মনস্পতি মুজতবা শৈলী ॥ মন ও মননের বোধিবৃক্ষ- জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি by আব্দুল মতিন

মুজতবা আলীর সমসাময়িক লেখক, অন্নদা শংকর রায়, শিবরাম চক্রবর্তী, সতীনাথ ভাদুড়ী প্রমুখকে তিনি বড়মাপের লেখক হিসেবে অভিহিত করেছেন। অনুজ লেখকদের মধ্যে শংকর, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখকে তিনি শক্তিশালী লেখক মনে করতেন।


মুজতবা আলীর হৃদয়গ্রাহী লেখনী পাঠককুলকে আলোড়িত ও আন্দোলিত করে অহরহ-প্রতিনিয়ত-প্রতিক্ষণে। কৃষ্ণপক্ষ; অসুন্দরের বিরুদ্ধে মুজতবা সাহিত্যের বীর রস গর্জে ওঠে আমাদের পথচলার দিশারী হয়ে। মুজতবা সাহিত্য মানুষের বাক-স্বাধীনতার রক্ষাকবচ আমাদের চেতনার সবুজ স্বপ্ন! মুজতবা সাহিত্য নির্যাতিত-নিপীড়িত-অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন এবং নিরাপদ আশ্রয়। স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার মুক্ত উদার আকাশ, মানুষের নিঃশ্বাস নেয়ার বিশুদ্ধ বাতাস। বিজ্ঞান মনস্ক মুক্তমনা মানুষের মন ও মননের প্রতীক মুজতবা আলী বাংলা সাহিত্যের প্রমিথিউস-রাজা ধীরাজ-বিয়োগান্তক-এক এলিজি।
মুজতবা আলী ও তাঁর সহপাঠী বন্ধু বাচ্চু ছিলেন বিশ্বভারতীয় প্রথম ব্যাচের স্নাতক ডিগ্রীধারী। যাদের সাহচর্য ও সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন মুজতবা আলী তারা হলেন পৃথিবী খ্যাত যশস্বী প্রথিতযশা পণ্ডিত ফরাসীর সিলভী লেভী, বেনেরো, জার্মানির মরিস, কলিন্স, স্টেলা, ক্রামবিশ, রুশের বাগদানভ, ইতালীর ফরমিকি ও টুচ্চা, বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন প্রমুখ। পণ্ডিত মশাই গল্পের চালচিত্র বিদগ্ধ পাঠক সমাজের হৎপিণ্ডকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। লাট সাহেবের স্কুল পরিদর্শন উপলক্ষে যে পণ্ডিত মশাইকে জীবনে প্রথম জামা গায়ে দিতে হয়েছিল। লাট সাহেবের প্রিয় কুকুরটি ছিল পা কাটা। সেই কুকুরের রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়, তার থেকে কম খরচে তাকে আটজনের একটি সংসার কি করে চালাতে হয়।
মুজতবা আলী তাঁর সন্তানের কাছে যখন চিঠি লিখতেন তাতে বাক্সময় হয়ে ফুটে উঠত সাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব। একটি চিঠির অংশবিশেষ তুলে ধরছি “আমার একটি বইয়ের নাম দেশে বিদেশে বাংলায় ইডিয়ম দেশে বিদেশে। অর্থাৎ এই বইয়েতে কিছুটা দেশের বর্ণনা পাবে। সে বই তাহলে বিয়াল্লিশ ভল্যুউম হবে। তার ফুরসৎ আমার নেই” এ চিঠিটি শৈল্পিক কলাকৈবল্যের এক প্রতিচ্ছবি। মুজতবা সাহিত্য জারক রসে ভরপুর। বীর রসের অপ্রতিরোধ্য ভ্যানগার্ড। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের এক গাঙচিল যিনি, মানবিক সুতোয় বোনা বর্ণালী আবরণের নাম মুজতবা শিল্প সম্ভার।
মুজতবা সাহিত্যের উর্বর জমিন কর্ষণপূর্বক পলল মৃত্তিকা চিরে সবুজের সমারোহে ঢেকে যাক বাক্সময় মাঠ। গোলায় উঠুক সোনালি সফল। এমন কৃষাণ হওয়ার সাধ জাগে প্রতিনিয়ত। কেউ কেউ মুজতবা আলীকে রম্য ও সৈয়দী স্টাইলের লেখক হিসেবে অভিহিত করেন, এমনতর ভাবনা মুজতবা সাহিত্য ও মুজতবা আলীকে খণ্ডিত করার শামিলের নামান্তর বৈ কিছু নয়। মুজতবা সাহিত্যের কি রূপ। কি বিভা, সেই শুধু দেখতে পায় মাছির মতো যার অজস্র চোখ আছে। মুজতবা সাহিত্যের রূপকে চর্মচক্ষু দিয়ে নয় অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হয়। অনুসন্ধিৎসু জিজ্ঞাসায় দৃশ্যমান হয়, মুজতবা সাহিত্যের মসৃণ কমনীয় লাবণ্যের এক ফালি ষোলকলা রূপ। পূর্ণিমা চাঁদের বুকে যা দেয় কোপ। মুজতবা সাহিত্য কি হাল্কা, চটুল রসিকতা ও ভাঁড়ামিতে ভরপুর? লক্ষণীয় বিষয় আনন্দ-বেদনা মিলন-বিরহ-সঙ্কটে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে রম্যের ভেতর, কষ্ট জড়ানো যে সুখ, মানবিক মূলবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত সত্য মানুষের হৃদয়তন্ত্রীতে যে নাড়া ও সাড়া দেয় তা কি বিদগ্ধ পাঠককুলকে জানান দেয়নি। রম্যরসকে রূপক অর্থে উপস্থাপন করাটাই মুজতবা সাহিত্যের স্টাইল বা আদল। এ আদলে ভিন্ন মাত্রায় মুন্সিয়ানা পরিলক্ষিত হয়। মুন্সিয়ানা ও শৈলী একে অপরের পরিপূরক। মুজতবা আলীর এ মুন্সিয়ানাটাকে শিল্পমান-শিল্পগুণ বিচারে মহাকাল ধারণ করবে। বংশীয় উপাধি সৈয়দী ঢং মুজতবা সাহিত্যের পরিচায়ক ও মাপকাঠি নয়। শিল্পকর্মই শিল্পীর মাপকাঠির পরিচায়ক। যেমন-রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার শিল্পকর্ম গীতাঞ্জলি। ম্যাক্সিম গোর্কির সঙ্গে তার শিল্পকর্ম মা। লিওনার্দো ভিঞ্চির সঙ্গে তাঁর শিল্পকর্ম মোনালিসা। বংশীয় উপাধি সৈয়দ, খান বাহাদুর, রায় বাহাদুর, চৌধুরী ইত্যাদি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আরোপিত অর্জন। শিল্পকর্ম হচ্ছে সৃষ্টিশীল স্রষ্টার তার একার একান্ত স্বোপার্জিত অর্জন।
সহিত থেকে সাহিত্য। সহিত ও সাহিত্য অবিচ্ছেদ্য। মৃত্তিকা ফুঁড়ে উপ্ত বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম। অঙ্কুরোদগম থেকে চারা। চারা থেকে কিশলয়। কিশলয় থেকে বৃক্ষ। বৃক্ষ থেকে মহীরুহ। মৃত্তিকায় গ্রথিত মহীরুহের শেকড়কে কি সহজে উপড়ে ফেলানো সম্ভব। বৃক্ষ যেমন নানা প্রজাতির হয়। ফলদ-বনজ-ঔষধি। ফুল-ফল-বীজ-বৃক্ষ বংশ বিস্তারের উৎস। সব বৃক্ষ কি দুর্লভ দু®প্রাপ্য বিরল প্রজাতির শাল-সেগুন-মেহগনি-আকাশমণি-আগর প্রজাতির হয়? সব ফুল কি গন্ধরাজ-রজনীগন্ধা-গোলাপ। বৃক্ষকে যদি প্রশ্ন করা হয় তোমার পরিচয় কি। বৃক্ষ সহজেই উত্তর দেবে বর্ণ-গন্ধ-ফুল-ফল বীজই আমার আত্মপরিচয়। ফুলকে প্রশ্ন করলেও একই উত্তর আসবে। বৃক্ষরাজির মধ্যে বিরল প্রজাতির বৃক্ষ খুব কমই জন্মায় অনুরূপ মানুষের মধ্যে যারা জন্ম নেন তারা ক্ষণজন্মা।এরা সংখ্যাবাচক নয়, গুণবাচক প্রজাতি। শৌর্য-বীর্যের মিলনে মাহেন্দ্রক্ষণে যে মাটি ও মানুষের গর্ভে গুণবাচক শুদ্ধ মানুষ যারা জন্মগ্রহণ নয় জন্ম নেন, সেই মাটি ও মানুষ হয় তাদের কারণে ধন্য রতœগর্ভা। মুজতবা আলী শুধু বাংলা ভাষাভাষী বাঙালী জাতির নন, তিনি সারা বিশ্বের। তিনি বিশ্ব সাহিত্যের অহংকার ও অলঙ্কার।
মুজতবা আলীদেরকে অবহেলা-অবজ্ঞা-উপেক্ষা করলেও তাদেরকে অস্বীকার করার কোন জো নেই। এখানেই মুজতবা আলীর পরিচয় তিনি একজন বিশ্ব নাগরিক, বিশ্ব মানব। বিমাতাসুলভ আচরণ বৈষম্যের কারণে ব্রিটিশ-ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ কোন দেশই তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে যথাযথ মর্যাদা দেয়নি। মুজতবা আলী কি স্ট্যাটলেস? নিশ্চয় না, তার ঠিকানা হচ্ছে বিশ্ব মানচিত্র। তিনি বিশ্বনাগরিক। নোম্যান্স ল্যান্ড কিংবা কোন বর্ডারই মুজতবা আলীর মুক্তবুদ্ধি চর্চা মন ও মননকে বন্দি করে রাখতে পারে না। মুজতবা আলী বাংলা সাহিত্যাকাশের মুক্ত পাখি; তিনি সীমানা ডিঙ্গিয়ে তাবৎ বিশ্ব পরিভ্রমণ করেন। কোন পাসপোর্ট-ইমিগ্রেশন-ভিসার তোয়াক্কা করেন না। মুজতবা আলীর কাছে আমরা সাধারণরা খুবই ঋণী আমাদের কাছে তিনি ঋণী নন।
মুজতবা আলী হিটলার উপন্যাসে হিটলারকে উন্মোচিত করেন এভাবে শিশু শিষ্যরা, যিশু খ্রিস্টকে প্রশ্ন করে Who is the greatest in the kingdom of heaven and jesus called a little child to him and set him the midst of them. শক্তিশালীরা যে শক্তিধর নয় ক্ষুদ্ররা যে মূলত শক্তিধর এ ইঙ্গিতই মুজতবা সাহিত্যের প্রতিপাদ্য বিষয়। অরুন্ধতি রায়ের এড়ফ ড়ভ ংসধষষ ঃযরহমং-এর পূর্ব সাহিত্যকীর্তিই হচ্ছে মুজতবা আলীর হিটলার উপন্যাস।
কোটেড সাহিত্যিক মুজতবা আলী চির উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল। বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত মনীষীদের উদ্ধৃতি মুজতবা সাহিত্যকে স্বাতন্ত্র্য করে রেখেছে। Here with a loaf of bread beneath the bough. A flask of wine a book of verse and the besides me singing in the wilderness and wilderness is paradise enow.

“রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা যদি তেমন বই হয়।” ওমর খৈয়াম ও মুজতবা আলী একে অপরের মাঝে একাকার। কারও কাছে নেই কারও আলাদা আকার। একই ধ্যান, একই জ্ঞান, একই মন, একই পণ একই স্বপন, দু’জনাতে দু’জনার মিলন। ভৌগোলিক দূরত্ব বাদ সাধতে পারেনি তাদের মধ্যে। মনীষীদের উদ্ধৃতি মুজতবা আলীর শব্দ প্রয়োগ ও বাক্য বিন্যাসে বাক্সময় হয়ে ওঠে এভাবে। “এক রাজা তার হেকিমের একখানা বই কিছুতেই বাগাতে না পেরে তাকে খুন করেন। বই হস্তগত হল রাজা বাহ্য জ্ঞান হারিয়ে বইখানা পড়ছেন, কিন্তু পাতায় পাতায় এমনি জুড়ে গিয়েছে যে, রাজা বারবার আঙ্গুল দিয়ে মুখ থেকে থুথু নিয়ে জোড়া ছাড়িয়ে পাতা উল্টাচ্ছেন, এদিকে হেকিম আপন মৃত্যুর জন্য তৈরি ছিলেন বলে প্রতিশোধের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। মারাত্মক বিষ বইয়ের পাতায়, রাজার আঙ্গুল সেই বিষ মেখে নিয়ে যাচ্ছে মুখে। রাজাকে এই প্রতি হিংসার খবরটিও হেকিম রেখে গিয়েছিলেন কেতাবের শেষ পাতায়। সেইটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষ বাণের ঘায়ে ঢলে পড়লেন। বাঙালীর বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে মনে হয় যে, যেন গল্পটা জানে। আর মরবার ভয়ে কি কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।” পঞ্চতন্ত্রের বই কেনা প্রবন্ধে মুজতবা আলী দুঃখ ও খেদ প্রকাশ পেয়েছে। বাঙালীর বদনাম ঘোচানোর জন্য কর্তব্য পরায়ণ কেরাণীর মুখ দিয়ে এক অখ্যাত কবির ভাষায় বলিয়েছেন।
“ভরা পেটে ছুটতে মানা
চিবিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর
চাকরি আগে বাঁচাই দাদা
প্রাণ বাঁচানো সে তার পর”
রম্যের ভেতর দিয়ে সকরুণ চিত্র তুলে ধরেন গল্পের ঢঙ্গে মুজতবা আলী। ভ্যাগাবন্ড চার্লি চ্যাপলিনের চাউনির মতো চাউনি কারও চোখে দেখেননি মুজতবা আলী। চাউনির চিত্রকল্পটা এমন যে, ঐ নীরব চাউনিতে বলছে “কেন যে ভাই তোরা আমাকে জ্বালাস? আমি তো তোদের সমাজের উজির-নাজির হতে চাইনে। কুকুর বিড়ালটাকে পর্যন্ত আমি পথ ছেড়ে দিয়ে কোন গতিকে দিন গুজরান করছি। আমায় শান্তিতে ছেড়ে দে না বাবারা। তারপর যেন দীর্ঘশ্বাস হে ভগবান।” “এমন সময় রাস্তার দুষ্ট ছোঁড়ারা মোকা পেয়ে পিছন থেকে চার্লির ছেঁড়া পাতলুনের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিল টান। চড় চড় করে ছিঁড়ে গেল পাতলুনের অনেকখানি এই তার শেষ পাতলুন, এটাও গেল আর বেরিয়ে এল ছেড়া শার্টের শেষ টুকরো। আস্তে-আস্তে ভ্যাগাবন্ড চার্লি ছোঁড়াদের দিকে তাকালে তাঁরা তখন শুভ কর্ম সমাধান করে ছুটে পালাল।”
মাতৃভাষা বাংলা মুজতবা আলীকে আলোড়িত করেছিল। ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে মাতৃভাষাপ্রেমী মুজতবা আলী সিলেট এসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন। সাহিত্য কর্মসৃষ্টির পাশাপাশি মুক্ত স্বদেশ সৃষ্টির দুর্নিবার আকর্ষণ মুজতবা আলীকে তাড়িত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে মুজতবা আলী ছিলেন ব্যাকুল। তিনি কালি, কলম এবং তার হৃদয়ের রঙ তুলি দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র অংকিত করেছেন এভাবে “আমার এই বৃদ্ধ বয়সে আমি দেশের জন্য কিছুই করতে পারছি না। যদি কোনক্রমে মালদহ দিয়ে রাজশাহী যেতে পারতাম তবুও মনে হয় কিছু করতে পারতাম। বার্ধক্যের জন্য কেউ আমাকে নিয়ে যেতে চায় না। “ও শহড়ি ড়ঁৎ ষরনবৎধঃরড়হ ধিৎ রিষষ বহফ রহ ধ ারপঃড়ৎু, বাবহ রভ ও ফড় হড়ঃ ৎিরঃব ধ ষরহব ড়হ ঃযব ড়নলবপঃ” ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে মুজতবা আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন।
অলঙ্কার ও মণিকার কে কার অহঙ্কার। অলঙ্কার বানাতে দরকার মণিকার। মানুষ সাজাতে দরকার অলঙ্কার। দুটোই একে অন্যের অলঙ্কার ও অহঙ্কার। অনুরূপ মুজতবা আলী বাংলা সাহিত্য ও বাঙালী জাতির অলঙ্কার-অহঙ্কার। মুজতবা আলী নাড়ির টানে শেকড়ের সন্ধানে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল পূর্ব-পুরুষের ঠিকানা মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জকে কেন্দ্র করে তাঁর সাহিত্যে এতদঅঞ্চলের আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করেছেন। শবনমের হাসির ফোয়ারা যেন মনু নদীর ঢেউ ও জল। শিশির বিন্দুর মতো ঝরে পড়ে করে টলমল। এ যেন শবনমেরই হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।
বোহেমিয়ান মুজতবা আলী মানসিকভাবে ঋদ্ধ ছিলেন। মুজতবা সাহিত্যে দীপ্তি আছে দাহ নেই। অভিমান আছে বৈরিতা নেই। ঘাত আছে প্রতিঘাত নেই। মুজতবা আলী যন্ত্রী ও যন্ত্র দুটোই। রম্যের অন্তনির্হিত মধ্যাহ্ন মার্তন্ডের দহন চাঁদের স্নিগ্ধ কিরণ উভয়টির মধ্যে সেতুবন্ধই মুজতবা শিল্পের প্রকরণ; মুজতবা সাহিত্য আমাদের পথচলার পাথেয়, আমাদের নির্ভরতা আমাদের নিরাপদ আশ্রয়। আর্য-অনার্য শ্রেণী বিভাজন মূলোৎপাটনের মোক্ষম অস্ত্র। যে অস্ত্রে রক্তপাত নেই। রক্তপাতহীন এই অস্ত্রের নাম হচ্ছে মনস্পতি মুজতবা শৈলী : মন ও মননের বোধিবৃক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.