নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন by ইকবাল এইচ কে খোকন

সামরিক যুগের অবসান ঘটিয়ে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন হয়েছে, সে নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়গুলো মোটেও ভালো ছিল না। '৯১ সালে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে সেই বিএনপিই ক্ষমতার মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলে এবং এর বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে।


সেই যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একটি অনাস্থা এবং বিতর্কের জন্ম হয়েছিল তা আজ ১৬ বছর পরও বিতর্কের ডালপালা গজিয়ে বিরাট আকার ধারণ করেছে। তার ওপর সর্বশেষ ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ফখরুদ্দীন আহমদের দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেষ পেরেক ঠুকিয়ে দিয়ে গেছে সেই বিতর্কে। আসলে বিতর্কের শেষ নেই, কথা বাড়ালেই কথা বাড়ে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সহমর্মিতা এবং সহাবস্থান দেখে দেশের মানুষ একটু আশান্বিত হলেও খুব বেশি সময় লাগেনি রাজনীতির পুরনো চেহারায় ফিরে যেতে। আসল কথা হচ্ছে, আমরা যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দোষারোপ করি না কেন, বাস্তবে এর জন্য রাজনীতিবিদরাই দায়ী। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে রাজনীতির ধ্বংসাত্মক খেলা এবং বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের ভয়াবহতার কথা নিশ্চয় এ দেশের মানুষের মানে আছে।
বর্তমান বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে, যার যৌক্তিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা মুখে বলাবলি করলেও বাস্তব অর্থে সেটা রাজনৈতিক কারণে চাপা পড়ে যাবে। যার ফলে নির্ঘাত সংঘাত অথবা অন্য কোনো ষড়যন্ত্রের হস্তক্ষেপ রাজনীতির মাঝে ঢুকবে। সমঝোতার রাজনীতির কথা সবাই বললেও বাস্তব অর্থে এর সম্ভাবনা দেখা যায় না। তবে এটা ঠিক, সময় অনেক বদলে গেছে, এ দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। নির্বাচন নিয়ে সমস্যা থাকলেও মানুষ কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করছে না। নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন যার প্রমাণ, নির্বাচন নির্বাচনের মতোই হয়েছে, তবে জনগণ তাদের মতামত প্রতিফলিত করেছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, হয়তো সেটা হতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা দলীয় সরকারের অধীনে। যার অধীনেই নির্বাচন হোক না কেন, নির্বাচন কিন্তু হবেই। তবে কথা হচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রাম করলেই যে জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে বা জনগণের আস্থা অর্জন করা যাবে সেটা ভাবা ঠিক হবে না। জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়া আগামী দিনগুলোতে অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে। সে কথাগুলো কেউ ভাবছেন কি-না জানি না। আগামী নির্বাচনে নতুন এবং অরাজনৈতিক অসংখ্য মুখ জাতীয় সংসদে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মতামত উপেক্ষা করে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে একটা সংঘাতের দিকে যাচ্ছে, যা জনগণের কষ্ট এবং দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে, নির্বাচন যার অধীনেই হোক না কেন জনগণের মন এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবে না। জনগণের কথা চিন্তা করে সংঘাত পরিহার করে আগামী নির্বাচনকে সুন্দর করে সম্পূর্ণ করার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ৎ সিলেট
 

No comments

Powered by Blogger.