রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়-কেনাকাটায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে

গতকাল রাশিয়া সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। কোনো দেশের সরকারপ্রধান অন্য কোনো দেশ সফরে গেলে সেখানে নানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের সঙ্গেও রাশিয়ার বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
রাশিয়া বাংলাদেশের পুরনো ও পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার মতো শক্তি বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। সেই রাশিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিনটি চুক্তি ও ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। সেগুলো রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ও ঢাকায় পরমাণু শক্তিবিষয়ক তথ্যকেন্দ্র সম্পর্কিত। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক পুরনো ও দৃঢ় হওয়া সত্ত্বেও সমরাস্ত্র ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলে আলোচনা রয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে মিগ বিমান কেনার পর বিষয়টি নিয়ে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। তখনকার মিগ বিমান কেনা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তেমনই সমরাস্ত্র কেনা নিয়ে নতুন প্রশ্ন দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয় যে দেশের শতকরা ৩১ ভাগ মানুষ যেখানে এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যেখানে এখনো মাথাপিছু গড় আয় মাত্র ৮০০ ডলার- সেই দেশে ঋণের টাকায় আধুনিক সমরাস্ত্র কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মানতে হবে, এখনো বাংলাদেশের বড় সমস্যা দারিদ্র্য, শুধু অর্থের অভাবে পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, সে দেশে আট হাজার কোটি টাকা ঋণে সমরাস্ত্র কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। উপরন্তু দেশের কোনো প্রতিরক্ষানীতি যখন নেই, তখন অস্ত্র কেনার প্রয়োজনীয়তা কিভাবে নির্ণয় করা হলো, এমন প্রশ্নও অসংগত নয়।
একই সঙ্গে অবশ্য এ কথাও মানতে হবে, আমাদের দেশের সেনাবাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আগামী দিনের সক্ষমতায় সেনাবাহিনীকে নিয়ে যেতে আধুনিক সমরাস্ত্রের সঙ্গে সেনাবাহিনীর পরিচয় জরুরি। শুধু তাই নয়, সমরকৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করা অবশ্যই জরুরি।
রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রথম বিবেচনার বিষয়টি হচ্ছে প্রয়োজনীয়তা ও অগ্রাধিকার। যে অস্ত্র কেনা হচ্ছে তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? সেটা অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে কি না! সে প্রয়োজনীয়তা কিভাবে নির্ধারিত হয়েছে- সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। যে প্রয়োজনেই সমরাস্ত্র কেনা হোক না কেন, তাতে আপত্তির কিছু নেই। কারণ পেশাগত দক্ষতার দিকটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিদিন আধুনিক হয়ে উঠতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সক্ষমতার প্রতিযোগিতায় সমান হতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, অস্ত্র কেনার যে প্রক্রিয়া তা স্বচ্ছ কি না দেখতে হবে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন একটি প্রতিরক্ষানীতি। একটি সঠিক প্রতিরক্ষানীতি না থাকায় কেনাকাটার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

No comments

Powered by Blogger.