বিএনপি কৌশলগত কারণেই কঠোর কর্মসূচি দেয়নি by মোশাররফ বাবলু

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি না দেওয়ায় খোদ বিএনপির মধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। যদিও দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, এ ঘোষিত কর্মসূচিকে শিথিল কিংবা নরম বললে ভুল হবে।


ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবেই সারা দেশে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি, জনসংযোগ, বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কৌশলগত কারণেই আপাতত কঠোর কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি আদায় করতে বিএনপি ঈদ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকারকে। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ঈদের পর সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তাতে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি থাকবে। বিরোধীদলীয় নেতার ওই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল। বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। সরকারের এ কঠোর নীতির মুখে ২৬ আগস্ট বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং পরদিন ২৭ আগস্ট ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। পরপর দুই দিনের বৈঠকে কঠোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। জনসংযোগ ও সভা-সমাবেশের কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়ে ঈদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে বিএনপি।
দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে- এমন আভাস দিয়েও নানা কারণে বিএনপি সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। স্থায়ী কমিটি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন খালেদা জিয়া। শীর্ষ নেতারা মনে করেন, এই মুহূর্তে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হলেও তা সফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একদিকে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুম চলছে। সামনে কোরবানির ঈদ, দুর্গাপূজা এবং নভেম্বরে সারা দেশে প্রাইমারি স্কুল ও জুনিয়র স্কুল ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। তা ছাড়া কঠোর কর্মসূচি দিলে সরকারও বসে থাকবে না। হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও সচিবালয়ে বোমা হামলার মতো ঘটনায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জেলে পোরা হবে। এমনকি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেঁসে যেতে পারেন।
সূত্র মতে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও এখনই কঠোর আন্দোলনে যাওয়া সঠিক হবে বলে মনে করছেন না।
কারণ, সরকারের মেয়াদ এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি। সব দিক বিবেচনা না করে আগাম আন্দোলন করতে গিয়ে কিছুটা ভুলও করে বসেছেন নেতারা। কারণ আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার পর দলের নেতা-কর্মীরা পুলিশি নির্যাতনের মুখে মাঠে না থাকলে আন্দোলন সফল হবে না। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বিএনপি কঠোর আন্দোলন শুরু করলেও তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। মামলা হওয়ায় দলের সিনিয়র নেতাদের আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে চিন্তা করেছেন নীতিনির্ধারকরা। এ জন্যই বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া কৌশলগত কারণে কঠোর কর্মসূচি দেননি বলে সূত্র জানায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেকোনো আন্দোলন সফল হয় জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে। তাই আমরা এমন কোনো কর্মসূচি দিইনি, যাতে জনগণের দুর্ভোগ হয়, দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।' তিনি বলেন, 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে সারা দেশে জনমত আরো শক্তিশালী করতেই এই কর্মসূচি। অনেকে বলছেন, আমরা ঢিলেঢালা কর্মসূচি দিয়েছি; কিন্তু এটা ঠিক নয়। আন্দোলনকে ধাপে ধাপে বেগবান করতে হয়।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দিন-তারিখ ঠিক করে আন্দোলনের কর্মসূচি হয় না। সারা দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ঘরে-বাইরে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এমনিতেই আন্দোলন হবে। তিনি বলেন, আন্দোলনের কৌশল অবলম্বন করতে জনসংযোগের মতো কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এটাকে নরম কর্মসূচি বলে খুশি হওয়ার কিছু নেই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে ধাপে ধাপে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকার ফ্যাসিস্ট সরকার। এ সরকারের বিরুদ্ধে দিন-তারিখ দিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে এমন আন্দোলন হবে, সেই আন্দোলনের মুখে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তবে আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করার মতো কর্মসূচি বিএনপি কখনো দেবে না।

No comments

Powered by Blogger.