীরা। তাদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী দুর্গাকুমার পাঠশালার দোতলায় ভোট দিলেন। বেরিয়ে এসে হন সাংবাদিকদের মুখোমুখি। এ নির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন- প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, নানা কারণে এ ভোট গুরুত্বপূর্ণ। সামনেই জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে নির্বাচন কমিশন আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এতে স্থানীয়ভাবে গণতন্ত্র সুসংহত হবে। বিএনপির নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি ভোট দিতে এসেছেন। গতকাল থেকে একবার পর্যন্ত মেয়রপ্রার্থী কামরান সঙ্গে দেখা করেননি। নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের আশঙ্কায় সেটি করেননি। তিনি জানান, আমি সব সময় একটি কথা বলি, আর তা হলো রাবিশ ও বোগাস। এবারও তাই বলবো। যে অভিযোগ করা হয়েছে তা হলো রাবিশ অ্যান্ড বোগাস। এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। আর সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। সে নিয়ে আমি কিছু বলবো না। এ কথা বলেই অর্থমন্ত্রী বাসার পথে পা বাড়ান। বলেন, আজই ঢাকা চলে যাচ্ছি। ভোট দিতে এসেছিলাম। ভোট দিলাম। এবার চলো যাবো। আর এ নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়েছে। তার নির্বাচনও এত সুষ্ঠু হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে নিয়ে এসে ভোট দিলেন কামরান: সকাল ৯টা পেরিয়েছে একটু আগে। সিলেটের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ পাইলট স্কুল ভোট কেন্দ্র। লোকারণ্য পুরো মাঠ। বেশির ভাগ ভোটার হচ্ছে সংখ্যালঘু ও নিম্নবিত্তের। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। গেইটে দাঁড়ানো ছিলেন কামরানের মেয়ে আশা। সঙ্গে তার স্বামীও। পিতার অপেক্ষা করছেন। এমন সময় স্ত্রী আসমা ও ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলুকে নিয়ে সেখানে হাজির হন মেয়রপ্রার্থী কামরান। ফটকে ঢুকেই বলেন, ভোট দিই চলেন। এ বলে পা বাড়ালেন কেন্দ্রের দিকে। প্রথম কক্ষেই কামরান নিজের ভোট দিলেন। এ সময় তার স্ত্রী ও সন্তানরা পাশে ছিলেন। ভোট প্রদানের পর কামরান গোটা ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করলেন। পুরুষ ভোটারের সঙ্গে করলেন করমর্দন। আর নারী ভোটারদের দিলেন সালাম। এক এক করে সব ভোট কক্ষ তিনি পরিদর্শন করলেন। শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বলেন, আমি সিলেটের মানুষের কাছে ঋণী। সিলেটের মানুষ সব সময় আমার পাশে থেকেছে। এবারও সিলেটের মানুষ তাকে হতাশ করবে না। এক প্রশ্নের জবাবে কামরান বলেন, ফলাফল যা-ই হোক মেনে নেবো। তবে সিলেটের মানুষ তাকে ভালবাসে। তারা এবার তাদের প্রিয় আনারস প্রতীকেই ভোট দেবেন। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না। পর পর তিন বার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আবার গাড়ি নিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে বের হয়ে যান।
আশঙ্কার কথা জানালেন আরিফ: ভোট চলাকালে শুরু থেকেই নির্বাচন নিয়ে তার আশঙ্কা কথা জানালেন মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি ১৮ দলীয় জোটের সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী। সকাল ৮টা ২০ মিনিট। নগরীর ঝেরঝেরি পাড়ার রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। সাংবাদিকরা জড়ো হন সেখানে। ঢাকা ও সিলেটের অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের ভিড়। এমন সময় তার মা ও কন্যাকে নিয়ে ভোট দিতে এলেন আরিফুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন নেতাকর্মী। সবাইকে নিয়েই কেন্দ্রের মধ্যে প্রবেশ করেন আরিফুল হক চৌধুরী। ব্যালট হাতে নিয়ে বুথের ভেতরে গিয়ে ভোট দিলেন। আর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সামনেই ব্যালট বাক্সে ব্যালট জমা দিলেন। এরপর দোতলা থেকে তিনি বেরিয়ে এলেন। কেন্দ্রের বাইরের রাস্তায় এসে আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। বলেন, এবারের ভোট আমার জন্য ভিন্ন আমেজের। আমার মেয়ে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছে। সে খুব খুশি। আর শুরু থেকে নির্বাচন বেশ উৎসবপূর্ণ পরিবেশে হচ্ছে জানান আরিফুল হক। তবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সেনা মোতায়েন না করায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। এতে তার সমর্থকরা বেশ বিব্রত। এদিকে, নিজ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে বের হন আরিফুল হক চৌধুরী। সকাল ১০টার দিকে দুর্গাকুমার পাঠশালা ভোট কেন্দ্রে তিনি বলেন, নগরীর কাজিটুলা, কুয়ারপাড়া, লামাবাজার ভোট কেন্দ্রে র‌্যাব তার সমর্থকদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। র‌্যাব বেশি সমস্যা করায় তিনি মনে করছেন এবারের ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে না। এই আশংকা যত সময় যাচ্ছে তার কাছে তত তীব্র হচ্ছে।
ভোট কেন্দ্রের চিত্র: ঘড়ির কাঁটায় সকাল তখন ৮টা। সিলেট নগরীর অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র। সাংবাদিকদের ভিড় বেশি। আসতে শুরু করেছেন ভোটাররা। বেশ কয়েকজন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে। এমন সময় প্রিজাইডিং অফিসার বললেন, ভোট শুরু। এক এক করে ভোটাররা ভেতরে গিয়ে ভোট দিতে থাকলেন। প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যে সেখানে এসে জড়ো হলেন শতাধিক ভোটার। এই প্রথমবারের মতো সিলেট নগরীর ২নং ওয়ার্ডের তিনটি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টা। নগরীর জিন্দাবাজারের পাশের রসময় উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র। ভোট দিয়ে মাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন সিলেট কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. এহসানুল হক তাহের। তিনি জানানলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ খুবই সহজ। স্বল্প সময়ে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। দুপুর ১টা। সিলেট নগরীর আলীয়া মাদরাসা ভোট কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন ১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হাদী ও মিসকাতুন নূর। সঙ্গে আরেক জন প্রার্থীও। তিনজন এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন। কাউন্সিলর প্রার্থী মিসকাতুন নুর বলেন, আমরা তিনজনই প্রার্থী। এর মধ্যে একজন পাস করবো। তবে, তিনজনই ওয়ার্ডকে এগিয়ে নিতে কাজ করবো। কাউন্সিলর প্রার্থী হাদীর মুখেও একই সুর। তিনি বলেন, ভোট হচ্ছে শান্তিপূর্ণ। আমরা তিন প্রার্থীই আগামী দিনে এক সঙ্গে কাজ করবো। সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট নগরীর কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল কাউন্সিলর প্রার্থীরা গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে। ভোটাররা কেন্দ্রে যাচ্ছে ভোট দিচ্ছে। বাইরে কিছুটা উত্তাপ থাকলেও ভেতরে এর কোন প্রভাব পড়েনি। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল ভোটগ্রহণ। এ সময় কাউন্সিলর প্রার্থী জামাল আহমদ জানালেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চলছে ভোটগ্রহণ। এছাড়া আবহাওয়া ভাল থাকায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে এর একটু পরে নগরীর মদনমোহন কলেজের ভোট কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে বাক্‌বিতণ্ডা হয়েছে। এ নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা মুখোমুখি থাকায় শেষে ওই কেন্দ্রে মোতায়েন করা হয় বিজিবি।
শান্তিপূর্ণভাবে রাসিক নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ- নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি
নূর ইসলাম/জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী থেকে জানান, নির্বাচন শেষ। ঘটেনি কোন অঘটন। শঙ্কা থাকলেও নির্বাচনে তার কোন প্রভাব পড়েনি। অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। রাসিকের ১৩৭টি কেন্দ্রের ৮৪৫টি বুথে শান্তিপূর্ণভাকে ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয়েছে ভোট গণনার কাজ। তবে কোন কোন কেন্দ্রে ভোট শেষ করতে একটু বেশি সময় লেগেছে। এদিকে নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক ও মিডিয়াকর্মীরা। রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভোট শেষ হওয়ায় নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, গড়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে। ভোট প্রদান নিশ্চিত করতে গত ৭২ ঘণ্টা গোটা রাজশাহী মহানগরকে মূলত কাফু’র নগরীতে পরিণত করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৪৫০০ সদস্য। রাতভর র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের নজরকাড়া টহল ভোটারদের মনে সাহস জোগায়। ফলে সকাল থেকে রাসিক নির্বাচনের প্রায় সবগুলো কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এদিকে শঙ্কা থাকলেও নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী  মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভোটারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেয়ার প্রশ্নে দুই প্রার্থীই জবাব দিয়েছেন অতিকৌশলে।
সকাল ৮টা থেকে রাজশাহী মহানগরীর ১৩৭টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এসব কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল এই মহানগরকে তারা কত ভালবাসেন। তাই যোগ্য ব্যক্তিকে নগর পিতার আসনে বসাতে তাদের যেন রাতে ঘুম হয়নি। তাই সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রের বাইরে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। সকাল পৌনে ৭টায়  শহরের প্রাণ কেন্দ্র জিরো পয়েন্টের পাশেই মসজিদ মিশন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল নারী ভোটারদের একটি বড় অংশ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরুষদের সেন্টারেও উপস্থিতি কম নয়। এই সেন্টারে কথা হয় নার্গিস আক্তারের সঙ্গে। ‘এত সকালে কেন লাইনে দাঁড়িয়েছেন’ প্রশ্ন করতেই সোজাসাপ্টা জবাব, নিজের ভোটটি সবার আগে পছন্দের প্রার্থীকে দিতে চাই। তাছাড়া সকালে কাজের চাপ কম। রান্না-বান্নার ঝামেলা কম। তাই সকাল সকাল ভোট দিয়ে দিনের কাজ শুরু করতে চান। দেরি করে তো কোন লাভ নেই। তাছাড়া যত বেশি দেরি করবো ততই প্রার্থীর লোকেরা বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক শুরু করবে। তিনি জানালেন, বউমা, মেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। নার্গিস বেগমের মতো সকাল ৮টার আগে আরও অন্তত ১০০ নারী ভোটার এই কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৭৬৫। ৬টি বুথে চলে ভোট গ্রহণ। পাশের পুরুষ সেন্টারেও দেখা গেল ৫০ জনেরও বেশি ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, সব প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কথা বলতে বলতে ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ভোট কেন্দ্রের সব বুথে বেঁধে যায় হুড়োহুড়ি। তবে ভোটার তালিকায় ভোটারের নাম ও নম্বর খুঁজে পেতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ভোটার ও নির্বাচনী এজেন্টদের। বেলা সাড়ে ৮টায় শহরের ল্যাবরেটরি স্কুলে দেখা গেল ইভিএম পদ্ধতিতে চলছে ভোট গ্রহণ। নানা বয়সের মানুষ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ইভিএম মেশিনে ভোট দিচ্ছেন। রয়েছে ওয়েব ক্যামেরাও। ফলে এই কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়টি কিছুটা কমতি ভাব লক্ষ্য করা যায়। এভাবে বেলা ১টা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীর ২৫টি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটার, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বললে নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক খবর মেলে। এদিকে নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ১০টি মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত গোটা মহানগরী চক্কর দেয়। এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ প্রতিটি কেন্দ্রে নিবিড় মনিটরিং করেন। বেলা ২টার দিকে  নগরীর জাতীয় তরুণ সংঘ প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে কথা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত তিনি ৫৬টি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। কোথাও কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি তার চোখে ধরা পড়েনি। কোন মহল থেকে আদালতের কাছে কোন অভিযোগ দাখিল করেনি।  এদিকে সকাল সাড়ে ৮টায় মেয়র প্রার্থী বুলবুল ও লিটন নতুন উপশহর এলাকার হাউজিং এস্টেট এলাকায় অবস্থিত স্যাটেলাইট স্কুল কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা ও নির্বাচনী কর্মীরা। বেলা ১২টার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল কেন্দ্রে দেখা যায়, ভোটারদের তুলনায় ভোটের কর্মীদের উপস্থিতি বেশি। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, এই সেন্টারে ২৭৪৫ জন ভোটারের মধ্যে ৮৮৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। রাবির শিক্ষক ড. ফারুক হোসেন জানান, এই সেন্টারে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট কাস্টিং হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সেন্টারে যারা ভোটার তাদের অনেকে ছুটিতে বাড়ি চলে গেছেন, অনেকে চাকরির কারণে বাইরে। অনেক ছাত্র এই সেন্টারের ভোটার। ফলে তারা বাইরে রয়েছে। এদিকে ভোট চলাকালে নগরীর শাহ মখদুম কলেজ কেন্দ্র, কাশিয়ানাডাঙ্গা সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্র, আহম্মদপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্র, ধরমপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, বিসিআইসি ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্র, দরাপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্র, খরবোনা সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্র, কাজলা ধরমপুর স্কুল সেন্টার, ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্র, মুসলিম স্কুল, আলিয়া মাদরাসা সেন্টারসহ প্রায় ৫০টির মতো ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে পাওয়া গেছে একই রকমের তথ্য। এদিকে নির্বাচন চলাকালে অযাচিত মহড়া দেয়া ও ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগে  র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করেছে। এদিকে নির্বাচন শেষে বিকাল ৫টায় নগরীর ল্যাবরেটরি স্কুল মাঠে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কালো টাকা, পেশিশক্তি ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষরা নির্বাচনী বিজয় ছিনতাই করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নগরবাসীর প্রতিরোধে তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। এখন ভোট গণনা চলছে। ফলে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মীদের তিনি ভোট কেন্দ্রে অবস্থানের অনুরোধ জানান।
ভোটারের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়ার মতো: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়ার মতো। মহানগরের প্রতিটি কেন্দ্রে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। তবে কাস্টিং ভোটের মধ্যে পুরুষের  তুলনায় নারীরা বেশি। শহরের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে নারী ভোটারদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাস্ট হয়েছে। পাশাপাশি পুরুষ ভোট কাস্ট হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি দায়িত্বশীল। তাছাড়া নারীদের তুলনায় পুরুষরা কাজের কারণে বেশি বাইরে থাকায় ভোট কম পড়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলরা বেশি বেশি নারী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করেছেন। এর কারণে তাদের উপস্থিতি ছিল পুরুষের তুলনায় বেশি।
মহানগর ছিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়া: রাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা মহানগরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। ১৩ই জুন মধ্য রাত থেকে রাজশাহী শহরের বসবাসরত সকল বহিরাগতকে মহানগর ছাড়ার নির্দেশ দেন জেলা রিটানিং অফিসার। এর পর ওই দিন সন্ধ্যা থেকে মহানগরীতে প্রবেশের সবগুলো রাস্তায় বসানো হয় নিরাপত্তা তল্লাশি চৌকি। গড়ে তোলা হয় ৭ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র‌্যাব পুলিশের পাশাপাশি রাস্তায় নামানো হয় বিজিবি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৪ হাজার সদস্যের পাশাপাশি রাস্তায় ছিলেন ১০টি মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। এছাড়া প্রতিটি সন্ত্রাসকবলিত এলাকায় ভোটের আগের রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সন্দেভাজন একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ও ভোট প্রদান নিশ্চিত করতে নগরজুড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি। ফলে ইচ্ছা থাকলেও কেউ ঝুঁকি নিতে সাহস পায়নি।
রাজনৈতিক নেতা-ক্যাডারদের সাংবাদিক পাস: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শতাধিক রাজনৈতিক নেতা ও ক্যাডারকে ইসি কর্তৃক সরবরাহকৃত সাংবাদিক পাস ইস্যু করা হয়। দেয়া হয় যানবাহনের জন্য অনুমতির স্টিকার। আর এসব পাস ও স্টিকার লাগানো মাইক্রো নিয়ে এসব রাজনৈতিক ক্যাডারদের ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে শোডাউন করতে দেখা যায়। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা জামাত খান ও রাজশাহী হোটেল মালিক সমিতির নেতা রিংকুকেও সাংবাদিকের পাস ব্যবহার করতে দেখা যায়। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, এসব কার্ডধারী বেশির ভাগ বহিরাগত। তারা কোন স্থানীয় দৈনিক বা কোন আঞ্চলিক পত্রিকাতেও কোন দিন সাংবাদিকতা করেননি। তারপরও তাদের শুক্রবার গভীর রাতে বিশেষ তদবিরের কারণে সাংবাদিক কার্ড ও গাড়ির পাস ইস্যু করা হয়। এসব ভুয়া কার্ডধারী নির্বাচন চলাকালে বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বা কোন কোন ক্ষেত্রে বুথের মধ্যে ঢুকে হম্বিতম্বি করতে থাকে। যা দেখে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজ বিব্রত হন। এদিকে এসব রাজনৈতিক ক্যাডারদের পাশ ইস্যু করতে গিয়ে রাজশাহীতে কর্মরত বহু পেশাদার সাংবাদিক পাস না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।
মিডিয়ার সরব উপস্থিতি: রাজশাহী সিটি করপোরেশ নির্বাচনে ভোট গ্রহণকালে মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়ার মতো। দেশের সব বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের একাধিক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার কয়েক শ’ সাংবাদিক নির্বাচনী খবর সংগ্রহ করতে মহানগরের অলিগলি চষে বেড়ান। যেখানে কোন খবর সেখানেই এক ঝাঁক মিডিয়ারকর্মীর ক্যামেরার কিল্ক ক্লিক শব্দে প্রশাসনের টনক নড়ে ওঠে। শঙ্কিত হয়ে পড়েন সন্ত্রাসী আর কালো টাকার মালিকরা। ফলে ইচ্ছা থাকলেও নির্বাচনে কোন প্রকারের সহিংসতা বা প্রভাব বিস্তারের সাহস পায়নি ওই চক্রটি। সাংবাদিকদের এই সাহসী পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার। নির্বাচন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিডিয়ার এই সরব উপস্থিতির কারণে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হয়েছে।
চা-নাস্তার অভাব ছিল না: নির্বাচন চলাকালে রাসিক নগরির প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের জন্য ছিল চা-নাস্তার ব্যাপক আয়োজন। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের ভোটারদের জন্য এই আয়োজন করে। ভোটাররা ভোট দেয়ার আগে ও পরে এসব সেন্টারে বসে চা-নাস্তা সারেন। এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থি বিবেচনা করে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে প্যান্ডেল করে এ ধরনের অয়োজন করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা  তা বন্ধ করে দেন।
ইভিএম বিড়ম্বনা: রাসিক নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট গ্রহণ শেষে আধা ঘন্টার মধ্যে এই তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার। গভ. ল্যাবরেটরি স্কুল ও লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল সঠিক সময়ে প্রকাশ করতে পারলেও সমস্যা দেখা দেয় সরকারি টিটি কলেজ কেন্দ্রের একটি বুথের মেশিনে। এই  বুথে ৩১০টি ভোট কাস্ট হয়। কিন্তু ফল বের করার সময় মেশিনে কোন কাজ না করায় বিপাকে পড়েন নির্বাচনী কর্মকর্তা। এই সেন্টারে মোট ৬টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়। বাকি ৫টি বুথের মেশিনে কোন সমস্যা না থাকায় জেলা রির্টার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বেসরকারি ভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন। প্রাপ্ত ফলাফলে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী  বুলবুল পেয়েছেন ২৩৭৯ ভোট। তার নিকটতম ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী লিটন পেয়েছেন ২১৩৬ ভোট। বাকি বুথের ৩১০টি ভোট নিয়ে কি করা যায় সে ব্যাপারে ইসির পরামর্শ চেয়েছেন রিটার্নিং অফিসার।
খুলনায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর মৃত্যুতে উত্তেজনা- বিকালে পোলিং এজেন্ট পরিবর্তন
নিয়াজ মাহমুদ/রাশিদুল ইসলাম, খুলনা থেকে জানান, ভোটগ্রহণকালে খুলনায় পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ইসলামী আন্দোলনের কর্মী আলম সর্দার মারা যান। পাশাপাশি দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে কথাকাটাকাটির জের ধরে সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে প্রিজাইডিং অফিসার ৪০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখেন একটি কেন্দ্রে।  পরে র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে  সেখানে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলো খুলনা সিটি করপোরেশনে।  বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর প্রতীক দোয়াত কলমের এজেন্ট ছিলেন না। ভোট গণনা নিয়ে টেনশনে ছিল ১৮ দল। বেশির ভাগ কেন্দ্রে তারা পোলিং এজেন্ট পরিবর্তন করেছেন ভোট গণনার সময়। কারণ তাদের পোলিং এজেন্ট ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী কিনে নিতে পারে-এ আশঙ্কায়। ওদিকে ভোট গ্রহণকালে দেখা গেছে কোথাও উপছে পড়া ভিড় কোথাও কম। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে নগরীর পাইওনিয়ার স্কুল কেন্দ্রে  ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার  আবদুল খালেক। ১৮ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন আলীয়া মাদরাসা কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টায়। ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের  মুখোমুখি হয়ে তালুকদার  আবদুল খালেক বিজয়ের ভি চিহ্ন দেখিয়ে বলেছিলেন, খুলনার মানুষ উন্নয়ন চায়। অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য তারা আবারও আমাকে ভোট দেবেন। বেলা ১টায় সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি অবারও বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে।
ইভিএম: খালিশপুরের ক্রিসেন্ট জুট মিল এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডে ৫টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো  ভোটদানকারীরা জানিয়েছেন ইভিএমে  ভোট দিতে তাদের কোন সমস্যা হয়নি। ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ৮ নং ওয়ার্ডের ৫টি কেন্দ্র্রে ৬ হাজার ২শ’ ৩৭ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আবদুল খালেক (তালা) ২৩৫৮ ভোট, বিএনপি সমর্থিত মনিরুজ্জামান মনি (আনারস) ১৮৮৬ ভোট, জাতীয় পার্টি সমর্থিত শফিকুল ইসলাম মধু (দোয়াত কলম) ২৫৩ ভোট পেয়েছেন।  ক্রিসেন্ট আলিম মাদরাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মহসিন মিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ  মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে ভোটারদের তেমন  কোন সমস্যা হচ্ছে না। কেউ কেউ সামান্য কিছু ভুল করছে, তবে সেটা আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি। নির্বাচনের আগে দুই দিন ‘মক’ (অনুশীলন) ভোটিং প্রশিক্ষণ হয় বলেও তিনি জানান। ভোট দিয়ে যাওয়ার সময় মুকুল বেগম, গোলাপী রানী রায়, সামি আক্তারসহ কয়েকজন মহিলার কাছে ইভিএমের ভোটিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, কম্পিউটারে ভোট দিয়েছি। কোন সমস্যা হয়নি। আগে প্রশিক্ষণে এসেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশিক্ষণে আসতে না পারলেও তাদের কোন সমস্যা হয়নি। তবে গোলাপী রানী রায় মক প্রশিক্ষণে এসেছিলেন বলে জানান। এই কেন্দ্রের  মোট ১৩৬৬ ভোটের মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৪০৬ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসার। ক্রিসেন্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন রিটার্নিং অফিসার মোস্তফা ফারুক। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি সকাল  থেকে ২৮টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি।  কোথাও কোন অভিযোগ পায়নি। এখনও পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে মানুষ ভোট দিচ্ছে। এটা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। এর  কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। সকালে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনি ঝুঁকিপূর্ণ ২০৬টি  কেন্দ্রের পরিস্থিতিসহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন মিডিয়ার কাছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রিটার্নিং অফিসার বলেন, তিনি তো আমাকে কোন অভিযোগ  দেননি। তার সঙ্গে আমার কিছুক্ষণ আগেও দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাফেজ শামসুল আলমের (চাঁদ) সমর্থনে ক্রিসেন্ট জুট মিল শাখার মুজাহিদ কমিটির সহ-সভাপতি আলম সরদারসহ ৫০-৬০ কর্মী ক্রিসেন্ট জুট মিলের রেললাইন সংলগ্ন এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে সংঘবদ্ধভাবে বের হয়ে ভোট কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকা র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে আলম সরদার ও মহসিন নামের দুইজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত তাদেরকে প্রথমে ক্রিসেন্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হয়। এখানে আলম সরদারের অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা সার্জিক্যাল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করে। ঘটনাস্থল থেকে আহত দুইজনকে রেখে র‌্যাব সদস্যরা ৮ জনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। আটককৃতদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ দিন করে সাজা দেয়। নিহত হওয়ার পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিকালে আটককৃতদের পুলিশ ছেড়ে দেয়।  আলম সরদারের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ এলাকায়। তিনি ক্রিসেন্ট জুট মিলের দুই নং ফিনিং বিভাগের সরদার ছিলেন। তিনি চার সন্তানের জনক। তার জানাজা শেষে লাশ গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। আলম সর্দারের ছেলে আল আমীন বলেন, আমার বাবা ভোট দিয়ে মিল গেটের একটি চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে বের হচ্ছিল। সে সময় পুলিশ ও র‌্যাব তাকে ধাওয়া দেয় এবং মারধর করে। এতে সে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এর আগে লাশ ক্রিসেন্ট মিলে আনার পর হাজার হাজার শ্রমিক বিক্ষোভ করে। ভোটগ্রহণে সাময়িক বাধা সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মৃত আলম সর্দারের স্ত্রী জাহানারা বেগম জানান, তার স্বামী স্ট্রোক করে মারা  গেছে। তিনি বলেন, শুনেছি র‌্যাব-পুলিশ তাকে দাবাড় (তাড়া) দিয়েছে। তবে আমি এ মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করি না। অপর একটি সূত্র জানায়, আলম সর্দার মারা যান পুলিশের লাঠিচার্জের সময় হার্ট অ্যাটাকে। এর আগে নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডে  বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জেএডএ মাহমুদ ডনের সমর্থকের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে  কেন্দ্রে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রিজাইডিং অফিসার সকাল ৮টা ৪০ মিনিট থেকে ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখেন খানজাহান আলী স্কুল কেন্দ্রে। পরে র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর আবার  ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
সকাল ১০টায় নগরীর নতুন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়  কেন্দ্রে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। সকাল ৮টায় এসেও ভোট দিতে পারেননি আসমা বেগম। আসমা বলেন, অনেক বড় লাইন। ভোটের আগে ভাই ভাই, এখন কারো খবর নাই। সিটি কলেজের ২২৯ কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১০৫ ভোট, সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ১০৮ ভোট, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ৬৯ ভোট কাস্ট হয়।
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ  হয়েছে।  ভোটারদের সুবিধার্থে এক হাজার ৪২৮টি স্থায়ী বুথ ছাড়াও ৩৩টি অস্থায়ী বুথ নির্মাণ করা হয়। এবার ২০২টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮৬টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ  কেন্দ্রে ২৪ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর  সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। সাধারণ  কেন্দ্রগুলোতে  একজন এসআই’র (উপ-পরিদর্শক) নেতৃত্বে সাতজন সশস্ত্র পুলিশ, একজন সশস্ত্র আনসার, দু’জন অঙ্গীভূত সশস্ত্র আনসার এবং ১২ জন ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ  কেন্দ্রগুলোতে ছিলেন অতিরিক্ত দু’জন আনসার।
ফাতেমা বিদ্যালয় কেন্দ্র, নতুন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রূপসা উচ্চ বিদ্যালয়, রূপসা  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই কেন্দ্রসহ বেশির ভাগ  কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর প্রতীক দোয়াত কলম-এর এজেন্ট ছিলেন না।
এছাড়া, ৯ নং ওয়ার্ডের শহীদ তিতুমীর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের জরিনা বেগম ও জেসমিন আরা ভোট দিতে এসে দেখেন তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এব্যাপারে তারা প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।  এবং বাস্তুহারা কেন্দ্রসহ একাধিক কেন্দ্র থেকে জামায়াত সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফেজ নসরুল্লাহর এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।  পিএমজি স্কুল কেন্দ্রে কামরুন নাহার এসে দেখে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে আপত্তি জানালে পুনরায় তাকে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।  ভোটারদের সুবিধার্থে এক হাজার ৪২৮টি স্থায়ী বুথ ছাড়াও ৩৩টি অস্থায়ী বুথ নির্মাণ করা হয়। এবার ২০২টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮৬টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ  কেন্দ্রে ২৪ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর  সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। সাধারণ  কেন্দ্রগুলোতে  একজন এসআই’র (উপ-পরিদর্শক) নেতৃত্বে সাতজন সশস্ত্র পুলিশ, একজন সশস্ত্র আনসার, দু’জন অঙ্গীভূত সশস্ত্র আনসার এবং ১২ জন ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ  কেন্দ্রগুলোতে ছিলেন অতিরিক্ত দু’জন আনসার।
ভোটগ্রহণের আগেই ফলাফল শিটে স্বাক্ষর: এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডের রূপসা কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর করে নেন। তাতে লেখা ছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এখানে কোন কারচুপি হয়নি।
মনিরুজ্জামানের যত অভিযোগ: চতুর্থ বারের মতো খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ আপাতদৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতমুক্ত দাবি করা হয়েছে। তবে খালিশপুরে র‌্যাবের হামলায় এক প্রার্থীর কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনা ছাড়াও দিনভর অসংখ্য অনিয়মের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে প্রায় সকল কেন্দ্রে। পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষপাতমূলক আচরণ, তালা সমর্থকদের প্রকাশ্যে মিছিল ও মহড়ার মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করতে দেয়া, পক্ষান্তরে আনারসের ব্যাজ পরিহিত কর্মী- সমর্থক দেখামাত্র বেধড়ক লাঠিচার্জ করে আহত করা, কেন্দ্রের ভেতরে পুলিশ সদস্যদের তালার পক্ষে ভোট চেয়ে ভোটার ভীতি প্রদর্শন, কালো টাকার ছড়াছড়ি, জাল ভোটের কারণে বৈধ ভোটারদের ভোট দিতে না পারা এবং অসংখ্য নতুন ভোটারের নাম্বার ও কেন্দ্র খুঁজে না পাওয়ার কারণে ভোট দিতে না পারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনা সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের সামনে আনারস প্রতীকের কর্মীদের মারপিট, অস্ত্র উঁচিয়ে ধাওয়া এবং ক্যাম্পের চেয়ার-টেবিল লাথি মেরে ফেলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরাম সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আনারস প্রতীকের মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচনী দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত ৩০টির অধিক অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারকে ফোনে অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাক্স করা হয়েছে। অনুলিপি দেয়া হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর। কিন্তু একটিও অভিযোগের কোন প্রতিকার করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি।
মেয়র, বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ করে এবং নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড সরজমিন পরিদর্শন করে উপরোক্ত অভিযোগের অসংখ্য তথ্য প্রমাণ মিলেছে। রূপসা হাই স্কুল কেন্দ্র, রূপসা ইউসেপ স্কুল কেন্দ্র, কলেজিয়েট স্কুল, সবুরণনেছা স্কুল, পাইওনিয়ার স্কুল, পিটিআই স্কুল, বাগমারা প্রাইমারি স্কুল, বাগমারা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড মাদরাসা, সোনামণি স্কুল, প্রভাতী স্কুল, রেলওয়ে স্কুল, বিকে স্কুল, পল্লী মঙ্গল স্কুল কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের তালা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যে মিছিল করতে এবং বহু ভোটারের সঙ্গে হুকুমের সুরে তাদের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে। র‌্যাব ও পুলিশের গাড়ির বহর দফায় দফায় উচ্চ শব্দে হুইসেল বাজিয়ে মহড়া দিয়েছে। আনারসের ব্যাজ পরিহিত কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনাও ঘটেছে। একই কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তালা সমর্থকদের কোন কিছু না বলে আনারসের কর্মীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালানো হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা পরিষদের বিপরীতে কেসিসি মার্কেটের সামনে আনারসের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে হামলা চালায় পুলিশ। মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্তুজা অভিযোগ করেন, ইউনাইটেড ক্লাব কেন্দ্র ও জিমনেসিয়াম কেন্দ্রের মধ্যবর্তী ওই স্থানে আমাদের কর্মীদের ওপর বিনা উস্কানিতে বন্দুক উঁচিয়ে হামলা চালিয়েছে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন। পুলিশের হামলায় আনারসের কর্মী আব্দুর রাজ্জাক, আরিফুর রহমান, আবুল কালাম, সাব্বির আহমেদসহ সেখানে আরও ২/৩ জন আহত হয়। ওসি শ্রমিক দল নেতা মো. শফিকুল ইসলামকে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দেন।
সকাল পৌনে ১১টায় ২১ নং ওয়ার্ডের প্রভাতী স্কুল কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও স্লোগানকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ২৭ নং ওয়ার্ডে পিটিআই স্কুল ও সিটি কলেজে সকাল থেকে ছিল টানটান উত্তেজনা। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি দিদার আহমেদ ও তার স্ত্রী দুটি কেন্দ্রে দীর্ঘ সময় অবস্থান নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের তালার পক্ষে প্রচারণা চালাতে বাধ্য করে। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এই পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয় হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় সবুরণনেছা স্কুল কেন্দ্রে তালার কর্মীদের ইন্ধনে আনারসের সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এখান থেকে সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ হারুন মজনুকে পুলিশ আটক করলেও কর্মীদের চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সকাল পৌনে ১১টায় ২৮ নং ওয়ার্ডের জোহরা সামাদ স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহানের ছেলে ইসমাইল আনারস কর্মীদের মারধর করে। সিটি কলেজ কেন্দ্রে এসআই মধু ও সবুরণনেছা স্কুল কেন্দ্রে পুলিশ সদস্য বিধান ছিল চরম বিতর্কিত ভূমিকায়। বিভিন্ন স্থানে কর্মীদের বুক থেকে আনারসের ব্যাজ ছিঁড়ে নিয়েছে র‌্যাব। হ্যানে রেলওয়ে স্কুল কেন্দ্রে এসআই জুয়েল ও সামাদ আনারসের  পোলিং এজেন্টের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয় ও তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়।
নির্বাচনে জাল ভোট প্রদান ও বৈধ ভোটারদের ভোট দিতে না পারার অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। বানিয়াখামার বিকে মেইন রোডের খাদিমুল ইসলাম মাদরাসার ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ ভোট দিতে গিয়ে তালিকায় নাম পায়নি। তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও প্রিজাইডিং অফিসার দুর্ব্যবহার করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ২৩ নং ওয়ার্ডের সালমা বেগম সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টায় ভোট দিতে গিয়ে দেখেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এ নিয়ে তিনি আপত্তি জানালে তাকে রীতিমত হুমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় পুলিশ। সাংবাদিক কামরুল হোসেন প্রথমবারের মতো ভোটার হয়ে আইডি কার্ড নিয়ে ১৯ নং ওয়ার্ডের পল্লী মঙ্গল স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। কিন্তু ভোটার তালিকায় তার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিকে স্কুল কেন্দ্র, সেন্ট জোসেফ স্কুল কেন্দ্র, বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ কোয়ার্টার কেন্দ্রে নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া যায়। খালিশপুর থানার বাস্তুহারা স্কুল কেন্দ্রে বিকাল সাড়ে ৩টায় ৩ জন ভোটার অভিযোগ করেন কেন্দ্রে এসে তারা দেখতে পেয়েছেন তাদের ভোটগুলো আগেই দেয়া হয়ে  গেছে। ২৬ নং ওয়ার্ডের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল কেন্দ্রের ভোটার রেখা বেগমও ভোট দিতে পারেন নি।
বরিশালে দিনভর অভিযোগ- তবুও ভোটারদের ব্যাপক সাড়া
কাফি কামাল/জিয়া শাহীন, বরিশাল থেকে: দুই প্রধান প্রার্থীর মধ্যে মারামারি, কেন্দ্রে কেন্দ্রে মহড়া, এজেন্ট বের করে দেয়া, ব্যালট ছিনতাই, জোর করে টেলিভিশন প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ ছিল দিনভর। এর বাইরে বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বরিশালে। অন্য সিটি করপোরেশনগুলোতে নির্বাচনে প্রধান মেয়র প্রার্থীদের অবস্থান সৌহার্দ্যপূর্ণ হলেও বরিশালে ছিল উল্টো। শওকত হোসেন হিরণ ও আহসান হাবিব কামাল দু’জনেই আহত হয়েছেন সংঘর্ষে। তবে পরিবর্তন ও প্রত্যাবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৭০ ভাগ নগরবাসী। ভোর থেকেই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট কেন্দ্রের সামনে লাইনে দাঁড়ান ভোটাররা। সকাল থেকে রোদ ঝলমল পরিবেশে ভোটগ্রহণে ছন্দপতন ঘটায় দুই দফা আষাঢ়ে বৃষ্টি। রোদের তীব্রতা ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। নগরীর সরকারি হাতেম আলী কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, উদয়ন স্কুল, অশ্বিনী কুমার টাউন হল, একে স্কুল, জিলা স্কুল সহ নানা কেন্দ্র ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে থাকে পরিবেশ। একের পর এক কেন্দ্র দুই মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হাতাহাতিতে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বরিশাল।

No comments

Powered by Blogger.