বায়ার্ন-আভিজাত্য আর রিয়াল-দাপট

বায়ার্ন মিউনিখ ফুটবল-বিশ্বকে একটি পুরোনো প্রবাদ আরেকবার মনে করিয়ে দিল—ঐতিহ্য আর আভিজাত্য অন্য ব্যাপার। চ্যাম্পিয়নস লিগে পরশু রাতে বায়ার্ন ২-০ গোলে ম্যানচেস্টার সিটিকে উড়িয়ে দিয়ে ফুটবল আভিজাত্যেরই জয়গান গেয়েছে। আয়াক্স অবশ্য ম্যান সিটির গোত্রীয় নয়, অভিজাত দল। উজ্জ্বল তাদের অতীত। কিন্তু মাদ্রিদে গিয়ে ডাচ চ্যাম্পিয়নরা নয়বারের চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা-ক্ষুধার কাছে হেরেছে ৩-০ গোলে।
অনেক হাঁকডাক দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষিক্ত সিটি দ্বিতীয় ম্যাচেই হারল স্পষ্ট ব্যবধানে। ম্যানচেস্টার শহরের হতাশা এতেই শেষ হয়নি। সিটির বিখ্যাত নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানইউ নিজেদের মাঠে হার এড়িয়েছে কোনোক্রমে। দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও এফসি বাসেলের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে।
রিয়ালের বড় জয়ে কাকার স্বরূপে ফেরা, বায়ার্ন-সিটি ম্যাচের উত্তেজনা, এসব ছাপিয়ে পরশু রাতে বড় হয়ে উঠেছে বাসেলের সঙ্গে ম্যানইউর নাটকীয় ড্র। চোটের কারণে ওয়েইন রুনি খেলতে না পারলেও রুনিবিহীন ম্যানইউর আক্রমণভাগ শুরুটা করেছিল দারুণ। ২০ বছর বয়সী ইংলিশ স্ট্রাইকার ড্যানি ওয়েলবেকের জোড়া গোলে ১৭ মিনিটেই মধ্যে ২-০-তে এগিয়েও যায় তারা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বাসেল সমতায় ফেরার পর রুনির অভিজ্ঞতার অভাবটা ঠিকই অনুভব করেছে ম্যানইউ।
সুইজারল্যান্ডের দুই ফ্রেই—ফ্যাবিয়ান ও আলেক্সান্ডারের ২ মিনিটের (৫৮ ও ৬০) ২ গোলে সমতায় ফেরে সুইস ক্লাব বাসেল। ম্যাচ ২-২ হয়ে যাওয়ার পর ম্যানইউর যেখানে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠার কথা, উল্টো তারা হয়ে পড়ে দিশাহারা। প্যাট্রিস এভরা, রিও ফার্ডিনান্ড, ফিল জোন্স, ফ্যাবিও ডা সিলভা—ম্যানইউর চার ডিফেন্ডার যেন আগের চেয়েও নড়বড়ে হয়ে পড়েন। এটিরই সুযোগে ৭৬ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে আলেক্সান্ডার ফ্রেই বাসেলকে এগিয়েও দেন।
একটা সময় মনে হচ্ছিল নিজেদের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগে তৃতীয়বারের মতো হারতে চলেছে ম্যানইউ। কিন্তু নানির ক্রসে হেড করে দলকে বাঁচিয়ে দেন অ্যাশলি ইয়াং। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের প্রথম গোলটি করে অন্তিম মুহূর্তে ফেরান সমতা। স্বস্তি ফিরে পাওয়া ম্যানইউ কোচ ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন নিজের অস্বস্তির কথা, ‘পুরো ম্যাচেই কেমন যেন অযত্নের ছাপ ছিল আমাদের খেলায়। আক্রমণভাগ দারুণ খেলেছে। বিশেষ করে প্রথমার্ধে। আর ওই সময়টায় (বাসেলের সমতায় ফেরার সময়) আমরা একটু ছন্নছাড়া ফুটবল খেলেছি, আমাদের আরেকটু মনোযোগী থাকা উচিত ছিল।’
ম্যান সিটি-বায়ার্ন ম্যাচটিকে দেখা হয়েছিল ইউরোপ-শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীকী লড়াই হিসেবে। তবে উত্তেজনা ছড়ানো এ ম্যাচ শেষে হতাশই করেছে। শুরুর মিনিট কুড়ি বাদ দিলে একতরফা খেলে বায়ার্ন সিটিকে বুঝিয়ে দিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ কঠিন ঠাঁই, অভিজাতদের জায়গা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মারিও গোমেজের প্রথমার্ধে করা দুই গোলেই জিতেছে বায়ার্ন।
তবে ম্যাচ শেষে কোচ ইয়াপ হেইঙ্কস প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ফ্রাঙ্ক রিবেরি ও বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগারকে, ‘রিবেরির তো ছিল বিশ্বমানের পারফরম্যান্স, শোয়েনস্টাইগারেরও তাই। শুরুতে একটু নার্ভাস ছিলাম আমরা। তবে প্রথমার্ধের মাঝামাঝিই সবকিছু আমরা পাল্টে দিয়েছি।’ বায়ার্নের চেয়েও অনায়াস জয় পেয়েছে রিয়াল। আয়াক্স শুরুর দিকে একটু চাপ তৈরির চেষ্টা করলেও প্রথমার্ধের মাঝামাঝি হারিয়ে যায় রিয়ালের দাপটে। স্বরূপে ফিরেছেন কাকা। ৩-০ গোলের জয়ে একটি গোল নিজে করেছেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর করিম বেনজেমার করা গোল দুটিতে রেখেছেন অবদান। ২৫ মিনিটে রিয়াল প্রথম এগিয়ে যায় রোনালদোর গোলে। ৪১ মিনিটে কাকার গোলের ৮ মিনিট পরই বেনজেমার গোলে ভাগ্য নির্ধারিত হয় ম্যাচের।
গত মৌসুমের শেষে গুঞ্জন ছিল কাকা রিয়াল ছাড়ছেন। গুঞ্জন যে একেবারে উধাও, তা নয়। দলবদলের আগামী জানুয়ারি-সূচিতেও নাকি চলে যেতে পারেন। তবে পরশুর কাকাকে নিশ্চয়ই আর ছাড়তে চাইবে না রিয়াল। রিয়ালের সহকারী কোচ আইতর কারাঙ্কার কথায় সেই আভাস, ‘সত্যিই ওর অনেক বাজে সময় গেছে। আমরা যারা কাকার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, তারা ওর হাসিমুখ দেখে খুব খুশি।’ আর কাকা নিজে কী বলেন? ব্রাজিলিয়ান প্লে-মেকার রিয়ালে ফিরে পাচ্ছেন খেলার আনন্দ, ‘আমি আবারও খেলাটা উপভোগ করছি, শারীরিকভাবে ভালো বোধ করছি। ক্রমেই ফিরে পাচ্ছি নিজের সেরাটা, ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ম্যাচটা ছিল দারুণ।’ কাকার ফেরা মানে রিয়ালেরও নতুন করে জেগে ওঠা। তাহলে ‘দশমের’ ডাক শুনছে রিয়াল? কাকা কিন্তু তাঁর ইচ্ছেটা আবারও জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এই দলের হয়ে আমি জিততে চাই।’

No comments

Powered by Blogger.