উত্তরসূরির কাছে মাসুদের চাওয়া

আমাদের কিন্তু অনেক মিল। দুজনই উইকেটকিপার, ব্যাটিংটা উপভোগ করি, দুজনই রাজশাহী বিভাগের, রাজশাহীকে নেতৃত্ব দিয়েছি, জাতীয় দলের অধিনায়কও...’—যে জন্য তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া, দুজনের মধ্যকার মিলের কথাগুলো খালেদ মাসুদ নিজেই চটপট বলে দিলেন।
তবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট অধিনায়কের সঙ্গে অষ্টম টেস্ট অধিনায়কের সম্পর্কের শেষ নয় এখানেই। ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে কাছ থেকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন মাসুদ। একসময় দুজন হয়ে উঠেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী, সময়ের বাস্তবতায় একসময় মুশফিককে জায়গাও ছেড়ে দিতে হয়েছে। মাঠের বাইরে আবার দুজনের খুব হূদ্যতা।
ক্রিকেটার মুশফিকুরের গুণমুগ্ধ মাসুদ নিজেও। তাঁর মতে, এ মুহূর্তে সম্ভাব্য সেরা পছন্দকেই অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে বিসিবি। উত্তরসূরির প্রতি ভালোবাসায় নয়, ব্যাখ্যা দিলেন যুক্তি দিয়েই, ‘অধিনায়কত্বটা এই মুহূর্তে ওরই সবচেয়ে প্রাপ্য ছিল। অনেক আগে থেকেই কিন্তু ওকে অধিনায়ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিকেএসপিতে অধিনায়কত্ব করেছে, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে করেছে। ও জন্মগতভাবেই নেতা।’
জাতীয় দলে, বিভাগীয় দলে মুশফিককে কাছ থেকে দেখেছেন। মুশফিকের মাঝে সহজাত নেতৃত্বগুণের কোন ব্যাপারটা চোখে পড়েছে? মাসুদের উত্তরটাই বলে দেবে, মুশফিককে জানেন বেশ ভালোভাবেই, ‘ও খুবই ডিসিপ্লিনড, সময় মেনে চলে। নিজেও ছিমছাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। সবকিছুই খুব গোছানো। সবকিছুর জন্য আলাদা সময় করে রাখে, সেই সময়ের এদিক-ওদিক হয় না। এই ব্যাপারগুলো হয়তো বেশির ভাগই মাঠের বাইরের, কিন্তু মাঠেও কিন্তু এসব সাহায্য করে।’
যাঁকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন, ছিল কাছের ‘ছোট ভাই’, একসময় সেই হয়ে দাঁড়াল প্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই দুটি টেস্ট খেলেছেন মুশফিক। ২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে উইকেটের পেছনেও দাঁড়ালেন মাসুদের জায়গায়। এই লড়াই কিন্তু দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কে প্রভাব ফেলেনি বলেই জানালেন মাসুদ, ‘মাঠ-মাঠের বাইরের জগৎটাকে আমি সব সময় আলাদা রাখি। মাঠের ভেতরে সবাই পেশাদার, ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা নেই। কিন্তু বাইরে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো।’
উইকেটকিপাররা ভালো অধিনায়ক হন না—ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রচলিত কথাগুলোর একটি। প্রতিটি বলে নিজেকে মনোযোগ দিতে হয়, দল নিয়ে এত ভাবার সময় কোথায়! কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এই ধারণাকে উড়িয়ে দিলেন মাসুদ, ‘আমি বরং বলি এর উল্টো। উইকেটকিপাররা সবকিছু ভালোভাবে দেখে, পরিস্থিতি বোঝে। ধোনিকে দেখেন, ও কি ভালো অধিনায়ক নয়? তবে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। দল বেশির ভাগ সময়ই হারে, অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। অনেক সময় এসব নিজের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রেই যেমন আমি বলব, সাকিব দারুণ করেছে। আশা করি, মুশফিক ওকে অনুসরণ করবে, ঠান্ডা মাথায় কাজ করে যাবে।’
পরামর্শ তো হলো, এবার উত্তরসূরির কাছে প্রত্যাশা? ‘আশা করি, দলটাকে গুছিয়ে টিম বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। শুধুু ক্রিকেট দলের নয়, মানুষের অধিনায়ক হবে। মানুষ অনুভব করবে, মুশফিক আমাদের অধিনায়ক।’

No comments

Powered by Blogger.