নারায়ণ চন্দ্র হত্যা- কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, মামলা ডিবিতে

বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও চিকিৎসক নেতা নারায়ণ চন্দ্র দত্ত খুনের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। ঘটনার এক দিন পরেই এ মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনায় পুলিশ নিজের মতো করে মামলা সাজিয়েছে। শুরু থেকে স্বজনেরা এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করলেও থানায় দায়ের করা মামলায় এটাকে চুরির ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদী নিহতের বাবা তড়িৎ কান্তি দত্ত বলেন, ‘পুলিশ একটা ড্রাফট করেছে। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি। আমি তো কিছু লিখি নাই।’ নিহতের ভাই গৌরাঙ্গ বিজয় দত্ত বলেন, ‘আমার বাবা বুড়া মানুষ। তেমন কিছু বুঝেন না। বাবা পুলিশকে বলেছেন, আপনাদের যেমন ভালো হয় তেমনি করেন। পুলিশ তাদের মতো করে এজাহার লিখেছে।’
মামলা সাজানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভূঁইয়া মাহবুবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদী যেভাবে লিখেছে, সেভাবে এজাহার হয়েছে। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা দেখে মনে হয়েছে, এটি চুরির ঘটনা।’ পরিবারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত হত্যার কথা আমাকে বলা হয়েছে। সবকিছু তদন্ত করা হচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পাশে সরকারি বাসায় খুন হন নারায়ণ। দুর্বৃত্তরা তাঁর বাসার দোতলার জানালার দণ্ড (শিক) কেটে ওই বাসায় ঢুকে তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। তবে নিহতের স্বজন ও হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের অভিযোগ, হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, গতকাল শুক্রবার রাতে হত্যা মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, চুরি-ডাকাতি, পূর্বশত্রুতা, পারিবারিক ও পেশাগত শত্রুতাসহ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আটক চারজনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নারায়ণ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে পুলিশ এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। নিহতের শ্যালক সুরাজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মাস খানেক আগে নারায়ণ তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, তাঁদের শত্রু বেড়ে গেছে। যেকোনো সময় তাঁকে অথবা তাঁর বন্ধু বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আবু রায়হানকে মেরে ফেলা হতে পারে।
কারা এ ধরনের হুমকি দিতে পারে, জানতে চাইলে আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরুর পর কিছু সন্ত্রাসী তাদের পছন্দের লোককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাঁদের হুমকি-ধমকি দিত। এদের নাম তিনি জানেন না।
গৌরাঙ্গ বিজয় অভিযোগ করেন, আবাসিক চিকিৎসকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির পরও নারায়ণ সব সময় আতঙ্কে থাকতেন। স্ত্রী লাকি চৌধুরীকে তিনি আতঙ্কের কথা বলতেন।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ইকবাল আর্সলান প্রথম আলোকে বলেন, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সন্ত্রাসী চক্রের ব্যাপক দাপট রয়েছে। বস্তিকেন্দ্রিক এ সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.