মংলার নৌ-চ্যানেল-নাব্যতা সংকট দূর হোক

নাব্যতা সংকটের কারণে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মংলা-ঘাসিয়াখালী নৌপথের ১০ কিলোমিটার কার্যত নৌযান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর ফলে এই চ্যানেল দিয়ে মংলা সমুদ্রবন্দর ও খুলনার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার যোগাযোগ যেমন বিঘি্নত হচ্ছে, তেমনি এ রুটটি নিয়মমাফিক ভারত-বাংলাদেশের ট্রানজিট পথ হিসেবে ব্যবহারেও


গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। নৌপথের বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় পণ্যবাহী হোক বা যাত্রীবাহী, যে কোনো ধরনের ভারী নৌ-চলাচলে প্রায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নৌপথটির নাব্যতা সংরক্ষণে ড্রেজিং শুরু হলেও তা বিরামহীনভাবে না চলায় নদীর তলদেশের পলি সরানোয় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি সমকালের লোকালয় পৃষ্ঠায় এ সংক্রান্ত প্রকাশিত রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ড্রেজিং না করা এবং সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নির্ধারণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে এই বিস্তীর্ণ নৌ-চ্যানেলটির নাব্যতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ডুবোচরে শতাধিক পণ্যবাহী ট্যাংকার, কার্গো ও কোস্টার আটকা পড়েছে। ভরা কাটালে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত এসব আটকা পড়া নৌযানকে সচল করা যাবে না। ফলে এসব আটকা পড়া নৌযান এই চ্যানেল দিয়ে অন্যান্য নৌযানের চলাচলকে আরও সমস্যাসংকুল করে তুলেছে। অথচ কর্তৃপক্ষ সময়মতো পদক্ষেপ নিলে দেশের নৌ-চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ রুটটিকে সার্বক্ষণিক সচল রাখা সম্ভব। অনেক আশা নিয়ে মংলা বন্দরের সঙ্গে নৌপথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দূরত্ব কমানোর জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ১৯৭৪ সালে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম পথ খনন করে মংলা-ঘাসিয়াখালী নৌপথটি তৈরি করে। এটি বাংলাদেশ-ভারত নৌ-ট্রানজিট পথেরও একটি প্রধান অংশ। তাই অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ক্ষেত্রেই পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ রুট হয়ে উঠেছে এটি। অথচ এই নৌপথের নাব্যতা রক্ষার জন্য সুদূরপ্রসারী কোনো কর্মোদ্যোগ নেই। মাঝে মধ্যে দায়সারা গোছের ড্রেজিং করে এর নাব্যতা রক্ষার চেষ্টা ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। মংলা-ঘাসিয়াখালী নৌপথটির নাব্যতা সংকট দূর করা নৌ-চলাচল অবাধ করার স্বার্থেই প্রয়োজন। এ জন্য নৌ-কর্তৃপক্ষের উচিত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে নদীর তলদেশে জমা পলি অপসারণ এবং তীর সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে নদীর গভীরতা বজায় রাখা ও পানিপ্রবাহ নির্দিষ্ট পর্যায়ে রাখার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.