শতাব্দীর প্রথম টিনএজ প্রজন্ম- ‘এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান।’

যৌবনের পূজারী কবি কিশোর সুকান্ত ভট্টাচার্য নতুনের আগমনের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন। তাই সবাই ‘কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও তিনি কিন্তু অকপটে নতুনকে বরণ করে নিয়েছেন তাঁর কবিতার পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে ও প্রত্যয়দীপ্ত স¦ীকৃতিও দিয়েছেন, তরুণরাই সব।
একবিংশ শতাব্দীর বারোটি বছর কেটে গেছে।
চলছে ২০১৩। নববর্ষের আমেজ এখনও মিইয়ে যায়নি। বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশই বিগত শতাব্দীর লোক। নতুন শতাব্দীতে যারা জন্মেছে তাদের সংখ্যা কম হলেও একেবারে নগণ্য নয়। সংখ্যার দিক থেকে তারা কম হলেও সম্ভাবনার দিক থেকে তারাই সব। ভবিষ্যতের কাণ্ডারি তারা।
খুশির কথা হলো ২০০০ সালে অর্থাৎ শতাব্দীর পহেলা বছর যারা জন্মাল তারা কিন্তু অনেক ভগ্যবান। কেন? কি এমন হলো যে তারা ভাগ্যবান? ভাগ্যবান নানা করণে! তাদের জন্য সুখবর, তারা এ বছরই টিনএজারের খাতায় নাম লেখাল। তারাই শতাব্দীর প্রথম টিনএজ প্রজন্ম।
টুয়েলভ পেরিয়ে থার্টিনে পা রাখল এই প্রজন্মটি। শিশু পর্যায় থেকে তারা উত্তীর্ণ হলো কৈশোরে। কৈশোরের মেঘের আড়ালেই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে সুষুপ্ত যৌবনের সূর্য। তার উদয় হলো বলে!
যৌবনের বন্দনা করছেন সবাই। যৌবন নিয়ে কবিতা-গান লেখেননি এমন কবি-সাহিত্যিক নেই বললেই চলে। কি বুদ্ধিজীবী, কি রাজনীতিক, কি অর্থনীতিবিদ, কি নীতিবিদ, কি কবি-সাহিত্যিক সকলেই নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছেন যৌবনের অমিত শক্তিকে। বন্দনা করেছেন তাকে। কিন্তু কৈশোর নিয়ে কি কারও কোন মাতামাতি নেই। তা থাকবে না কেন। আছে অবশ্যই! দুরন্ত কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে মানুষ সারাটি জীবন কাটায়। নস্টালজিয়ায় সকলের বড় একটা জায়গা জুড়ে থাকে কৈশোরের ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা, দুরন্তপনা, দুষ্টুমি।
কৈশোরেও যে মানুষ দুঃসাহসিক কত কিছু করে তার শেষ নেই। এখানে কেবল দুটো ঘটনার কথা জানাব।
একটি তিন দিন আগের অর্থাৎ শনিবারের বিবিসি বাংলার রাত সাড়ে ১০ টার পরিবেশনা পরিক্রমায় শোনা ইতালির দুঃসাহসিক এক কিশোরের কথা। কিশোরের বয়স সবে তেরো। ইতালির কোন এক দম্পতি ওকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পোল্যান্ড থেকে দত্তক নিয়েছেন ইতালির ওই দম্পতি। সম্ভবত ওই কিশোরটির মন টিকছিল না ইতালির ওই মা-বাবার কাছে। উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল প্রকৃত মা-বাবার কাছে যাওয়ার। তা ওই কিশোরটি যা করল তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য, ভয়ঙ্করও বটে। কিশোরটি নিজে মাচের্নডিস ব্রান্ডের গাড়ি ড্রাইভ করে রওনা দিল পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। কিশোরটি পোল্যান্ডে পৌঁছতে পারেনি। জার্মানির সীমান্তে এসে নিরাপত্তা কর্মীদের নজরে পড়ে যায় সে। ইতোমধ্যে ও কিন্তু দুটি দেশ পাড়ি দিয়ে ফেলেছিল। বয়সের বিবেচনায় কিশোরটির এহেন কাজ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এক ঘটনা এটি। সত্যি দুঃসাহসিক!
দ্বিতীয় ঘটনাটি অবাক করার মতো হলেও বেশ আগ্রহ উদ্দীপক। ঘটনাটি হলো এক ১২ বছরের শিশু ফেসবুক ব্যবহারে বাধা পেয়ে নিজেই একটা শিশুবান্ধব সামাজিক যোগাযোগ সাইট খুলে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাবাসী ওই অমিত সম্ভাবনাময় শিশুটির নাম জাচারি মার্কস। ওর যখন এগারো বছর তখন ও ফেসবুকে একটি আইডি খুলে বসে। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে আড্ডা দেয়া ভীষণ আগ্রহ থেকেই এটা করেছিল ও। কিন্তু নিয়ম আছে ১৩ বছর না হলে ফেসবুক পরিবারের সদস্য হওয়া যাবে না। খোলা যাবে না ফেসবুক আইডি। তারপরও নিজের বয়স ভাড়িয়ে ও খুলে ফেলল একটা ফেসবুক আইডি। একপর্যায়ে বাবার হাতে ধরা পড়ে গেল সে। ভর্ৎসনাও শুনতে হয়েছে বাবার কাছ থেকে। এক পর্যায়ে জাচারি মার্কস বন্ধ করে দেয় ওর ফেসবুক আইডিটি। শিশুদের জন্য যে সব নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে তাও ভাল লাগে না ওর। তাই ও নিজেই খুলে বসল একটা সামাজিক যোগাযোগ সাইট। নাম দিল গ্রোম সোশাল। বাবা প্রতিভা বুঝতে পেরে ছেলের প্রতিষ্ঠিত সাইটটি একটি কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করিয়ে দেন। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০০০। এটা গত বছরের মে মাসের ঘটনা।
২০০০ সালব্যাপী যে প্রজন্মটি জন্মাল তারাই একে একে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে শতাব্দীর প্রথম টিনএজার প্রজন্ম। বছরজুড়ে চলবে এই অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া।
তাদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা ব্যাপার কিন্তু ঘটে গেছে, যেটাকে বৈপ্লবিকও বলা চলে। তা হলো বিশ্ব উন্নত ও সমৃদ্ধ এক যোগাযোগ প্রযুক্তির পথে পরিক্রমণ শুরু করেছে। বর্তমান যুগকে তথ্য-প্রযুক্তির যুগ বলা হয়; মুঠোফোন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জয়জয়কার অবস্থা। আর এই প্রজন্মের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার, গুগল অনুসন্ধান, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের ব্যাপক ব্যবহার ও মুঠোফোনের ওপর নির্ভরশীলতার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। এদের একযুগ আগেও অর্থাৎ গত শতকের নব্বইয়ের দশকে যাঁরা জন্মেছেন তাঁদের সঙ্গে এই প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টতা কিন্তু এত ঘনিষ্ঠ ছিল না। বর্তমান অনাগত এই টিনএজার প্রজন্মটি জন্মেই যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর যেন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই এদেরই সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল প্রজন্ম বলা চলে। গেমস খেলবে তো কম্পিউটারে বসে পড়ো। গতকালের টিচারের দেয়া এসাইনমেন্ট ভুলে গেছ তো পাপি বা মাম্মির মুঠোফোন দিয়ে বন্ধুর বাসায় একটা ফোন কল। ব্যাস! জেনে গেলাম স্কুলের হোমওয়ার্ক। ই-বুকের প্রচলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে গেছে। বই পড়বে তো ইন্টারনেটের সামনে বসে পড়ো, ভূরি ভূরি বই। আজ সবকিছুই তাদের হাতের নাগালে । এই উন্নত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগেই এই টিনএজারদের বেড়ে ওঠা। ডিপ্রজন্মের পক্ষ থেকে এই প্রজন্মটির জন্য রইল অনেক অনেক শুভাকাক্সক্ষা। মসৃণ হোক তাদের পথ চলা। সাফল্য হোক তাদের নিত্যসঙ্গী।
ডিপ্রজন্ম ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.