মিউনিখে তেভেজ-কাণ্ড

ম্যাচের বয়স তখন ৫৬ মিনিট। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ০-২ গোলে পিছিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি। অথচ কোচ রবার্তো মানচিনি কিনা ফরোয়ার্ড এডিন জেকোকে উঠিয়ে নামালেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নাইজেল ডি ইয়ংকে! টিভি পর্দায় দেখা গেল, ডাগ-আউটে সিটির কোচিং স্টাফের একজন কার্লোস তেভেজকে কী যেন বলছেন, আর তেভেজ সমানে মাথা নাড়ছেন। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, ঝামেলা কিছু একটা হয়েছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বোমাটা ফাটালেন মানচিনি, ‘তেভেজ মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে!’
তেভেজ অবশ্য দাবি করেছেন তিনি মোটেও অস্বীকৃতি জানাননি, বরং মাঠে নামতে প্রস্তুতই ছিলেন। তবে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড যতই অস্বীকার করুন, ক্ষুব্ধ মানচিনি জানিয়ে দিয়েছেন তেভেজের সিটি অধ্যায় শেষ, ‘ও ওয়ার্মআপ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, পরে মাঠে নামতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলে কেউ যদি এত অর্থ আয় করে কিন্তু খেলতে অস্বীকৃতি জানায়, আমার কাছে সে শেষ। কার্লোসকে আমি কী বলেছি, সেটা আমার, কার্লোস আর দলের মাঝেই আছে। কিন্তু দল হিসেবে যদি আমরা উন্নতি করতে চাই, কার্লোস আমাদের সঙ্গে খেলতে পারবে না।’
তেভেজ এমনটা করেছেন বলেই বেশি হতাশ মানচিনি, ‘সে গত বছর চলে যেতে চেয়েছিল। দুই বছর ধরে আমি ওকে প্রতিটি মুহূর্তে সাহায্য করেছি। কিন্তু খেলতে অস্বীকৃতি জানাল। কার্লোস বলেই আমি ভীষণ হতাশ। বায়ার্ন মিউনিখ, মিলান বা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোনো খেলোয়াড় এমন করছে, চিন্তা করতে পারেন? কোনো একজন সতীর্থদের সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, শীর্ষ একটা ক্লাবে এটা হতে পারে না।’
অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনা ছাড়ার সময় তেভেজকে খুব একটা উত্তেজিত বা অস্থির মনে হয়নি। পরে প্রতিক্রিয়ায়ও উড়িয়ে দিয়েছেন কোচের সব অভিযোগ, ‘আমি ওয়ার্মআপ করেছিলাম, মাঠে নামার জন্য প্রস্তুতও ছিলাম। কেন এমনটা হয়েছে, সেসব বিস্তারিত জানানোর সঠিক সময় এখন নয়। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি কখনোই খেলতে অস্বীকৃতি জানাইনি। এটা ঠিক, গত মৌসুমে আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম পারিবারিক কারণে, কিন্তু সব সময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।’ ২৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের বিশ্বাস, সমর্থকেরা অন্তত তাঁকে বুঝতে পারবেন, ‘মিউনিখে ভুল বোঝাবুঝি যা হয়েছে, সেজন্য আমি ম্যানচেস্টার সিটির সব সমর্থকের কাছে ক্ষমা চাইছি। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ, তারা জানে মাঠে আমি সব সময় নিজেকে উজাড় করে দিই। সাইড বেঞ্চে কিছু বিভ্রান্তি হয়েছে, আমার মনে হয় আমাকে সবাই ভুল বুঝছে। সামনে যেকোনো সময় আমি মাঠে নেমে নিজের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছি।’
মানচিনি-তেভেজের দাবি দুই রকম। তবে প্রকৃত ঘটনার কিছুটা বোঝা যেতে পারে সিটির সহকারী কোচ ডেভিড প্ল্যাটের প্রতিক্রিয়া থেকে, ‘সাইড বেঞ্চে যা-ই ঘটুক, যত তর্কবিতর্কই হোক না কেন, কোনো খেলোয়াড় যদি ওয়ার্মআপ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাকে ক্ষমা করা যায় না।’
তেভেজের পুরো ইংল্যান্ড অধ্যায়টাই অবশ্য ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। ২০০৬ সালে করিন্থিয়ানস থেকে ওয়েস্টহামে আসার সময় বড়সড় ঝামেলা হয়েছিল, কারণ, তাঁর স্বত্ব ছিল তৃতীয় আরেকটি পক্ষের। মাসের পর মাস চলে এই ঝামেলা, পরে ৯০ লাখ ডলার জরিমানাও গুনতে হয় ওয়েস্টহামকে। এক বছর পরই আবার ওয়েস্টহাম ছেড়ে যান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। রেড ডেভিলদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগও জেতেন। কিন্তু দ্বিতীয় মৌসুমেই আবার সম্পর্কের টানাপোড়েন। এরপর ৩২ মিলিয়ন পাউন্ড ট্রান্সফার ফি আর সাপ্তাহিক ৩ লাখ ১৪ হাজার ডলার বেতনে আসেন সিটিতে। সেখানে প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। কিন্তু মৌসুম শেষে এই ক্লাবও ছাড়তে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন, কারণ ম্যানেচেস্টার শহর তাঁর ভালো লাগে না, মন পড়ে থাকে পরিবারের কাছে!’
ভিন্ন পথে হলেও তেভেজের ইচ্ছেই মনে হয় পূরণ হচ্ছে। মানচিনি জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান খালদুন আল মুবারকের সঙ্গে কথা বলে কয়েক দিনের মধ্যেই তেভেজের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.