বিএনপির বাজেট ভাবনা

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গতকাল বুধবার রূপসী বাংলা হোটেলের উইন্টার গার্ডেনে আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এখানে প্রস্তাবনার মূল প্রতিপাদ্য তুলে ধরা হলো
৭ জুন ২০১০ সালে চলতি অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে আমাদের কিছু চিন্তা-ভাবনা ও বাজেট প্রস্তাবনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছিলাম।


আমাদের এই বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপনের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল জাতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের ধ্যান-ধারণা তুলে ধরা। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির সামনে একটি দিকদর্শন তুলে ধরা আমরা দায়িত্ব মনে করি। সেই চিন্তা থেকেই আমরা গত বছর বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার আমাদের ধারণাগুলোকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। যার ফলে আজ সামষ্টিক অর্থনীতির সকল সূচক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এক কথায় দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। বিগত দুই দশকেও একই অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো এমন বিপর্যয়ে পড়েনি। যা-ই হোক, বিদায়ী অর্থছরের মতো আমরা এবারও একই আঙ্গিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের ওপর বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমরা এমন এক প্রেক্ষাপটে এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করছি যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের রায়ের অজুহাতে বাতিলের ঘোষণা দিয়ে সুষ্ঠু বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ রুদ্ধ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। আমরা একদিকে যেমন রাজপথের সংগ্রামে রয়েছি, তেমনি তার পাশাপাশি আমাদের জাতির জন্য গঠনমূলক কর্মকা সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও অব্যাহত রাখতে চাই।
সুধীমণ্ডলী,
আমরা বিশ্বাস করি, বাজেট হবে মানুষের জন্য, উন্নয়নের জন্য, উৎপাদনের জন্য। আর বাজেট বরাদ্দের নীতি হবে সামাজিক উৎপাদনশীলতার নিরিখে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। বর্তমান বাস্তব অবস্থার নিরিখে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ণয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত এবং ভৌত-অবকাঠামো খাত বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের ওপর আমরা বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিলাম। আমাদের দিকদর্শন এবং প্রস্তাবনা এ বছরেও পুরনো হয়ে যায়নি। এ কারণে বিদায়ী অর্থবছরের প্রস্তাবনাগুলোও সংক্ষিপ্ত রূপে আপনাদের নজরে আনা হলো।
বিএনপির অর্থনৈতিক দর্শন : বিএনপি চায় এমন একটি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থা কোনো গোষ্ঠীকে এড়িয়ে যাবে না, প্রতিটি মানুষ মানুষের মর্যাদা পাবে। প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা এবং বাছাই ও পছন্দের অধিকার (ঈযড়রপব) নিশ্চিত হবে। সম্পূর্ণ অবসান ঘটবে ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদ বৈষম্যের। বাংলাদেশের মাটিতে এবং এর উন্মুক্ত আকাশের নিচে প্রতিটি মানুষ হবে একে অপরের স্বজন। উন্নত জীবনবোধের নৈতিকতায় প্রত্যেক নাগরিক হবে মানুষের মতো মানুষ। সকল প্রকার বৈষম্য, শোষণ বঞ্চনা এবং অবহেলার বিরুদ্ধেই বিএনপির রাষ্ট্রীয় নীতি পরিচালিত হবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত নাজুক। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জমি ইজারা নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক যে মন্তব্য করেছে, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা বলেছে, 'বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ মূলত কয়েকটি পণ্য রফতানি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে রয়েছে খুবই স্বল্প পরিমাণে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ।'
সারের দাম বৃদ্ধি : যেখানে উৎপাদনের উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করে কৃষককে উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য প্রণোদনা দেওয়ার কথা, সেখানে ইউরিয়া সারের দাম কেজিপ্রতি ১২ টাকা থেকে ২০ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে_ অর্থাৎ দাম বাড়ানো হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি : চলতি অর্থবছরে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে স্থিতিশীল রেখে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতির ধারে-কাছে নেই মূল্যস্ফীতির বর্তমান হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এপ্রিল মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০.৬৭ শতাংশ, মার্চ ২০১১তে এ হার ছিল ১০.৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে চলমান গড় হিসাবে ২০১১-এর এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৮.৫৪ শতাংশ। দরিদ্র দেশগুলোর জনগণের আয়ের বড় অংশই ব্যয় হয় খাদ্য ক্রয়ে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করে, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়াই বিপজ্জনক। সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশ সেই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪৯ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছিল।
বৈদেশিক সাহায্যপ্রবাহ :বর্তমান অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ২০ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির আশা করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এই খাতে পাওয়া গেছে মাত্র ৪,৬২৭ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরে প্রাপ্ত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯,১৪৪ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের প্রবাহের পরিমাণ কমেছে ৩৮ শতাংশ।
স্পেশাল ইকোনমিক জোন : ভারতীয় বাণিজ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সিলেটের ছাতকে শুধুমাত্র ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি 'স্পেশাল ইকোনমিক জোন' স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে। ভারতীয় ব্যবসায়ী মহলের প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশি শিল্পপতিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমার মনে করি, এ ধরনের প্রস্তাব অনুমোদনের পূর্বে বাংলাদেশি শিল্পপতিদের স্বার্থ সরকারকে অবশ্যই বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে।
ভারতের সঙ্গে ১ বিলিয়ন ডলারের কঠিন শর্তযুক্ত ঋণচুক্তি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারত থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নেওয়ার একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই ঋণচুক্তির অধীনে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের করিডোর সুবিধা ব্যবহার সহজতর করা। এই ঋণের জন্য ১.৭৫% হারে সুদ দিতে হবে। অথচ বিশ্ব ব্যাংক এ ধরনের ঋণ দেয় ০.৭৫% সুদে। অথচ বর্তমান সরকারের সমর্থক অর্থনীতিবিদরা ইতিপূর্বে দাবি করেছিলেন, ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আরও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।
এডিপি বাস্তবায়ন : রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে এখন চলছে নৈরাজ্যকর অবস্থা। মন্ত্রিপরিষদ ও উপদেষ্টামণ্ডলীর দ্বৈতশাসনের ফলে সিদ্ধান্তহীনতা, স্থবিরতা এবং সরকারের অভ্যন্তরে চিন্তার ঐক্যের অভাব প্রশাসনকে এমন স্তরে নিয়ে গেছে যে, এর দ্বারা জনগণের কোনো মঙ্গল আশা করা যায় না। বর্তমানে এডিপি বাস্তবায়নে অদক্ষতা সরকারের ব্যর্থতারই একটি নজির।
এদিকে গত দুই অর্থবছর ধরে বাজেটে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীর (পিপিপি) আওতায় বিনিয়োগের ব্যাপক আশাবাদ প্রকাশ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। গত বছর আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও নীতিনির্ধারণী কাঠামো প্রণয়নে ব্যর্থতার কারণে একটি টাকাও খরচ করা সম্ভব হয়নি। শোনা যাচ্ছে আগামী অর্থবছরেও ৩ হাজার কোটি টাকা এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এমনকি পিপিপির দফতর গঠনের ঘোষণা দেওয়া হলেও তাও করতে পারেনি সরকার।
বাজেটের আকার ও বাজেট ঘাটতি : বাজেটের আকার বর্তমানে দিন দিন বাড়ছে বিপুলভাবে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না এডিপি ব্যয়। এডিপি ব্যয় আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি না পেলেও বাজেট ঘাটতি বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। অসহনীয় মূল্যস্ফীতি সরকারের প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
পরিবহন-রেলওয়ে : অব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির কারণে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করুণ অবস্থার মধ্যে আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পে গত চার বছরে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ২ ভাগেরও কম।
সড়ক খাতের উন্নয়ন অগ্রগতি এতই অসন্তোষজনক যে, যোগাযোগমন্ত্রী সংসদে তার নিজ দলের সদস্যদেরই সমালোচনার মুখে পড়েন।
দারিদ্র্য বিমোচন : গত বছর সরকার বলেছিল যে, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা ৩৭.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এক বছর পরে সরকার বলছে, তা ৩১.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ বিশ্ব ব্যাংক এক সমীক্ষায় বলেছে যে, মূল্যস্ফীতির কারণে ২০১০ সালের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদেই নতুনভাবে ১.৫৯ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে প্রবেশ করেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি : অপরিকল্পিতভাবে তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় তরল জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে জাতীয় বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে, যা দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ওঈঞ (ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল) : সংবাদপত্র সূত্রে জানা গেছে, আমাদের সময় গৃহীত নারায়ণগঞ্জের খানপুর ও ঢাকার পানগাঁওয়ে নির্মীয়মাণ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল দুটি বিদেশি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সমুদ্রবন্দর বাদ দিয়ে কেবল আমাদের নৌবন্দর দিয়েই বিদেশিরা তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে এবং আমরা মারাত্মক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় নিপতিত হবো।
মানবসম্পদ রফতানি : বিএমইটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিএনপি সরকারের সময় মানবসম্পদ রফতানি গড়ে বছরে শতকরা ১৭ ভাগ বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তা নেমে দাঁড়ায় শতকরা ১০ ভাগেরও নিচে। অর্থাৎ বিদেশে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়েছে এবং রেমিটেন্স যে সামান্য পরিমাণ বেড়েছে তা পুরনো প্রবাসীদের দীর্ঘদিন চাকরিকালে বেতন বৃদ্ধির ফলশ্রুতি মাত্র। নতুন চাকরি যোগ হওয়ার ফসল নয়।
শেয়ার মার্কেট বিপর্যয় : আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই শেয়ার মার্কেটে ধস নামে। শেয়ার মার্কেটের দুর্যোগের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রতিবাদীরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে শেয়ার মার্কেটে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তা নস্যাৎ করে দেয়।
ক্রনি ক্যাপিটালিজম : এ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই নিজ দলীয় ক্যাডার, নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অবৈধ উপায়ে ব্যবসায় পাইয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলী তো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মীদের ছাড়া কাউকে চাকরি দেওয়া যাবে না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। বিডিআরকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং যোগাযোগ সরঞ্জামে সুসজ্জিত করা হোক। সীমান্ত ফাঁড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি ও মজবুত করা হোক।
বর্তমান বাজেট সম্পর্কে আমাদের কিছু প্রস্তাবনা
কৃষিতে উল্লম্ব সমবায় ব্যবস্থা গঠন : বিআরডিবি সমবায় প্রথার মাধ্যমে সেচসুবিধা সৃষ্টি করে কৃষিতে উফশী জাতের শস্যের আবাদ বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মূল্য শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কৃষক সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
আইলা দুর্যোগকবলিতদের পুনর্বাসন : আইলাবিধ্বস্ত এলাকায় পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণ যাতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে পারে তার জন্য বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণে একশত পঞ্চাশ (১৫০) কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
উপকূলীয় এলাকায় ভূমি উদ্ধার : বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বিশাল এলাকা সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়ে পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। আমরা এ ধরনের একটি প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
অনানুষ্ঠানিক খাত : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক খাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। জাতীয় আয় নির্ধারণে এদের অবদান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত থেকে যায়। নিয়োজিত কর্মজীবীর সংখ্যা মোট কর্মজীবীর ৭০ শতাংশ। বিচিত্র ধরনের বৃত্তি ও পেশায় যেমন :নির্মাণ শ্রমিক, হকার, ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক, ভ্যানগাড়ি চালক, যানবাহনের হেলপার, কুলি-মজুর ইত্যাদি।
প্রবাসে কর্মসংস্থানে সহায়তা : প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের প্রেরিত রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভূতভাবে সমৃদ্ধ করছে। বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গমনকারী শ্রমিকদের কষ্ট লাঘবের জন্য আমরা বিনা সুদে 'বিদেশে কর্মসংস্থান ঋণ' দেওয়ার প্রস্তাব করছি।
সঞ্চয়পত্র : ২০১০-১১ বাজেটে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশন সঞ্চয়পত্র বাদে অন্যান্য সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর শতকরা ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের এবং সুদ হ্রাসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্র থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আমরা তাই প্রস্তাব করছি সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর কর্তন রহিত করা হোক। পেনশনভোগীদের জীবনযাত্রাকে কিছুটা মসৃণ করার জন্য মূল্যস্টম্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদ এবং অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের সুদ যৌত্তিকভাবে ধার্য করার প্রস্তাব করছি।
আয়করের নিম্নতম সীমা : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাজস্বের উৎস হিসেবে আয়করের গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। কারণ বাণিজ্য উদারীকরণের ফলে আমদানি শুল্কের গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে। সমাজে আয় বণ্টনে সুসাম্য প্রতিষ্ঠায় এই কর বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চলতি অর্থবছরে কর আয়করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল বার্ষিক ১,৬৫,০০০ টাকা, কিন্তু ব্যাপক মূল্যস্টম্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে এ সীমা পরিবর্তন করে ঊর্ধ্বমুখী করা প্রয়োজন। মূল্যস্টম্ফীতি ও বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের নিরিখে করমুক্ত আয়ের সীমা বার্ষিক ৩০০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা সমীচীন বলে আমরা মনে করছি।
মূল্য সংযোজন কর : মূল্যসংযোজন কর বাংলাদেশের করব্যবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। আমরা ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যসংযোজন কর সংগ্রহ সহজিকরণ, বিজ্ঞানসম্মতকরণ, যৌক্তিকিকরণ ও নিশ্চিতকরণের প্রস্তাব রাখছি। বর্তমান মূল্যস্টম্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থোক হিসেবে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ কমানো এবং এরই সঙ্গে জনজীবনে দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে পরবর্তী অর্থবছরে ভ্যাটের আওতা আর সম্প্রসারণ না করারও প্রস্তাব করছি। অধিকন্তু আমরা ডাক্তারের ফি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি, বাড়ি ভাড়া/স্থাপনা ও যাত্রী ভাড়ার ওপর মূল্যসংযোজন কর প্রত্যাহারের দাবি করছি।
বয়স্ক নিবাস নির্মাণ : বাংলাদেশে জনসংখ্যা বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে। বয়স্ক লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পরমায়ু। ফলে সমাজে বেঁচে থাকা বয়স্ক লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক পরিবর্তনের ফলে একান্নবর্তী পরিবার ব্যবস্থাও বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অনেক পিতা-মাতার সন্তান রুজি-রোজগারের প্রয়োজনে পিতা-মাতার আবাসস্থল থেকে অনেক দূরে এমনকি দেশের বাইরেও অবস্থান করছে। ফলে বয়োবৃদ্ধ লোকদের দেখভাল করা কিংবা সেবাযত্ন করার জন্য আপন কোনো লোক কাছে থাকছে না। এ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও কল্যাণের কথা চিন্তা করে আমরা প্রতি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে একশ' শয্যা বিশিষ্ট একটি করে বয়স্ক নিবাস নির্মাণের প্রস্তাব করছি।
ডে-কেয়ার সেন্টার : বাংলাদেশে নারীদের গৃহস্থালির বাইরে কর্মসংস্থান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু এদের অনেকেরই শিশু সন্তান আছে। তাদের দেখভালের ব্যাপারে এরা যদি কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তাদের নিরাপদ কোনো আশ্রয়স্থলে রেখে যেতে পারে তাহলে এদের দুশ্চিন্তা লাঘব হতো। বর্তমানে কিছু সংখ্যক বড় প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার আছে। প্রয়োজনের তুলনায় এটি খুবই অপ্রতুল। আমরা মনে করি নারীকর্মীর সংখ্যা বিবেচনা করে সারাদেশের জন্য ডে-কেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক। ফলে নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার হবে। নারীদের পক্ষে গৃহস্থালির বাইরে কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণে সহায়ক হবে।
বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় অবকাঠামোগত স্বল্পতা সর্বজনবিদিত। প্রবৃদ্ধির চাকাকে সচল রাখতে হলে এবং আগামী দিনে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বৃহৎ অবকাঠামো গঠনের কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে এখন থেকেই সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প প্রণয়ন ও সম্পদ সংগ্রহের কাজে হাত দিতে হবে। আমরা যে সব প্রকল্পের কথা ভাবছি তার মধ্যে রয়েছে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সব বিভাগীয় শহরের হাইস্পিড (ঘণ্টায় ২৫০ কিঃমিঃ - ৩০০ কিঃমিঃ গতিসম্পন্ন) ট্রেন চালু করা, ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে ছয় লেন সড়ক নির্মাণ, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং রেল যোগাযোগসহ দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণ।
দ্বিতীয় যমুনা সেতু : বিদ্যমান যমুনা সেতু পরিবহনের প্রবল চাপের মধ্যে আছে। এ সেতুতে রেল চলাচলের যে ব্যবস্থা আছে তাতে ট্রেন খুব ধীরগতিতে চলে। তবে এরকম আরও একটি সেতু যে অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার বিচারে অত্যন্ত কার্যকর তা বিদ্যমান যমুনা সেতু প্রমাণ করেছে। আমরা রেল যোগাযোগসহ দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করছি।
বস্ত্রশিল্প : বাংলাদেশি স্পিনিং মিলগুলো এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। হাজার হাজার টন সুতা অবিক্রীত অবস্থায় মিলগুলোর গোডাউনে পড়ে আছে। যারা স্পিনিং মিলগুলো থেকে সুতা কিনে রফতানির কাজে ব্যবহার করে তারা ইতিমধ্যে ভারত থেকে কম মূল্যে সুতা আমদানি করে গুদামজাত করছে। ভারত বস্ত্র ও স্পিনিং সেক্টরে বিশেষ সুবিধা দিয়ে চলেছে। ফলে বাংলাদেশি স্পিনিং মিলগুলো ভারতের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় নিক্ষিপ্ত হয়েছে। দেশীয় স্পিনাররা উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আমাদের দেশের স্পিনিং, উইভিং, ড্রায়িং ও ফিনিশিং খাতের অধিকাংশ শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে দেশের ৩৪১টি স্পিনিং মিলের মধ্যে ৩৪টিই বন্ধ হয়ে গেছে। সংকট অব্যাহত থাকলে মিল উদ্যোক্তারা ঋণখেলাপি হয়ে যাবে এবং শ্রমিকরা হয়ে পড়বে বেকার। মিলগুলোকে ঋণদানকারী ব্যাংকগুলোও সংকটে পড়বে।
জাতীয় স্বার্থে স্পিনিং ও টেক্সটাইল সেক্টর এবং তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের স্বার্থ সমন্বয় করে দেশীয় শিল্পের উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সুরক্ষিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাব হলো :
ক) ভারত স্পিনিং ও বস্ত্রখাতে ডাম্পিং করছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিষয়টি যথাযথ আন্তর্জাতিক সংস্থায় উত্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছি।
খ) বস্ত্রখাতে নগদ সহায়তা ৫% এর পরিবর্তে ৮% করতে হবে।
গ) টেক্সটাইল পুনর্বাসন ফান্ড গঠন করতে হবে।
ঘ) টেক্সটাইল ও স্পিনিং সেক্টরের জন্য সুদের হার কমাতে হবে।
ঙ) তাঁত শিল্পের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ অর্থ প্রণোদন প্রদান করতে হবে।
সংকট ঘনীভূত হচ্ছে : চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে চিত্র আমরা দেখতে পাই তা নৈরাশ্য ছাড়া কোনো আশার আলো দেখায় না। সরকারি মহল দাবি করছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী এ প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি নয়। দেশীয় একটি থিংকট্যাঙ্ক ও বিশ্বব্যাংকও প্রায় একই ধরনের প্রাক্কলন করেছে। দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের ফলে এবং প্রশাসনের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে বিনিয়োগের পরিবেশ দারুণভাবে বিঘি্নত। নতুন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের মতো খাতও দারুণ সংকটে নিপতিত।
রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১ শতাংশ, একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫১ শতাংশ। বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থেও (রেমিটেন্স) নামমাত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হতাশাব্যঞ্জক। সরকারি বিনিয়োগ কমে আসায় সামগ্রিক বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দাবি করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো_ বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হচ্ছে। সারাবিশ্বে যেখানে মার্কিন ডলারের মূল্যমান কমছে, সেখানে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান বাড়ছে। শেয়ারবাজারের বিপর্যয় থেকে ফায়দা লুটকারীগোষ্ঠী কর্তৃক ডলার পাচার, ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ডলার পাচার মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমার অন্যতম কারণ।
কী রকম বাংলাদেশ দেখতে চাই : সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসা তরুণ যোদ্ধা ও সৈনিকরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরপর তাদের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল।
আমাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও লক্ষ্য হচ্ছে, পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় সক্ষম এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে ক্ষুধা, অপুষ্টি, অশিক্ষা, সামাজিক অবিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং শোষণ, বঞ্চনা ও কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না। আমরা আগামী দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় সম্মান ও মর্যাদার আসনে আসীন দেখতে চাই। সে লক্ষ্য ও স্বপ্ন বাস্তবায়নকল্পে_ বিশ্বাসযোগ্য এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা; কার্যকর এবং জবাবদিহিতামূলক সংসদের নিশ্চয়তা; একটি স্বাধীন, দক্ষ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিবর্জিত এবং দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা; মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং আইনের শাসনের নিশ্চয়তা; দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত এবং দল-নিরপেক্ষ গণ এবং পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলা।
প্রশাসনিক : আমরা একটি দক্ষ, গতিশীল, যুগ-উপযোগী ও গণমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্যে :স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া চালু করা; স্বচ্ছ এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; সকল পর্যায়ে ব-মড়াবৎহধহপব চালু; স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা : আমরা এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও নীতি কাঠামো গড়ে তুলতে চাই যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুত দারিদ্র্যমুক্ত একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যে :কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিকীকরণ এবং বহুমুখীকরণ; শিল্পখাতে অধিকতর প্রবৃদ্ধি অর্জন; সেবা খাতকে দরিদ্র মানুষের নিছক টিকে থাকার আশ্রয়স্থল থেকে সর্বাত্মক সমৃদ্ধির বাহনে রূপান্তরিত করা; রফতানি খাতের বহুমুখীকরণ; বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের চাহিদার নিরিখে বিশ্বায়নের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশীয় বাজারমুখী শিল্পায়ন।
বৈদেশিক শ্রমবাজার : আমরা এমন একটি মানবসম্পদ উন্নয়ন নীতি চাই যার মাধ্যমে সম্ভব হবে :বিদেশে রফতানিযোগ্য শ্রমিকদের দক্ষ শ্রমিকরূপে গড়ে তোলা; বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ নার্সদের বিরাট চাহিদার সুযোগ গ্রহণের জন্য দেশে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে উচ্চ মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা। এক কথায় বিদেশে প্রেরণযোগ্য শ্রমশক্তির কারিগরি ও প্রযুক্তিগত মান উন্নয়ন।
স্বাস্থ্যবান জাতি : আমরা একটি স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনকল্পে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে একটি বাস্তবসম্মত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণনীতি প্রণয়ন করতে চাই। যার লক্ষ্যে হবে :আগামী দশকের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আরও উলেল্গখযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য প্রণোদনা ও বস্তুগত সহায়তা প্রদান; গরিব ও বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে নাগরিকদের জন্য নিবারণ ও নিরাময়মূলক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ, আওতা ও পরিধি এবং মান উন্নত করা। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার আরও নামিয়ে আনতে এবং তাদের অপুষ্টি থেকে বাঁচাতে শিশু ও মাতৃসেবার উন্নয়ন।
 

No comments

Powered by Blogger.