ম্যাজিক দেখাতে পারেন দু’নেত্রী by কাজল ঘোষ

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র একটি স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠান। আলোকিত মানুষ গড়া যার কাজ। গত তিন দশকেরও বেশি সময় দেশজুড়ে চলছে তাদের বইপড়া আন্দোলন। কিশোর যুবাদের মননের বিকাশে অবিরত কাজ করে চলেছে। টানা পথ চলায় প্রতিষ্ঠানটি তার নৈর্ব্যাক্তিক মান বজায় রাখতে পেরেছে।
দেশের নানা টানাপড়েনে এ থেকে বিবৃতি আসেনা। দেশের কোন সঙ্কটে এখান থেকে মিছিল হয় না। এমন নানা অনুযোগ, নানা প্রশ্ন হজম করতে হয় এখানকার কর্মীদের। শত প্রতিকূলতাতেও, সমালোচনাতেও শুধু আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ-এর নীতির কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। যদিও রাজনীতির বাইরে এদেশে কিছুই নেই। তবু ঢালাও রাজনীতি আমাদের সবকিছু বিভক্ত করেছে। একমাত্র সায়ীদ স্যারই ব্যতিক্রম। যিনি সস্তা কিছুর কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেননি। জনপ্রিয় এই শিক্ষাবিদ বই দিয়েই সমাজ বদলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মূল কথায় ফিরি। ছাত্র সুবাদে সেখানে কিছুকাল কাটাতে হয়েছে। এক বিকেলে কেন্দ্রের ছাদ বারান্দায় রাজনীতির চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছিল একদল তরুণ। যারা ঘুণে ধরা সমাজ বদলে দিতে চায়। ধ্বংসাত্মক রাজনীতির মুখে ছাই চাপা দিতে চায়। দূর থেকে স্যার (আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ) তারুণ্যের এই অতি বিপ্লবী চিন্তা মনাযোগ নিয়ে শ্রবণ শেষে বললেন, তোমরা দু’নেত্রীকে স্বৈরতন্ত্রী বলো, একনায়কতন্ত্রী বলো কিন্তু একটাবার ভেবে দেখোতো এই দু’জন নেই- তাহলে কি হবে পরিস্থিতি। আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকা লোকগুলো ক্ষমতার লোভে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেনা? স্যারের অনেক আগে বলা কথা আজ এতদিন পর নতুন আলোয় হাজির হলো মনের আয়নায়। নববর্ষের সকালে। পঞ্জিকাগুলোর ২০১৪ সালের বাংলাদেশ নিয়ে লেখা অংশে একরাশ হতাশার ছবি। সঙ্কট নিয়ে নানা কথা। অস্থিরতা বাড়বে। একটি পঞ্জিকার হুবহু লাইনগুলো ছিল এমনই- মেষ রাশির প্রভাবে বাংলাদেশে বর্তমান বছরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকবে না। আন্দোলন প্রতি-আন্দোলনে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সরকারের সমর্থন হ্রাস পাবে। বেকারত্ব ও নিত্যপ্রয়াজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আন্দোলন জোরদার হবে। ধর্মীয় মৌলাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। দেশের বিভিন্নস্থানে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি ঘটনা ঘটতে পারে। সরকার কঠোর হস্তে এর মোকাবিলা করার চেষ্টা করবে। এভাবেই এগুবে আগামীর বাংলাদেশ। সব ছাপিয়ে আমাদের প্রত্যাশা শান্তি ও স্বস্তির। আর ষোলকোটির এই দেশে তা দিতে পারেন দু’নেত্রী। তাদের এক সকালের শুভ চিন্তাই জাগাতে পারে নতুন বাংলাদেশকে। এটাই যেন আমাদের অমোঘ নিয়তির চাওয়া। সকল দুঃখ জরা আর গ্লানিতে আমাদের সুসংবাদ দু’নেত্রীর নববর্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়। শুভ কামনা। আমাদের অনেক আলোচনার একটি বা বড় সংবাদ দু’নেত্রীর কোথাও দেখা হচ্ছে কিনা? তাদের মধ্যে কোনও কথা হলো কিনা? আমাদের মিডিয়াওয়ালারা উন্মুখ থাকেন তাদের সংবাদ কভারে। এই সেদিন প্রেসিডেন্ট হাউসে, বঙ্গভবনে শত শোকেও সবাই অপেক্ষা করেছে, পথ চেয়েছে এই বুঝি তাদের কথা হবে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের মৃত্যু ছাপিয়ে এটি অনেক বড় খবর। দু’নেত্রীও এটি ভালো করেই জানেন। তাই বলেই দু’জনেই উল্টো রথের সারথি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা। অন্যজন বিরোধীদলীয় নেত্রী। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাদের দিয়েই গত দু’দশকের বাংলাদেশ পথ চলছে। একজন তত্ত্বাবধায়ক আদায় করে ছেড়েছেন। তখন অন্যজন বলেছেন এটা শিশু ও পাগল ছাড়া হতে পারে না। এখন উল্টোটাই করছেন অন্যজন। ফরমুলা একই। আশঙ্কাও কি একই হবে? এটাই বড় প্রশ্ন।

শুক্রবার ও শনিবার পরপর দু’দিন টিআইবি ও সিপিডি’র প্রস্তাবনা কার কাছে- মোটাদাগে রাজনীতিকদের কথা বলা হলেও বাস্তবায়নের তাগিদতো দু’নেত্রীর কাছেই। এরশাদ চিঠি লিখেছেন, প্রতিদিনই সংলাপের কথা বলছেন দেশ-বিদেশের বন্ধুরা। তাতো দু’নেত্রীকে উদ্দেশ্য করেই। নববর্ষে দু’নেত্রীও দেশবাসীর শুভ চান। আনন্দে উদ্বেল হন। নিশ্চয়ই উদ্বেগেও অস্থির হন। দু’নেত্রীর ম্যাজিকইতো বদলে দিতে পারে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। তাদের একটি সিদ্ধান্তই দেশে আনতে পারে সুবাতাস।

No comments

Powered by Blogger.