সোনালী ব্যাংকের অনিয়ম-বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করবে

সোনালী ব্যাংকের একাধিক শাখায় জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর সংগত কারণেই ব্যাংকিং সেক্টরের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিও নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যবস্থাপনা অদক্ষতা কিংবা দুর্নীতি।


রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ সোনালী ব্যাংকে যদি এত অনিয়ম চলার সুযোগ থাকে, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক গতি ঠিক রাখা সম্ভব হবে কি না- এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখায় অনিয়ম হওয়া তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বড় মাপের একটি জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পরপর জানা গেল, ব্যাংকটির আগারগাঁও ও গুলশান শাখায়ও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনার পদ্ধতিগত দিক বিবেচনা করলেও সাদৃশ্য চোখে পড়ে। সোনালী ব্যাংকের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম হওয়ার পেছনে শুধু শাখা ব্যবস্থাপক ও শাখার কয়েকজনেরই হাত রয়েছে- এমন বলার সুযোগ নেই। তাই সম্প্রতি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের তালিকা দেখে স্বস্তি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি এত বড় ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শুধু সাময়িক বরখাস্ত করার মাধ্যমেই যেন ঘটনাটি শেষ না হয়ে যায়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কোনো শাস্তি নয়। সবার আগে প্রয়োজন ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা। অথচ টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে সন্তোষজনক বলার সুযোগ নেই। অর্থ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি এ ধরনের দুর্নীতি-জালিয়াতি যাতে ভবিষ্যতে আর না হতে পারে, সে জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের।
আমাদের দেশে যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই তদন্ত কমিটি করে সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তদন্ত কমিটিগুলোতে সাধারণত প্রতিষ্ঠানের লোকজনকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যে কারণে পক্ষপাতহীন তদন্ত হয় না। সোনালী ব্যাংকের এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য যাতে এমনটা না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। গুলশান ও আগারগাঁও শাখায় গঠিত অনিয়মের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। সেখানে দেখা গেছে, শাখা দুটি অভিযুক্তদের টাকা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। প্রতিবেদনের এই অভিমতের সূত্র ধরে এগিয়ে গেলে হয়তো প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা সহজ হবে। প্রধান দপ্তরকে না জানিয়ে শাখাগুলো কিভাবে এত বড় অঙ্কের টাকার জালিয়াতি করার সুযোগ পায়, তাও ভেবে দেখতে হবে। এতে প্রমাণ হয়, প্রধান দপ্তরের দায়িত্ব পালনে অবহেলা রয়েছে কিংবা তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অনেক টাকার ব্যাপারে প্রধান দপ্তরে কোনো রেকর্ড নেই বলে যে তথ্য জানানো হয়েছে, সেটিও ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অশুভ একটি ইঙ্গিত। তাহলে কি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলো? আর্থিক অনিয়ম বন্ধ করতে হলে সমন্বয়, প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ, জবাবদিহিতা ও নিয়মিত পরিদর্শনব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। সঠিক ও সময়মতো তদন্ত শেষ করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.