টাইমস স্কয়ারে মুসলিম কমিউনিটির বিক্ষোভে মত- বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ

দেশে মানবাধিকার লংঘন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের নামে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের হয়রানী চলছে এমন অভিযোগ এনে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন।
এসময় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদ- বাতিল এবং আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করা হয়।

নিউইয়র্ক সিটির প্রাণকেন্দ্র টাইমস্কোয়ারে শনিবার এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে আমেরিকান ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটস নামের একটি আমব্রেলা সংগঠন। সমাবেশে বাংলাদেশী নারী পুরুষ ছাড়াও আমেরিকান মুসলমানদের বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়। আমেরিকান ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটসের ব্যনারে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের পক্ষে ও সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে এটি এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত  সবচেয়ে বড় সমাবেশ বলেই দাবি করেন এর আয়োজকরা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিক অধিকার সংগঠন কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ। স্টপ স্টপ জেনোসাইড, ফ্রী ফ্রী সাঈদী, কে বলে রাজাকার/সাঈদী মোদের অহংকার ইত্যাদি শ্লোগানে দিয়ে এই বিক্ষোভ দেখান শত শত নারী পুরুষ।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকান সভাপতি নাঈদ এম বেগ, মুসলিম ইম্মাহ ইন আমেরিকার সভাপতি আবু আহমেদ নুরুজ্জামান, মুসলিম পিস কোয়ালিশনের প্রধান ড. শেখ উবায়েদ, ইন্টারনেট ইসলামিক ইউনিভার্সিটির সভাপতি জাহীর উদ্দীন, ইকনার নিউ ইয়র্ক চাপ্টারের প্রধান ওমর রাঙ্গিন ওয়ালা, মুনার কর্মকর্তা মাওলানা দেলোয়ার হোসেইন, হিল সাইড ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি আব্দুল আজিজ ভুইয়া, বেলাল মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালিক, ৯০ এর গন আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা ডাঃ গুলজার আহমদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ডাঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ, প্রকৌশলী ফারুক ওয়াদুদ, বেইসের কর্মকর্তা ডাঃ জুন্নুন চৌধুরী, মজলিশ আল শুরার সাবেক আমীর ইমাম আব্দুল লতিফ আলামীন, কেয়ার নিউইয়র্কের নির্বাহী পরিচালক এটর্নী মুনির আওয়াড, ওম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান শাহানা মাসুম, পার্ক আমেরিকান সোসাইটির সভাপতি শামস উজ জামান, মদিনা মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ জুলক্বিফল চৌধুরী, এটর্নী আব্দুল আজিজ প্রমুখ।

সমাবেশে কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক নাহিদ আওয়াদ বলেন, মানবাধিকারের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। পুরো দেশকে বিরোধীদের কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে কথা বলার অপরাধে শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। বিরোধীদের মিটিং মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না। হত্যা, খুন, গুমের ভয়ে সে দেশের অনেক গ্রাম এখন পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। বিরোধীদলের নেতা কর্মীদের অধিকাংশ এখন কারাবন্দী। যারাই সরকারের সমালোচনা করছেন তাদের পরিণতি হচ্ছে কারাগার। একই ধারাবাহিকতায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে অমানষিক নির্যাতন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লী-বিএনপি-জামাত বুঝিনা। পৃথিবীর যেকোন দেশে মানবাধিকার লংঘন হলে সেখানে আমাদের সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে। একই কারণে আজ যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম জনগোষ্ঠি বাঁধ ভাঙ্গা স্ত্রোতের ন্যায় ছুটে এসেছে টাইমস্কোয়ারে।

যুক্তরাষ্ট্রে মুলধারায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকার (ইকনা) সভাপতি নায়িম এম,বেগ বলেন, আল্লাহ ও রাসুলের কথা বলেন বাংলাদেশে এমন লোকরা এখন চরম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার। যার প্রমাণ হচ্ছে একটি ইসলামিক দলের প্রায় সব নেতা এখন সরকারের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। একই দলের শীর্ষ নেতারা জেলে আর কেউ বা মুত্যুসেলে। সরাকরী দল ছাড়া দেশর তরুন সমাজের কোন নিরাপত্বা নেই। ইসলামি ছাত্রশিবিরের হাজার নেতা কর্মী জেলে। একটি মুসলিম দেশে মসলমানরাই অত্যাচার নির্যাতন আর নিষ্পেশনের শিকার।

আবু আহমদ নুরুজ্জামান বলেন,বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সব চক্রান্ত চুড়ান্ত। এরই অংশ হিসেবে ভারত সরকারের ইন্ধনে বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর চক্রান্ত চলছে। এজন্য দেশপ্রেমিক ইসলামিক শক্তি ও জাতীয়তাবাদীদের কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না সরকার। যার প্রমান হচ্ছে বিএনপি ও জামাতের সকল নেতার বিরুদ্ধে হুলিয়া জেল। এই অবস্থা বেশীদিন টিকবে না। 

সমাবেশে অন্য বক্তারা অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে ইতোমধ্যে যেসব নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়েছে তাদের দ- প্রত্যাহার ও ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে বর্তমান সংকট নিরসনের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে একটি ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করে সমঝোতায় পৌঁছার আহবান জানান।

তারা আরো বলেন, ৪২ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত অপরাধের দায়ভার পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এবং সেসময় যারা দেশটির পরিচালনায় নিয়োজিত ছিলেন সেসব বেসামরিক লোকদের। স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশ সরকার চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ভারতের মধ্যস্থতায় ১৯৭৪ সালে মুক্তি দিয়েছে। দীর্ঘ চার দশক পর সরকার তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যার তীর ছুঁড়ে তাদেরকে ঘায়েল করতেই প্রহসনে বিচারের ব্যবস্থা করেছে।

তারা বলেন, দেশটির সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামী নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা শুরু করার পর সারা দেশে প্রতিবাদের যে ঝড় উঠেছে তা দমন করতে গিয়ে গত ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে ২ শতাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কয়েক হাজার লোক আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এবং অসংখ্য মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিনাবিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার চালিয়ে জোর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে। তারা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে। বক্তারা স্বাধীন বিচার কমিশন গঠণ করে এসব হত্যার তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জাতিসংঘের তত্বাবধানে বসনিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরা লিওনের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুরূপ নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠণ করে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিচার করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহবান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে মাওলানা জুলকিফুল চৌধুরী। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম ও নতুন প্রজন্মের আকিব আজাদের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ-এইচআরডিবির প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী বিউটি আকন্দ, মসজিদ বায়তুশ শরফের ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ, হিলসাইড ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ ভূঁইয়া, দারুল কোরআন ওয়া সুন্নাহ’র ইমাম মুফতি রুহুল আমিন প্রমুখ। সমাবেশে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপর লিখিত সুপারিশ পাঠ করেন নতুন প্রজন্মের শারমিন ও ইশরাত রুমা।

No comments

Powered by Blogger.