আমিনুল হত্যা- প্রধানমন্ত্রীকে আবারও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চিঠি

পোশাক শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী শ্রমিক নেতা আমিনুলের হত্যা রহস্য উদঘাটনে তাগাদা দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবারও চিঠি লিখেছে মানবাধিকার রক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
‘লেটার টু প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা রিগার্ডিং দ্য কিলিং অব আমিনুল ইসলাম’ শিরোনামে সংস্থার এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসনের লেখা চিঠিটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে ১৭ই এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর পুরাতন সংসদ ভবন অফিসের ঠিকানায় পাঠানো চিঠিতে ফিল রবার্টসন লিখেছেন, আমিনুল হত্যাকাণ্ডের পরপরই ২০১২ সালের ১১ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়ে এব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ওই চিঠিতে নির্যাতনের মাধ্যমে আমিনুলকে হত্যা এবং এ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সম্পৃক্ততার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। এতে আরও বলা হয়েছে, গত ৫ই এপ্রিল, আমিনুল মারা যাওয়ার পর এক বছর পার হয়ে গেলেও এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পরিচালিত তদন্তের অগ্রগতি খুব সামান্যই দেখা গেছে। গত বছরের ৪ঠা এপ্রিল আমিনুলের নিখোঁজ হওয়ার পর, তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন কিনা- এ ব্যাপারে জানতে আশুলিয়া থানায় ফোন করে আমিনুলের সংগঠন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউ)। বেশ কয়েকবার ফোনের পর থানা জানায়, আমিনুলের ব্যাপারে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই। এরপর আমিনুলের খোঁজে পর্যায়ক্রমে এনএসআই, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এবং বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করে বিসিডব্লিউ। এদিকে আমিনুল নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর ৬ই এপ্রিল এ ব্যাপারে ডায়েরি গ্রহণ করে আশুলিয়া থানা। নিখোঁজ আমিনুলের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ৮ই এপ্রিল। স্থানীয় একটি পত্রিকায় আমিনুলের ছবি ছাপিয়ে বলা হয় দু’দিন আগে (ওই দিন থেকে) টাঙ্গাইল জেলার একটি স্থানে এই ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে। স্থানটি আমিনুলের কর্মস্থল বাইপাইল থেকে ১শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমিনুলের স্ত্রী হোসনে আরা পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তার স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। আমিনুলের লাশে পাওয়া যায় নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন। ঘাটাইলের পুলিশ প্রধান মাহবুবুল হক জানান, আমিনুলকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। এছাড়া ধারালো কোন বস্তু দিয়ে ছিদ্র করারও চিহ্ন পাওয়া গেছে তার শরীরে। পাশাপাশি তার সবগুলো আঙুল ছিলো ভাঙা। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে আমিনুলকে হত্যা করে। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশটি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের ওই স্থানে ফেলে রেখে যায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, এর আগেও আমিনুল ও অন্যান্য শ্রমিক অধিকার আন্দোলন কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ৩রা মে, ২০১১ এবং আগস্ট ১০, ২০১০ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সংস্থার পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, আমিনুলের পরিবারের দাবির মুখে মামলার তদন্ত কার্যক্রম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করায় সংস্থা প্রথমে সন্তোষ প্রকাশ করলেও এখন দেখা যাচ্ছে মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে খুবই কম। এ বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পাশাপাশি শ্রমিক নেতা বাবুল আখতার ও কল্পনা আখতারের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দায়ের হওয়া মামলা পুনঃবিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিতেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া পদক্ষেপ জানতে পারলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আনন্দিত হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পাঠানো এ চিঠির অনুলিপি আরও যাদের পাঠানো হয়েছে, তারা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, বেপজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মমিনুর রহমান।

No comments

Powered by Blogger.