রবার্ট ব্যারেট-ইয়েমেন কি আরেক আফগানিস্তান হতে যাচ্ছে
সংঘাতময় উপসাগরীয় রাষ্ট্র ইয়েমেনের পরিস্থিতি দিনের পর দিন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আল-কায়েদার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কয়েক শ ইসলামী জঙ্গি এখন সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর জিনজিবার দখল করে নিয়েছে। এটা অন্তত আরব-বিশ্বের জন্য অবশ্যই একটি গুরুতর বিষয় বলে গণ্য হতে পারে।
আরব স্প্রিংখ্যাত এই গোষ্ঠী তাদের নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ে লড়াই করে আসছে। আর এ দাবিগুলোই তাদের অধিক জনপ্রিয় করে দিতে সক্ষম হয়েছে।
এটা নিশ্চিত যে সেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য আল-কায়েদা অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ লাভ করেছে। তাদের কৌশলগত পদক্ষেপ সম্পর্কে আমাদের হালকা চিন্তা করার সুযোগ নেই। আফগানিস্তানে আল-কায়েদা তেমন গুরুত্বসহকারে চিন্তা করছে না। হতে পারে, তারা পশ্চিমের দিকে অধিকতর নজর দেওয়াকেই যুক্তিসংগত বলে মনে করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে যে তারা বিশ্বব্যাপী তাদের হাত সম্প্রসারিত করতে চাইছে। এমন অসংখ্য প্রমাণ আছে যে দক্ষিণ ইয়েমেনেও এমনই ঘটেছিল। ইয়েমেনে শক্ত ঘাঁটি করে আল-কায়েদা সেই অঞ্চলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছে, তাদের আরবের অন্য স্থানগুলোতে বেশি বেশি দেখা যাচ্ছে মাত্র বছর দুই আগে থেকে। আর তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতির কারণ। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী এবং অত্যন্ত কেতাদুরস্ত ব্যক্তি আনোয়ার আল আওলাকি। আর এই ব্যক্তি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্যায়ে সন্ত্রাসকে বিস্তৃত করতে নতুন একটি ধারণার জন্ম দিয়েছে। যেমন ২০০৯ সালের বড়দিনে ওমর আবদুল মাতালেব কর্তৃক নর্থ-ওয়েস্ট এয়ারলাইনে আক্রমণ করা।
আল-কায়েদার এই দুর্ধর্ষ হুমকিও যদি যথেষ্ট না হয়ে থাকে তাহলে সম্প্রতি তারা যে নগরী দখল করে নিয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই টনক নড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। আর তাদের এই সাফল্য বাব এল মান্দেব থেকে এডেনের দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের ১১ শতাংশ তেল সেই বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়ে থাকে। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এই তেলবন্দরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল-কায়েদা এই সত্যটি সঠিকভাবেই অনুধাবন করেছে। এডেনের উত্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এমন আধিপত্যকে পশ্চিমের ক্ষমতাসীনদেরও ভালো লাগার কথা নয়। অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথটি তাই অস্বাভাবিকভাবে গুরুত্ব পেয়ে আসছে।
আল-কায়েদা এও জানে যে তারা যে নগরীটি দখল করেছে তা পুনরুদ্ধার করতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বেগই পেতে হবে না। আর এই উদ্ধার কাজে তাদের পঞ্চম নৌবহরই যথেষ্ট, যা বাহরাইন উপকূলে অবস্থান করছে। এই সংকীর্ণ নৌপথে আবার ইরানের নৌবাহিনীর জাহাজও অবস্থান করছে, দক্ষিণ ইয়েমেনের অধিবাসী শিয়াদের ওপর কোনো আক্রমণ হলে তারা যাতে সহজেই প্রতিহত করতে পারে। তবে এখনো ইয়েমেন তেলসমৃদ্ধ এবং পারমাণবিক ক্ষমতাধর ইরানের সমর্থন পেয়ে আসছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ তাদের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনো হতে পারে ইয়েমেনে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হামলা না চলতে পারে, তার জন্য ইরান তাদের আরো সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে পারে। আল-কায়েদা কি তাদের আগামী আক্রমণের চিন্তা করে এই দখলীকরণ সম্পন্ন করেছে? তবে তারা নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় নয়, এমন লড়াইও পরিচালনা করতে পারে। অনেকে আফগানিস্তানে তাদের অবস্থানকে এই ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করছেন।
আল-কায়েদা আরেকটি কাজ করতে পারে। তারা ইয়েমেনে পশ্চিমাবিরোধী জনমত তৈরি করতে পারে অত্যন্ত সফলভাবে। আর ইয়েমেন হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম। সেখানে বেকারত্বের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। তাদের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের তেলক্ষেত্রগুলো আগামী পাঁচ বছরেও পড়ে থাকবে। ইয়েমেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জন্মহারের দেশও বটে। তাদের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সের।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটি কি আল-কায়েদার পাতা ফাঁদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে? আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে দেশটি কাজ করতে পারলে তাদের নিজেদের জন্যও ভালো করত। আর তাদের সীমান্তের কথাও ভাবা দরকার। কাছের দেশ সৌদি আরবের সীমান্তেই আছে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সৈন্যবাহিনী। তাও তাদের বিবেচনায় আনা দরকার। সৌদি আরব সেখানে অত্যন্ত কৌশলগত অবস্থানে চলে যেতে পারে। তারও কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনের উত্তর সীমান্তে থাকা উপজাতি অধ্যুষিত পর্বতসংকুল এলাকা, যা আমাদের আফগানিস্তানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে পশ্চিমের সহযোগিতা পেতে হলে প্রমাণ করতে হবে, আল-কায়েদা তাদের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না। কিংবা আল-কায়েদাকে পশ্চিমের মতোই তিনিও অপছন্দ করেন এবং প্রতিপক্ষ ভাবেন। আবার কেউ কেউ এমনো মনে করেন, জিনজিবার দখলের ব্যাপারটি আসলে সালেহর একটি রাজনৈতিক খেলাও হতে পারে। কারণ এতে করে রাস্তায় যে বিদ্রোহ চলছে তা থেকে দৃষ্টি ফেরানো কিছুটা হলেও সম্ভব হতে পারে। অবশ্য প্রেসিডেন্ট সালেহ আল-কায়েদা দমন প্রশ্নে খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেননি। এটা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ স্পষ্টতই বলে।
পরিস্থিতি ক্রমাগত এতই খারাপ হচ্ছে যে মানুষ মনে করতে শুরু করেছে, কখন বৃহৎ শক্তি সেখানে হস্তক্ষেপ করে বসে। সে ক্ষেত্রে আল-কায়েদার ভূমিকা বিবেচনা করতে হবে। তারা কি সেই পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকবে? আর আমরা কি তাহলে আরেকটি আফগানিস্তান দেখার অপেক্ষা করব?
লেখক : সাংবাদিক
ইয়েমেন টাইমস থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
এটা নিশ্চিত যে সেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য আল-কায়েদা অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ লাভ করেছে। তাদের কৌশলগত পদক্ষেপ সম্পর্কে আমাদের হালকা চিন্তা করার সুযোগ নেই। আফগানিস্তানে আল-কায়েদা তেমন গুরুত্বসহকারে চিন্তা করছে না। হতে পারে, তারা পশ্চিমের দিকে অধিকতর নজর দেওয়াকেই যুক্তিসংগত বলে মনে করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে যে তারা বিশ্বব্যাপী তাদের হাত সম্প্রসারিত করতে চাইছে। এমন অসংখ্য প্রমাণ আছে যে দক্ষিণ ইয়েমেনেও এমনই ঘটেছিল। ইয়েমেনে শক্ত ঘাঁটি করে আল-কায়েদা সেই অঞ্চলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছে, তাদের আরবের অন্য স্থানগুলোতে বেশি বেশি দেখা যাচ্ছে মাত্র বছর দুই আগে থেকে। আর তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতির কারণ। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী এবং অত্যন্ত কেতাদুরস্ত ব্যক্তি আনোয়ার আল আওলাকি। আর এই ব্যক্তি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্যায়ে সন্ত্রাসকে বিস্তৃত করতে নতুন একটি ধারণার জন্ম দিয়েছে। যেমন ২০০৯ সালের বড়দিনে ওমর আবদুল মাতালেব কর্তৃক নর্থ-ওয়েস্ট এয়ারলাইনে আক্রমণ করা।
আল-কায়েদার এই দুর্ধর্ষ হুমকিও যদি যথেষ্ট না হয়ে থাকে তাহলে সম্প্রতি তারা যে নগরী দখল করে নিয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই টনক নড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। আর তাদের এই সাফল্য বাব এল মান্দেব থেকে এডেনের দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের ১১ শতাংশ তেল সেই বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়ে থাকে। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এই তেলবন্দরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল-কায়েদা এই সত্যটি সঠিকভাবেই অনুধাবন করেছে। এডেনের উত্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এমন আধিপত্যকে পশ্চিমের ক্ষমতাসীনদেরও ভালো লাগার কথা নয়। অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথটি তাই অস্বাভাবিকভাবে গুরুত্ব পেয়ে আসছে।
আল-কায়েদা এও জানে যে তারা যে নগরীটি দখল করেছে তা পুনরুদ্ধার করতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বেগই পেতে হবে না। আর এই উদ্ধার কাজে তাদের পঞ্চম নৌবহরই যথেষ্ট, যা বাহরাইন উপকূলে অবস্থান করছে। এই সংকীর্ণ নৌপথে আবার ইরানের নৌবাহিনীর জাহাজও অবস্থান করছে, দক্ষিণ ইয়েমেনের অধিবাসী শিয়াদের ওপর কোনো আক্রমণ হলে তারা যাতে সহজেই প্রতিহত করতে পারে। তবে এখনো ইয়েমেন তেলসমৃদ্ধ এবং পারমাণবিক ক্ষমতাধর ইরানের সমর্থন পেয়ে আসছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ তাদের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনো হতে পারে ইয়েমেনে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হামলা না চলতে পারে, তার জন্য ইরান তাদের আরো সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে পারে। আল-কায়েদা কি তাদের আগামী আক্রমণের চিন্তা করে এই দখলীকরণ সম্পন্ন করেছে? তবে তারা নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় নয়, এমন লড়াইও পরিচালনা করতে পারে। অনেকে আফগানিস্তানে তাদের অবস্থানকে এই ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করছেন।
আল-কায়েদা আরেকটি কাজ করতে পারে। তারা ইয়েমেনে পশ্চিমাবিরোধী জনমত তৈরি করতে পারে অত্যন্ত সফলভাবে। আর ইয়েমেন হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম। সেখানে বেকারত্বের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। তাদের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের তেলক্ষেত্রগুলো আগামী পাঁচ বছরেও পড়ে থাকবে। ইয়েমেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জন্মহারের দেশও বটে। তাদের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সের।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটি কি আল-কায়েদার পাতা ফাঁদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে? আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে দেশটি কাজ করতে পারলে তাদের নিজেদের জন্যও ভালো করত। আর তাদের সীমান্তের কথাও ভাবা দরকার। কাছের দেশ সৌদি আরবের সীমান্তেই আছে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সৈন্যবাহিনী। তাও তাদের বিবেচনায় আনা দরকার। সৌদি আরব সেখানে অত্যন্ত কৌশলগত অবস্থানে চলে যেতে পারে। তারও কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনের উত্তর সীমান্তে থাকা উপজাতি অধ্যুষিত পর্বতসংকুল এলাকা, যা আমাদের আফগানিস্তানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে পশ্চিমের সহযোগিতা পেতে হলে প্রমাণ করতে হবে, আল-কায়েদা তাদের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না। কিংবা আল-কায়েদাকে পশ্চিমের মতোই তিনিও অপছন্দ করেন এবং প্রতিপক্ষ ভাবেন। আবার কেউ কেউ এমনো মনে করেন, জিনজিবার দখলের ব্যাপারটি আসলে সালেহর একটি রাজনৈতিক খেলাও হতে পারে। কারণ এতে করে রাস্তায় যে বিদ্রোহ চলছে তা থেকে দৃষ্টি ফেরানো কিছুটা হলেও সম্ভব হতে পারে। অবশ্য প্রেসিডেন্ট সালেহ আল-কায়েদা দমন প্রশ্নে খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেননি। এটা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ স্পষ্টতই বলে।
পরিস্থিতি ক্রমাগত এতই খারাপ হচ্ছে যে মানুষ মনে করতে শুরু করেছে, কখন বৃহৎ শক্তি সেখানে হস্তক্ষেপ করে বসে। সে ক্ষেত্রে আল-কায়েদার ভূমিকা বিবেচনা করতে হবে। তারা কি সেই পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকবে? আর আমরা কি তাহলে আরেকটি আফগানিস্তান দেখার অপেক্ষা করব?
লেখক : সাংবাদিক
ইয়েমেন টাইমস থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
No comments