‘কর্পোরেট দাসমাত্র’ by আলী আসিফ শাওন

‘‘আজকে দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি স্বর্ণোজ্জল দিন। আজকের আগে সাংবাদিকরা কলম হাতে নিজ নিজ মালিকের পক্ষে নামতেন, আজ থেকে তারা সশরীরে নামা শুরু করলেন। ইনশাল্লাহ, অচিরেই আমরা সাংবাদিকরা নিজ নিজ মালিকের পক্ষে অস্ত্রপাতি নিয়ে টেন্ডার বাক্স দখলে সরকারি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাল্লা দিব।’’ লিখেছেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক এবং ব্লগার আরিফ জেবতিক।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ঘটনাটি নিয়েই লেখা হয়েছে ফেসবুক স্ট্যাটাসটি। এই ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে ব্যাপক তোলপড়া চলছে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার দবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এটিএন বাংলার সাংবাদিকরা শারীরিকভাবে চড়াও হয়েছেন অন্য সাংবাদিকদের ওপর। এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করায় এটিএন এর সাংবাদকর্মীরা চড়াও হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর। সাংবাদিকরা হাত তুলেছেন সাংবাদিকদের গায়ে-এই ঘটনায় দেশের প্রচারমাধ্যমের পাশাপাশি আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিকল্প গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতেও।

প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার শরিফুল হাসান তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘‘সাগর-রুনি হত্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-পুলিশ-তদন্ত কর্মকর্তা কাউকে আর কিছু করতে হবে না। আপনাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আপনারা এখন বলতে পারবেন-সাংবাদিকরা তো নিজেরাই মারামারি করছেন, তদন্ত আর কি হবে।’’

তিনি অপর একটি স্ট্যাটাসে ‘তারকা’ সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘ ধন্যবাদ তারকা সাংবাদিক এবং সাংবাদিক নেতাদের। সাগর-রুনির হত্যাকারী আর তাদের রক্ষাকারীরা আজকের দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। তারা আজ উল্লাস করবে।’’

ঘটনাটির তাত্ত্বিক ব্যাখা দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যম সমালোচক বাধন অধিকারী। তিনি লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিক হত্যার বিচার চেয়ে মাহফুজুর রহমানের গ্রেফতার চাওয়ায় যখন হামলে পড়ে এটিএন বাংলার সাংবাদিকরা; তখন আমাদের বুঝে নিতে হয় এরা সাংবাদিক নয়, এরা কর্পোরেট দাসমাত্র। এরা মাহফুজুর রহমানের রক্ষিতা (সামগ্রিক অর্থে বলছি রক্ষিতা শব্দটি)। এদের মধ্যে কমিউনিটি-বোধ নাই, সাংবাদিকতার সাধারণ নৈতিকতাবোধ নাই। তীব্র নিন্দা জানাই। ধিক্কার জানাই। প্রতিবাদ জানাই। দাসত্ব আর সাংবাদিকতার ফারাক বোঝে না যারা, তাদের বয়কট করার লড়াইয়ে সবাইকে সামিল হবার আহবান জানাই।’’

সাংবাদিকদের হাতাহাতি করায় ঘটনার সমালোচনা করে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার জুলকার নাইন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘পুলিশ যখন সাংবাদিক পিটিয়েছিল, আমরা কালো ব্যাজ টানিয়েছিলাম। আর এখন নিজেরা যখন পিটাপিটি করছি; তখন কি নিজের ছবিতে থু থু দিয়ে প্রো পিক বানাবো?’’

দৈনিক সকালের খবর পত্রিকার সংবাদকর্মী আবু বকর সিদ্দিক ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘‘একেকটা টিভি চ্যানেল একেকটা রঙের আবহ তৈরি করে। এই যেমন-ইটিভি আকাশী নীল, সময় মানে খয়েরি লাল, এনটিভি মানে গাঢ় সবুজ। আর এটিএন শুধুই হলুদ, কেবল হলুদ।’’

এটিএন নিউজ’র সংবাদকর্মী ইসমত জেরিন ঘটনাটি নিয়ে সবার চেয়ে ভিন্নভাবে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের নামে কুৎসা রটানোর প্রতিবাদ করায় এটিএন বাংলার সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে এর তীব্র নিন্দা জানাই।’’

সকালের খবর পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার উদিসা ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন,‘‘হা হা হা ...মিডিয়ার মালিক হওয়ার কর্পোরেট সুফল দেখার সুযোগ করে দিতেছে বাংলাদেশ। মাহফুজুর রহমান এর পক্ষে দাড়াইছে বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব, তারা গুণগাণ গাইলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে আজ আলোচনা অনুষ্ঠান করলেন। এই সাফাই গাওয়ার আয়োজনটা কি এটিএন করে দিছে।’’

টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর’র নিউজ রুম এডিটর শরিফ আরফিন রনি ফেসবুকে ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিকরা এত জঘন্য হলো কী করে...?’’

সাংবাদিক কমিউনিটির বাইরেও আজকের ঘটনাটি নিয়ে একাধিক ফেসবকু স্ট্যাটাস লেখা হয়েছে। সিলেটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান খান সুইট লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিকরাই  দেশের আসল আয়না। সে আয়না ঝাপসা হয়ে গেলে আর তো দেখা যাবে না।’’

বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন রসালোর বিভাগীয় সম্পাদক সীমু নাসের। তিনি লিখেছেন, ‘‘এ কী তামাশা? এ কী?’’

তবে সাংবাদিকদের হাতাহাতির ঘটনায় ফেসবুক এবং ব্লগের তৎপরতা নিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক দিলশাদ হোসেন দোদুল প্রশ্ন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘‘সাংবাদিকদের হাতাহাতি নিয়ে ব্লগাররা ফাটায় ফেল্ল...নাগরিক সাংবাদিকতার শুরু কি এটা? নাকি এটা মূলধারার সাংবাদিকদের দুর্বলতা ....।’’

তিনি অপর একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘সব সাংবাদিকদের বলছি (আমি নিজেকে এখনো সাংবাদিকতার অংশ ভাবি)...আজ যতো সব অ-সাংবাদিকেরা আপনাদের নিয়ে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে গলা ফাটাচ্ছে, তাতে কষ্ট পাবেন না যেন...আমাদের একটি অংশই তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে। আর যারা সাংবাদিকদের গালি দিয়ে চেচাচ্ছেন তাদের বলছি হাতে গোণা পাঁচ জনকে দিয়ে পুরো কমিউনিটিকে বিচার করতে যাবেন না।’’

মাছরাঙার সিনিয়র রিপোর্টার শাহেদ আলম লিখেছেন, কিছু সাংবাদিকের বাড়াবাড়ি আচারণে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা...সেই ‘কিছু’ সাংবাদিক কারা না জেনেই আমরা বিষযটাকে বেশি ‘স্পর্শকাতর’ ও মুখোরোচক করে ফেলছি নাতে?? খবরের পেছনেও খবর থাকে,সাংবাদিক ভাই বোন রা সেটা ভুলে না গিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করুন প্লিজ। ভাবছি কোন কারণে লজ্জিত হওয়া উচিত...।

এটিএন বাংলার কেরামত উল্লাহ বিপ্লব লিখেছেন, “Speechless...”।

No comments

Powered by Blogger.