ইয়েমেনে সরকারবিরোধীদের সঙ্গে সেনাদের ব্যাপক সংঘর্ষ

গোলাগুলি আর শক্তিশালী বিস্ফোরণে গতকাল মঙ্গলবার টানা তৃতীয় দিনের মতো টালমাটাল ছিল ইয়েমেনের রাজধানী সানা। দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষত্যাগী সেনাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের অনুগত সেনাদের সংঘর্ষে গতকাল অন্তত সাতজন নিহত হয়। আহত হয় কমপক্ষে ১৬ জন। এ নিয়ে গত তিন দিনে অন্তত ৫৯ জন নিহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাতে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এরপর সংঘর্ষ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। গতকাল সকালে আবার প্রচণ্ড সংঘর্ষ শুরু হয়। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর ছেলে আহমেদের নেতৃত্বে রিপাবলিকান গার্ডের সেনারা গতকাল চেঞ্জ স্কয়ার ঘিরে থাকা পক্ষত্যাগী সেনাদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে চেঞ্জ স্কয়ার বিক্ষোভকারীদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পক্ষত্যাগী জেনারেল আলী মোহসেন আল আহমার।
গতকাল চেঞ্জ স্কয়ারের আশপাশের এলাকা ও এর কাছেই আল জুবায়েরি সড়কে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। চেঞ্জ স্কয়ার লক্ষ্য করে মর্টারের গোলা ছোড়া হয়। ছোড়া হয় বিমানবিধ্বংসী গোলাও। স্থানীয় হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা পক্ষত্যাগী সেনাদের বরাত দিয়ে জানান, সংঘর্ষে চারজন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন সেনা নিহত হয়েছে।
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সরকারি কার্যালয়সহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সংগঠকেরা দাবি করেন, বিক্ষোভের কেন্দ্র বিস্তৃত হয়েছে। চেঞ্জ স্কয়ার হয়ে আল জুবায়েরি সড়ক পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় দেড় লাখ মানুষ সমবেত হয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। তবে নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে তাদের এ দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেনারেল আহমারের সেনা ও বিক্ষোভকারীদের গঠিত নিরাপত্তা কমিটির সদস্যরা ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে। সেখানে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তল্লাশি চালানোর পর অনুমতি দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত সোমবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে তিনজন পক্ষত্যাগী সেনা রয়েছে। গত রোববার নিহত হয় ২৬ জন। বিক্ষোভকারী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, তিন দিনে অন্তত ৬০০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন গতকাল সহিংসতা বন্ধ ও প্রেসিডেন্ট সালেহকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
১৯৭৮ সাল থেকে ইয়েমেনের ক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ। দেশটির বিরোধী জোট তাঁর বিরুদ্ধে নিপীড়ন, জুলুম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবিতে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ করছে।

No comments

Powered by Blogger.