ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ

তৎকালীন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ব্যারাকটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রাজনীতি সচেতন ছাত্রদের মিলনকেন্দ্র। এই ব্যারাককেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন।
সাধারণ ছাত্রদের বাসস্থান মেডিক্যাল ব্যারাক থেকেই গড়ে ওঠে আন্দোলনের মঞ্চ। ১৯৪৮ সালে বানানো ব্যারাকের অবস্থান ছিল ফুলার রোডের শেষ প্রানত্ম থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজের বর্তমান বহির্বিভাগের জায়গায়। ১৭টি ব্যারাকের সব ছাদ ছিল গজারি কাঠের ফ্রেমে বাঁধা। পাকা মেঝে আর ইট-বাঁশের মিশেলে তৈরি ব্যারাকগুলো ছিল আশপাশের সব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের কাছে নিরাপদ আড্ডাস্থল। ১৯৫০ সালে এখানে টিনের ছাদ হয়। তৈরি করা হয় নতুন তিনটি ব্যারাক। পুরো ব্যারাক প্রাঙ্গণের চারপাশ ছিল কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মেডিক্যালের ছাত্রদের আবাসস্থল এই মেডিক্যাল ব্যারাকেই দানা বাঁধতে থাকে আন্দোলন। নেতৃত্বে ছিল তৎকালীন মেডিক্যাল সংসদ।
আক্রানত্ম ব্যারাক : ২০ তারিখ বিকেল থেকেই মেডিক্যাল ব্যারাকের রম্নমে রম্নমে লাল বর্ণমালায় পোস্টার লেখার ধুম চলছিল। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কাজী জিয়া হাসান, নূরম্নল ইসলাম, বদরম্নল আলম। নতুন ছাত্রদের মধ্যে ফজলে রাব্বী, জাকির হোসেন, মোশারফুর রহমানও হাত লাল করে ফেলে ছিলেন লিখতে লিখতে। ২১ ফেব্রম্নয়ারি সকালে মেডিক্যাল ব্যারাকের ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিা প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা। দফায় দফায় তাদের পুলিশের সঙ্গে সংর্ঘষ বাধে। বিকেল ৩টার দিকে আন্দেলনকে থামিয়ে দিতে পুলিশ মেডিক্যাল ব্যারাক ল্য করে গুলি করা শুরম্ন করে। ব্যারাকের মাঠে উপস্থিত ছাত্ররা তখন পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করছিল। গুলিবদ্ধ হলেন রফিক উদ্দিন, আবুল বরকত এবং আব্দুল জব্বার। রক্তে পবিত্র হয়ে উঠল ব্যারাকের মাঠ।
স্মৃতিসত্মম্ভ থেকে শহীদ মিনার : ঘটনার আকস্মিকতায় শোকে সত্মব্ধ মেডিক্যাল ব্যারাক। গোলাম মওলার ৩ নম্বর ব্যারাকের ৬ নম্বর রম্নমের সামনে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আলোচনা চলছিল। হঠাৎই একজন প্রসত্মাব দিলেন_শহীদদের জন্য আমরা স্মৃতিসত্মম্ভ নির্মাণ করি না কেন? সবাই একবাক্যে একথা সমর্থন করলেন। স্মৃতিসত্মম্ভের নকশা করতে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হলো ডা. বদরম্নল আলমকে। সবার মতামত নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা শেষে তিনি এঁকে ফেললেন স্মৃতিসত্মম্ভের নকশা। ২৩ তারিখ রাতেই শুরম্ন হলো সত্মম্ভ নির্মাণের কাজ।
ঠিকাদার পিয়ারম্ন সর্দারকে বলতেই তিনি ক্যাম্পাস ভবন নির্মাণের জন্য মজুদ থাকা বালু-সিমেন্টের গুদামের চাবি দিয়ে দিলেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারারাত গাঁইতি-শাবল হাতে ছাত্রদের নির্মাণ কাজ চলতে থাকল। ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন আহমেদ সারারাত ধরে নির্মাণকাজ তদারকি করলেন এবং ২৪ তারিখ খুব ভোরে তৈরি হলো শহীদ স্মৃতিসত্মম্ভ। ওইদিন সকালেই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল স্মৃতিসত্মম্ভের কথা। দলে দলে মানুষ এল স্মৃতিসত্মম্ভ দেখার জন্য। এসব মানুষেরই কেউ একজন শহীদ স্মৃতিসত্মম্ভকে ডাকলেন 'শহীদ মিনার' নামে। তারপর থেকেই ভাষা শহীদদের স্মৃতির স্মারকের নাম 'শহীদ মিনার।'

No comments

Powered by Blogger.