সততাই বড় শক্তি মুশফিকের

খুব ভালো একটা ছেলে—মুশফিকুর রহিমকে যারা চেনে, তার সম্পর্কে বলতে গেলে সবার আগে বলবে এ কথাটিই। এ রকম ছেলে কমই আছে। তবে অধিনায়ক হিসেবে মুশফিক কেমন হবে, এখনই বলতে পারব না। ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলের, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্ব করেছে। জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক ছিল। অভিজ্ঞতা যেহেতু আছে, মুশফিকের জন্য কাজটা অনেক সহজ হবে। অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে এ দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল ও।
আপাতত দুটি সিরিজের জন্য অধিনায়কত্ব পেয়েছে মুশফিক এবং দুটি সিরিজই মোটামুটি বড় দলের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে হারলেও আমাদের কিছু খেলোয়াড় ভালো করেছে। সামনের দুই সিরিজে আরও ভালো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স থাকতে হবে। আমার বিশ্বাস, অলক কাপালি দলে থাকবে। এ রকম আরও কয়েকজন খেলোয়াড় দলে পেলে মুশফিকের জন্য ভালো হবে। শুধু অধিনায়কের নেতৃত্বগুণ দিয়েই তো আর সাফল্য আসবে না, সবাইকেই ভালো পারফর্ম করতে হবে।
টিমম্যান হিসেবে মুশফিক দারুণ। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। মুশফিক জাতীয় দলে এসেছে অনেক কম বয়সে। দেখতে ছোটখাটো। ওকে নিয়ে তাই দলের মধ্যে অনেক দুষ্টুমি হয়। আমি নিজেও অনেক দুষ্টুমি করি। ভালো টিমম্যান বলেই মুশফিকও সব সময় এগুলো দুষ্টুমি হিসেবেই নিয়েছে। তবে ও এখন অধিনায়ক। আমার বিশ্বাস, দলের সবাই তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেবে।
আমি খুব অল্প সময়ের জন্য জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছি। আমার দলে সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে আশরাফুল ছিল, এর পরই ছিল সাকিব-তামিম-মুশফিক। দলের অনেক বিষয়েই তাদের সঙ্গে আলাপ করতাম। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্ব দিতাম মুশফিকের কথাকে। ও দলের উইকেটকিপার। কোন বোলার ভালো বল করছে, কোন বোলার খারাপ করছে—এসব বোঝা অনেক সহজ কিপারদের জন্য। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদেরও সে অনেক কাছ থেকে দেখে। একেক ব্যাটসম্যান একেক রকম ফুটওয়ার্ক নিয়ে খেলে। কোন ব্যাটসম্যানের সময় কোন বোলার আনতে হবে, সেটাও ভালো বুঝতে পারে। মুশফিক অধিনায়ক হওয়ায় বোধ হয় এদিক দিয়েই বেশি ভালো হলো দলের।
দলে এখন যারা আছে, তাদের মধ্যে অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকই সেরা পছন্দ ছিল। ভালো ছেলে। নিজের খেলা, নিজের কাজ ও পরিশ্রমের প্রতি সত্। সততাই সবচেয়ে বড় শক্তি ওর। আর ব্যক্তিগত জীবনটাও যথেষ্ট সুশৃঙ্খল। এদিক দিয়েও মুশফিককে অধিনায়ক করা ভালো সিদ্ধান্ত। এখন ও ভালো করবে কি না, সেটা সময়ই বলবে।
তবে মুশফিকের ভালো অধিনায়ক হওয়াটা শুধু তার ওপরই নির্ভর করছে না, দলের সবাই তাকে কীভাবে সমর্থন করবে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলেছি, খেলোয়াড় মুশফিকের সঙ্গে দলের সবার সম্পর্কই অন্য রকম। কিন্তু অধিনায়ক মুশফিককে শ্রদ্ধাও করতে হবে আমাদের। দলের আরও যে ১৪-১৫ জন খেলোয়াড় থাকবে, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে মুশফিককে অধিনায়কের মর্যাদা দেওয়া। সে যে নির্দেশ দেবে, সেটা পালন করা। আর মুশফিককেও যেভাবেই হোক, দলের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ওর উচিত হবে কে কী বলল, ভাবল—সেসব না ভেবে নিজের কাজটা চালিয়ে যাওয়া। তার যেটা ভালো মনে হবে, সেটাই করা উচিত। কেউ কথা না শুনলে সে-ই পস্তাবে, মুশফিকের কিছু হবে না।
মুশফিককে আমি অধিনায়ক হিসেবে দেখিনি, তবে ওর নেতৃত্বগুণের প্রমাণ অনেকবারই পেয়েছি। দুই-আড়াই বছর ধরে মুশফিক দলে অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনেক কথা বলেছে। অধিনায়ক থাকার সময় আমি অনেক কিছুই ওর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। ও নিজেও অনেক কিছু বলত। আর মাঠে তো অসাধারণ! সবাইকে চাঙা রাখে। মাঠের বাইরের জীবনের কারণে মুশফিক অনেকের রোল মডেলও হতে পারে। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে অনুশীলনে সম্ভবত মুশফিকই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে।
মুশফিক ডেপুটি হিসেবে পেয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। রিয়াদ নেতৃত্বে একেবারেই নতুন। তবে আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে রিয়াদ ছাড়া আর কেউ ছিলই না। জিম্বাবুয়ে সিরিজে পারফর্ম করতে না পারলেও রিয়াদ ভালো ক্রিকেটার। নতুন দায়িত্বে সে খারাপ করবে না। আমরা জানি, মুশফিক-রিয়াদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো। মাঠের বাইরেও তারা ভালো বন্ধু। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অধিনায়ক আর সহ-অধিনায়কের এই বোঝাপড়া ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.