প্রেস ফ্রিডম ডেঃ সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বাড়ছেই by আতাউর রহমান

বর্তমানে পৃথিবীর দেশে দেশে সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে । সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার ও মুক্ত সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকরা আজ সোচ্চার।

৩ মে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে। পৃথিবীর  বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়। সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এই দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আমাদের দেশের সাংবাদিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্রগুলোর সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিলে সাংবাদিকদের অধিকার এবং মুক্ত সাংবাদিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে বলে  অনেকে মনে করেন । একটি দায়িত্বশীল ও অত্যন্ত  ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতা । ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হবেন এটা জেনেও অনেকে সাংবাদিকতা পেশায় আসছেন । ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হওয়া সত্ত্বেও অনেকে সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশ  সেবায় ভূমিকা রাখতে গিয়ে চরম মূল্য দেন নানাভাবে।

নব প্রজন্মের বিপুল সংখ্যক নতুন মুখ সরকারি -বেসরকারি উচ্চ বেতনের চাকরি না করে  সাংবাদিকতা পেশায় এগিয়ে আসছেন। গত দুই দশকে  দেশে অনেক নতুন পত্রিকা বের হয়েছে। বিকাশ ঘটেছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার। ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে রেডিও-টিভি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও । রেডিও-টিভিতে এখন রিপোর্টিং ও বিশেষ প্রতিবেদন ও টক শো চালু হয়েছে । সাংবাদিকতায় প্রতিযোগিতাও বেড়েছে অনেক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করে নতুন মুখ যারা সাংবাদিকতায় আসছেন তারা সাংবাদিকতাকে একটি দায়িত্বশীল ও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে গ্রহণ করছেন বলে ধারণা করা হয়

চলতি বছর জানুয়ারি হতে ৩০ এপ্রিল ২০১২ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।  এরমধ্যে বাংলাদেশের দুইজন সাংবাদিক নিহত হন বাসভবনে, অপর একজন সড়ক দুর্ঘটনায় । গত ২১ বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ২৩০৭ জন  গত ১২ বছরে ১০৩৬ জন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন । গত বছর ২০১১ সালে ১০৩ জন সাংবাদিক নিহত হন।

বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের অতীত চিত্র
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা  নতুন কোনো বিষয় নয়। যুগ যুগ ধরে এদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে । ১৭৮০ সালে বেঙ্গল গেজেটে জেমস অগাস্টাস  হিকি  তৎকালীন ইংরেজ  সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা করলে  হিকিকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় । ১৭৮১ সালে তাকে দন্ড দেয়া হয়। তৎকালীন সরকার ১৭৮২ সালে বেঙ্গল গেজেট পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেন এবং প্রেস বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে কথা বলার কারণে ১৯০৬ সালে মৌলভী মুজিবুর রহমানের সম্পাদনায় প্রকাশিত দি মুসলমান পত্রিকাকে অনেক ধকল সহ্য করতে হয় । ১৯১৩ সালে ইংরেজ সরকার পত্রিকাটির বেশ কিছু সংখ্যা বাজেয়াপ্ত করেন। ১৯২২ সালের ২২ অক্টোবর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত  ধূমকেতু  পত্রিকায় দুটি রচনা এবং মাওলানা আকরাম খাঁর ১৯২০ সালে সেবক নামে একটি  বাংলা পত্রিকায় একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করায় তাকে এক বছর দন্ড ভোগ করেতে হয় । তিনি তখন সাপ্তাহিক মোহাম্মদী  পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ।

পাকিস্তান আমলের কথা আপনাদের অনেকেরই জানা আছে। ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের  সমালোচনা করায় সরকার অবজারভার পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিলেন । ১৯৬৬ সালের জুন মাসে ডিফেন্স অব পাকিসত্মান অ্যাক্ট নামের একটি আইনের বলে ইত্তেফাক বন্ধ ঘোষণা করে  তৎকালীন সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয় । মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকহানাদার বাহিনী এদেশে সাংবাদিক নিধন অভিযান চালায় । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পুড়িয়ে দেয়া হয় ইত্তেফাক, সংবাদ ও  পিপলস অফিস । বর্তমান জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিক্ষেপ করা হয় মর্টার শেল। সংবাদ অফিসে আক্রমণের ফলে মারা যান সাংবাদিক শহীদ সাবের । মক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের সাংবাদিকদের হত্যা করা হয় নির্বিচারে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সব সরকারের আমলে সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা  রাজধানীর  চেয়ে বেশি  ঘটছে জেলা -উপজেলা পর্যায়ে। সাংবাদিক নির্যাতন -নিপীড়ন শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা  নির্যাতন-নিপীড়নের  শিকার হচ্ছেন । 

সাংবাদিকদের মধ্যে সৃষ্ট অনৈক্য ও বিরোধ
অনৈক্য ও ব্যক্তিগত বিরোধ এবং আক্রোশ থেকে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের শুধু নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক নির্যাতন বাড়ছে । সাংবাদিকদের আর্থিক, সামাজিক ও দৈহিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সাংবাদিকদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিকরা দেশ ও সমাজের কোনো কল্যাণমূলক কাজে সফলতা অর্জন করতে পারবে না। সুস্থ ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য সাংবাদিকদের বিরাট দায়িত্ব ও ভূমিকা  রয়েছে । এ দায়িত্ব পালন করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া । যা এখন সময়ের দাবি ।
সাংবাদিক সমাজকে রাজনৈতিক বলয় হতে বের হয়ে আসতে হবে । সাংবাদিক সমাজকে তার অতীত ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে হবে । এজন্য সাংবাদিক সমাজের প্রবীণ-নবীন সমন্বয়ে  যৌথ সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো  যেতে পারে । অন্যথায় মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটবে না । সংবাদপত্র সমাজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাতে বাধাগ্রস্ত  না হয় সেজন্য মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের একতায় সংঘবদ্ধ হতে হবে । রাজনৈতিক ও নেতৃত্বের কারণে বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্যেও সাধারণ সাংবাদিকরা আবেদন জানিয়ে আসছেন । কিন্তু  সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব তা বাস্তবায়নে  মোটেও তেমন আগ্রহী নন।  ঐক্যবদ্ধ না থাকায় সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা আজ  ভূলুণ্ডিত। সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং  সাংবাদিকতা - যে একটি  আদর্শ ও মহান পেশা তা পুনরায়  মর্যাদাশীল করতে হবে । প্রচণ্ড প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে আজ সাংবাদিক সমাজকে কাজ করতে হয় । রণক্ষেত্রে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন ।  জীবনবাজি রেখে যে সাংবাদিক রণক্ষেত্রের তথ্য সংগ্রহ করেন  আজও শত শত সাংবাদিক মাসের পর মাস বেতন- ভাতা না পেয়ে  পরিবার - পরিজন নিয়ে চরম দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করছেন । অথচ সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো ভূমিকা নিতে পারছেন না । তুলনামূলক বিশ্লেষণ  করলে দেখা যায় যে, রাজধানী এবং বড় শহরের সাংবাদিকদের তুলনায় মফস্বল শহরের সাংবাদিকরা বেশি নির্যাতিত হন । এর একমাত্র কারণ সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি । অনেক বিভাজনের পরও  রাজধানীর সাংবাদিকরা এখনো সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী।

বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন- নিপীড়নের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে । বাড়ছে সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তাহীনতা ঝুঁকি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য। এ পর্যন্ত সাংবাদিকদের  নিয়ে যত ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে  তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিপক্ষ হিসেবে অপর একজন সাংবাদিককে দাঁড় করানো হয়েছে । অতীতের ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক ইউনিয়ন সাংবাদিক সমাজের ওয়েজবোর্ডসহ অন্যান্য দাবি আদায়ের জন্য  বিভিন্ন সময়ে  আন্দোলনের ঘটনা যেন এক  ইতিহাস ।

১৯৮৫ সালে সংবাদপত্রে  ২৬ দিনের  ধর্মঘট  এবং ১৯৯০ সালের জরুরি আইন চলাকালীন সারাদেশে সংবাদপত্র বন্ধ রাখার ঘটনা  এবং ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সাংবাদিকদের রাজপথের মিছিল সাংবাদিকদের ঐক্যের ফসল । সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত অধিকার ও নিরাপত্তার জন্যে অতীতে যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে তা যেন ক্রমেই অতীত ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে । ১৯৯৩ সালের পর থেকে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত অধিকার ও নিরাপত্তাহীনতার দিকে ধাবিত হয় । ১৯৭১ সালেও যে সাংবাদিক সমাজ জীবনবাজি রেখে শুধু কলমযুদ্ধে নয় সরাসরি রণক্ষেত্রে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন সেই  সাংবাদিক আজ স্বাধীনদেশে মুক্তভাবে লিখতে পারছেন না ।

এ লজ্জা আমাদের সাধারণ সাংবাদিকদের না সাংবাদিক সংগঠনের ? জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক  ইউনিয়নের অফিসে দেয়াল উঠেছে । আমাদের আজ শিক্ষা নিতে হবে নির্যাতিত সাংবাদিকদের কাছ থেকে । আমরা সাংবাদিকরা যেন নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি না করি । এখানে আরো বলা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশে  এ পর্যন্ত  সাংবাদিকদের ওপর যত নির্যাতন ও হামলার ঘটনা ঘটেছে তা বিশ্লেষণ করলে একটি সত্য বের হয়ে  আসে যে, প্রতিটি ঘটনার সাথে কোনো না কোনোভাবে  প্রতিপক্ষের একজন সাংবাদিক জড়িত । আমরা এই অবস্থার অবসান চাই । রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে আমরা গোটা সাংবাদিক সমাজকে কুলষিত করছি। শুধু  নিজেদের মধ্যে অনৈক্য ও  অসহিষ্ণুতার কারণে  সাংবাদিক সমাজ তাদের পেশাগত মর্যাদা এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনৈক্য ও অসহিষ্ণুতার কারণে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে ।

সংবাদমাধ্যম ও তথ্য অধিকার আইন
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়,বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা হতে পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা হতে প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা প্রায় ২২৭৫টি । এরমধ্যে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ৩৩৬টি । ইতোমধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক  সরকার  অনেক সংবাদপত্রের মিডিয়া বাতিল করেছেন। বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি জাতীয় সংবাদ সংস্থা এবং প্রধান তিনটি অনলাইন দৈনিক ও একটি বেসরকারি সংবাদসংস্থা রয়েছে । এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ১৫টি বেসরকারি  টিভি চ্যানেল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ পরিবর্তন এনেছে । 

বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও  সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৩/২৪ টি আইন রয়েছে। সরকার তথ্য অধিকার আইন আইন পাস করেছে। তবে এর সুফল কিভাবে সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণ ভোগ করবেন তা এখনো  স্পষ্ট নয়। সাংবাদিকদের জন্য তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তা যেন আরো বেশি জটিল থেকে কঠিনতর হয়ে না ওঠে। তথ্য অধিকার ও জনগণের ক্ষমতা সম্পর্কে  আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করেই উল্লেখ আছে । জনগণই যদি সকল ক্ষমতার উৎস হয় তবে সহজে তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনগণের কথা অব্যশ্যই চিন্তা করতে হবে। 

১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশে পত্রিকা প্রকাশের সংখ্যা বেড়েছে । সারাদেশে নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে । বর্তমানে দেশের সবকটি জেলা হতে  দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হচ্ছে । আর এসব পত্রিকায় সাংবাদিকের সংখ্যা প্রায় ৯,৫০০ জন । এরমধ্যে ৫,৫০০ জন সার্বক্ষণিক পেশাজীবী সাংবাদিক বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত আছেন বলে বিভিন্ন সংগঠন সূত্রে জানা যায়। বর্তমানে ঢাকায়  সাংবাদিকদের ২৫/২৬টি সংগঠন রয়েছে ।  এই সব সংগঠনের  মাধ্যমে মাত্র  চার হাজার সাংবাদিক সংগঠিত । বাকি অসংগঠিত ৫৫০০ জন  সাংবাদিক স্থানীয়ভাবে প্রেস ক্লাব বা অন্যান্য সংগঠনের সাথে জড়িত থাকলেও তারা সংগঠিত নয় । ফলে সাংবাদিকরা আজ নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজনের পর থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বাড়তে থাকে । সংবাদপত্র শিল্পে বিরাজ করতে শুরু করে এক ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থা । সংবাদপত্রের মালিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, সাধারণ কর্মচারী ও প্রেস শ্রমিকদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল তা ভেঙে গেছে । সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আজ মালিকদের স্বাধীনতায় পরিণত হয়েছে । সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি ও  ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে  প্রতিনিয়ত। সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা বাসস, বেতার, টিভিকে মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। 

সাংবাদিক সমাজের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলকে  একতায় সংহত হতে হবে । সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম জগতে সুবিধাবাদী চক্রের অনেক বেশি আবির্ভাব ঘটেছে অনেক বেশি। বিশেষ মহল  সাংবাদিক সমাজকে রাজনৈতিক মেরুকরণ করে সুভিধাভোগ করছে।  আর সাধারণ সাংবাদিকরা মাসের পর মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। সাংবাদিক নিহত হলে বিচার হয় না । মামলা - মোকদ্দমা হলেও নানা কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায় । সাংবাদিক সমাজের মধ্যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক বিরোধের কারণে  সারাদেশে যেভাবে  প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হচ্ছে তাতে পেশাগত মর্যাদা মোটেও রক্ষা হবে না । তাই সবার আগে প্রয়োজন সাংবাদিকদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ  হওয়া। ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ার যে সুবাতাস বইছে কোনো কালো থাবায় তা যেন কলুষিত না হয় ।

আতাউর রহমান: কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন

No comments

Powered by Blogger.