নাৎসিদের পক্ষে কাজ করেছিলেন শ্যানেল

ফ্যাশন-দুনিয়ার সবচেয়ে পরিচিত নামগুলোর অন্যতম কোকো শ্যানেলের নামের ওপর শক্ত হয়ে বসতে যাচ্ছে এক কালিমার দাগ: সত্যিই হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করেছেন তিনি।
নাৎসি জার্মানি অধিকৃত ফ্রান্সে গ্যাব্রিয়েল ‘কোকো’ শ্যানেলের কার্যকলাপ নিয়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই গুঞ্জন ছিল। নতুন একটি গ্রন্থে সরাসরি বলা হয়েছে নাৎসি বাহিনীর পক্ষে কাজ করেছেন এ ফ্যাশন আইকন।
সদ্য প্রকাশিত স্লিপিং উইথ দ্য এনিমি নামের নতুন বইয়ে ঐতিহাসিক হ্যাল ভন বলেছেন, ‘শ্যানেল ছিলেন চরম সুবিধাবাদী-প্রকৃতির। নাৎসিরা ক্ষমতায় ছিল। আর তিনি ক্ষমতাবানদের প্রতিই আকৃষ্ট হন।’ ঐতিহাসিক ভন এতে বলেন, ফ্যাশন ছাড়া কিছুই বুঝতেন না শ্যানেল। হিটলার, রাজনীতি, নাৎসিবাদ —এসব নিয়ে তাঁর কিছু আসত-যেত না।’
১৯৪০ সালে জার্মানি ফ্রান্স দখলের পরও শ্যানেল থেকে যান স্বদেশে। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে শ্যানেলের সম্পর্কের প্রকৃতি নিয়ে কানাঘুষা চলতে থাকে।
যুদ্ধের সময় শ্যানেল তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেও রহস্যজনকভাবে অধিকৃত ফ্রান্সের অভিজাত হোটেল রিটেজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তখন জার্মান নন এমন খুব কমসংখ্যক ব্যক্তিরই সে সুযোগ ছিল। এর মাধ্যমে তিনি নাৎসি মহারথীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে ৪৪ বছর বয়সী জার্মান কর্মকর্তা ব্যারন হ্যান্স গুয়েন্থার ভন ডিংকলাজের সঙ্গে সম্পর্কই শ্যানেলের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ। লেখক ভনের মতে, ওই কর্মকর্তা ছিলেন জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা আবওয়ের সদস্য। এই ডিংকলাজ শ্যানেলকে হোটেল রিটেজ প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি দখলদারদের সঙ্গে শ্যানেলের রমরমা ব্যবসার সুযোগ করে দেন। বিনিময়ে আবওয়েরের কর্মী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন শ্যানেল।
যুদ্ধ শেষে শ্যানেল সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে যান। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার থেকে রেহাই পান। অন্যদের মতে রাজপরিবারের সদস্য হওয়ায় তাঁর বিচার হয়নি। শ্যানেল ১৯৫৪ সালে প্যারিসে ফিরে এসে পুরোনো ব্যবসা শুরু করেন। ৮৭ বছর বয়সে ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে মৃত্যু হয় তাঁর।
ডাচেস অব উইন্ডসর, প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিপত্নী জ্যাকুলিন কেনেডি থেকে শুরু করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিপত্নী কার্লা ব্রুনি সারকোজি—সবাই পরিধান করেছেন শ্যানেলের প্রতিষ্ঠানের নকশার পোশাক। ‘ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি’জ চলচ্চিত্রে অড্রে হেপবার্নের পরা সুবিখ্যাত কালো পোশাকটিও শ্যানেলের করা। বিশ্বখ্যাত সুগন্ধি ‘শ্যানেল নাম্বার ফাইভ’ তাঁর হাউসের প্রথম পারফিউম।

No comments

Powered by Blogger.