নতুন উচ্চতায় মেসির বার্সা

দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রতিপক্ষ। পায়ে লুটিয়ে পড়ছে রেকর্ড, হাতছানি দিচ্ছে আরও বেশি কিছু। লা লিগায় চলছেই বার্সেলোনার স্বপ্নযাত্রা! পরশু মালাগাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কাতালানরা নিজেদের নিয়ে গেছে নতুন এক উচ্চতায়।
লা লিগায় সবচেয়ে ভালো শুরুর রেকর্ডটা তো প্রতি ম্যাচেই নতুন করে গড়ছে টিটো ভিলানোভার দল। এবার গড়ে ফেলল লিগের অর্ধেক পথে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়ার রেকর্ড। ২০১০-১১ মৌসুমে ১৯ ম্যাচ শেষে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিল পেপ গার্দিওলার দল। টিটো ভিলানোভা ছাড়িয়ে গেলেন পূর্বসূরিকে। পরশুর জয়ে ১৯ ম্যাচে সম্ভাব্য ৫৭ পয়েন্টের মধ্যে বার্সার অর্জন ৫৫! দুটি পয়েন্ট হারাতে হয়েছে শুধু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। গত অক্টোবরে ন্যু ক্যাম্পে ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে। পরশুর আরেক কীর্তিতে অবশ্য নেপথ্য কৃতিত্ব গার্দিওলা-ভিলানোভা দুজনেরই। লা লিগায় টানা ৩৭ ম্যাচে গোল করার রেকর্ড গড়ল বার্সা।
বার্সার রেকর্ডের রাত প্রতীকী হয়ে থাকল লিওনেল মেসির আরেকটি অসাধারণ পারফরম্যান্সে। দলের প্রথম গোলটি করেছেন, অবদান আছে পরের দুটিতেও। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারকে হাতছানি দিচ্ছে দারুণ এক রেকর্ড। টানা নয় ম্যাচে গোল করলেন খুদে জাদুকর, পরের ম্যাচে গোল করলেই ছুঁয়ে ফেলবেন রোনালদোকে। বার্সার জার্সি গায়েই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার লা লিগায় টানা ১০ ম্যাচে গোলের রেকর্ড গড়েছিলেন ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে।
মালাগার মাঠ লা রোজালেদায় প্রথম গোলের জন্য বার্সাকে অপেক্ষা করতে হয় ২৭ মিনিট। এই মৌসুমে কেন লিগে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে মালাগা, সেটাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন গোলকিপার উইলি ক্যাবালেরো। ৭ মিনিটেই বিপজ্জনক জায়গায় মেসির পা থেকে বল কেড়ে নেন ছোঁ মেরে। পেদ্রোর আরেকটি শটও ফিরিয়েছেন দারুণ দক্ষতায়। কিন্তু তাঁকে হার মানতে হলো সতীর্থের ছেলেমানুষি ভুলে। ইগানাসিও কামাচোর আত্মঘাতী এক ব্যাক পাস ধরে আগুয়ান ক্যাবালেরোকে পাশ কাটিয়ে বল জালে জড়ান মেসি। লিগে ২৮ গোল নিয়ে এখনই প্রায় সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিকটতম দূরত্বের ফ্যালকাও (১৮), রোনালদোও (১৬) আসলে অনেক পেছনে। পেছনে নয়, মেসি হয়তো তাই তাকাচ্ছেন সামনের দিকে। গত মৌসুমেই লা লিগায় ৫০ গোলের রেকর্ডের দিকে।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫ মিনিটে মেসির নিখুঁত চিপ বাঁ পায়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ে জালে জড়ান সেস ফ্যাব্রিগাস। মেসির সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করতে করতেই বদলি থিয়াগো আলকানতারার বাঁ পায়ের শট বার্সাকে এনে দেয় তৃতীয় গোল। মেসির দেশের উইঙ্গার ডিয়েগো বুয়োনানোত্তের ফ্রি-কিকে মালাগার একমাত্র গোল ৮৯ মিনিটে।
লিগের মাঝপথেই হয়ে গেছে ৫৫ পয়েন্ট। গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের ১০০ পয়েন্টের রেকর্ড ভাঙার আশা করতেই পারে বার্সা। তবে বাস্তবতটা ভালোই বোঝেন ভিলানোভা, ‘এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, অবিশ্বাস্য। তবে লিগের দ্বিতীয় ভাগে প্রথম ভাগের পুনরাবৃত্তি কঠিন হবে। কারণ চ্যাম্পিয়নস লিগ ও স্প্যানিশ কাপের কথাও আমাদের ভাবতে হবে।’ চিরশত্রুদের চেয়ে ১৮ আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকোর চেয়ে ১১ পয়েন্ট এগিয়ে। তবু উচ্ছ্বাসে ভাসছেন না ইনিয়েস্তাও, ‘প্রথম ভাগটা কেটেছে প্রায় নিখুঁত। তবে এই সংখ্যাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয় কেবল মৌসুম শেষেও। মে মাসেও আমরা এমন ফর্মে থাকতে চাই।’
পরশুর হারে মালাগা নেমে গেছে পাঁচে। লেভান্তের মাঠে ২-০ গোলের জয়ে চারে উঠে এসেছে রিয়াল বেটিস। টিয়াগো ও ফ্যালকাওয়ের গোলে জারাগোজাকে হারিয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ পেয়েছে ঘরের মাঠে ১০ ম্যাচে দশম জয়। তিনে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ পয়েন্ট। এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.