ইরানেও পশ্চিমা আগ্রাসন আসন্ন?

ধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রে একের পর এক সরকারের পতন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা তাদের আসন পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিউনেসিয়া, মিসর, লিবিয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের আবার চোখ পড়েছে ইরানের দিকে। এরই মধ্যে মার্কিন শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা ইরানে সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসরায়েল বলেছে, পরমাণু অস্ত্র তৈরির আগেই ইরানকে থামাতে হবে।
প্রয়োজনে সেখানে হামলা চালাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তত্পরতার বিরুদ্ধে ইরানেও বিক্ষোভ হয়েছে। গত শুক্রবার তেহরানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতিকৃতি পুড়িয়েছে। ১৯৭৯ সালে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আটকের ঘটনার দিনটিকে স্মরণ করে তারা বিক্ষোভ করেছে।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছে জাতিসংঘের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশকে কেন্দ্র করে। দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের মজুদ আছে—জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনে তেমনটিই উল্লেখ করা হচ্ছে। আর ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইরানে অভিযানের ব্যাপারে জোর পাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের স্বার্থে এবং আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হুমকি ইরান। এ কারণেই ইরানের ওপর আমরা সতর্ক নজর রাখছি।’ তিনি বলেন, ‘ইরান এখন উসকানিমূলক কোনো কাজ করবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। পরমাণু অস্ত্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত তারা চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না, তা আমি জানি না।’
রয়টার্স জানায়, ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে শর্ত ছিল মার্কিন ওই কর্মকর্তার নাম তাঁরা প্রকাশ করতে পারবেন না।
এদিকে ‘চ্যানেল টু নিউজ’ ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজের কাছে জানতে চেয়েছিল, কূটনৈতিক তত্পরতার চেয়ে ইরানে সামরিক অভিযান চালানোর ব্যাপারে ঘটনাপ্রবাহ মোড় নিচ্ছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তাই মনে করি এবং ইরানের হাতে খুব বেশি সময় নেই।’
এদিকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেও বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ভাষণের সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি বলেন, ‘ইরানের সাম্প্রতিক আচরণ এবং তাদের পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিলাষ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ইরান ইসরায়েলের জন্য হুমকি হলে আমরা হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকব না।’
ইরান যদিও পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা হুঁশিয়ার করে দিয়ে এও বলেছে, কোনো ধরনের হামলা হলে তারা ইসরায়েল ও উপসাগরে মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানবে।
কিন্তু ইরানের এ হুমকিতে কান না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্র ইসরায়েল বারবারই বলছে, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি ঠেকাতে সামরিক অভিযানসহ সব ধরনের হামলার কথাই তারা মাথায় রেখেছে।
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক একাধিকবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অবরোধসহ নানাভাবে চাপ অব্যাহত রেখেছে ইরানের ওপর। গত শুক্রবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র জর্জ লিটল। তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে ইরানকে চাপে রাখার চেষ্টা করছি।’
তবে চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ইরানে অবরোধ আরোপের বিপক্ষে। তারা বলেছে, ইরান যে পশ্চিমাদের ওপর হুমকি, তারা তা মনে করে না। তবে পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়াতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল হামলা চালানে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। ওই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের ৪০ শতাংশ তেল রপ্তানি হয়। এতে তেলের মূল্য যেমন বেড়ে যেতে পারে, তেমনি বিশ্বের অর্থনীতিতেও ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়।

No comments

Powered by Blogger.