বৃষ্টিভেজা আনন্দের জয়

অধিনায়ক বিপ্লবের নেতৃত্বে খেলোয়াড়েরা বিজয় মিছিল করলেন। কে যেন লাল-সবুজ পতাকা দোলালেন পাশ থেকে। গ্যালারি তখন করতালিমুখর। বৃষ্টিভেজা এই সন্ধ্যায় স্মরণীয় জয় উপহার দেওয়ার জন্য এটি বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের প্রাপ্যই। জয়টা অন্য সব জয়ের চেয়ে আলাদা। প্রতিপক্ষের নাম যে পাকিস্তান।
ঐতিহাসিক শত্রুকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে এক পা সামনে বাড়ল বাংলাদেশ। আগামী ৩ জুলাই লাহোরে পাকিস্তানের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচ। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে ম্যাচটা ৪-০ গোলে জিততে হবে পাকিস্তানকে। লেবাননের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলার স্বপ্ন এখন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। ২৩ জুলাই প্রথম লেগটা লেবাননে, ফিরতি ম্যাচ ২৮ জুলাই।
নতুন কোচ, নতুন অধিনায়ক...কাল বাংলাদেশও যেন নতুন এক দল। মাঠেও ছিল সেটির ছায়া। নিকোলা ইলিয়েভস্কি পছন্দ করেন আক্রমণাত্মক ফুটবল। ১১ জন একসঙ্গে খেলবে—ঢাকায় নেমেই বলেছেন। প্রথম ম্যাচে তাঁর শিষ্যরা কোচের চাওয়া পূরণ করেছেন। ‘জিতেই হবে’ প্রতিজ্ঞায় একটা দল হয়ে খেলতে পারারই ফসল এই বড় জয়।
লেবানন অভিযানে বাংলাদেশ ম্যাচের প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যায়। যাঁরা খেলা দেখেননি, তাঁদের পক্ষে অনুমান করা কঠিনই হবে কতটা স্বপ্নের মতো এই শুরু! এমনিতে দিনভর বৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠ ছিল ভারী। কিক-অফের পর বোঝা গেল, ঘাসের নিচে পানি জমে আছে। বল সরছে না।
কিন্তু এটা নিয়ে তখন আর ভাবার সময় কই! মাঝমাঠ থেকে বল গেল মোনায়েম খান রাজুর কাছে। কোচ ইলিয়েভস্কির ৪-৪-১-১ ছকে এমিলির পেছনেই দায়িত্ব ছিল রাজুর। সেটি ভালোভাবেই পালন করেছেন এবং অনেকের মতেই ম্যাচসেরা খেলোয়াড়। তবে এমন কাদাপানিতে একাকার মাঠে ছক বলতে কিছু আসলে থাকে না।
একজনকে কাটিয়ে রাজুর বক্সে তোলা ক্রসে হেড করলেন এমিলি, পাকিস্তানের বহু লড়াইয়ের নায়ক গোলরক্ষক জাফর খান বল হাতে লাগালেও পিচ্ছিল বল গড়িয়ে গড়িয়ে খুঁজে নেয় জাল। মাত্র ৩৮ সেকেন্ডে গোল! বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের দ্রুততম গোল। আর এই গোল এমিলিকে দিল চাপমুক্তির আনন্দ। ২০০৯ সাফ ফুটবলে ভুটানের বিপক্ষে শেষ গোল করেছেন। গোটা বারো ম্যাচের পর এমিলির গোল গড়ে দেয় জয়ের ভিত।
প্রথম মিনিটেই গোল খেয়ে সোজা হয়ে দাঁঁড়াতেই পারল না অতিথিরা। পাকিস্তান কোচ বলেছিলেন বাংলাদেশকে হারাতে না পারলে চাকরি ছেড়ে দেবেন। তাঁর জন্য দুঃসংবাদ হয়ে এল ম্যাচের ২২ মিনিট। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে বাংলাদেশের আক্রমণের তোড়ে ভেসে পাকিস্তান তখন খেয়ে বসেছে দ্বিতীয় গোলটি। এবার গোলদাতা জাহিদ।
শেখ জামালের হয়ে এমিলি তবু কয়েকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু রাইট উইঙ্গার জাহিদ দর্শকই ছিলেন এ মৌসুমে। কাল সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন। প্রায় মাঝমাঠ থেকে থ্রু পেয়ে একক প্রচেষ্টাতেই করলেন গোলটা।
ইংল্যান্ডের ফুলহামের সাবেক ডিফেন্ডার জেশ রহমানকে নিয়ে গড়া পাকিস্তান রক্ষণ খাবি খেয়েছে।
বাংলাদেশের গোল পাওয়ার কথা অন্তত সাত-আটটি। পাকিস্তান গোলবন্যায় ভাসেনি ১৩০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা জাফর খানের প্রতিরোধে। বাতাসে বেশ কয়েকটি আক্রমণ রুখেছেন। তবে ‘আক্রমণ’ বলাটা ভুল হবে। বল ঠেলেঠুলে সামনে নিয়ে যাওয়া আরকি! আর এই কাজটি বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের চেয়ে এত ভালোভবে করল, কোনো প্রশংসা সেজন্য যথেষ্ট নয়।
৫৬ মিনিটে প্রতি-আক্রমণ থেকে ৩-০। পাকিস্তানের একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ফেলেছেন বদলি ফরোয়ার্ড মিঠুন। বল পায়ে দারুণ সংযোগে এবার লক্ষ্য ভেদ করেন ডিফেন্ডার রেজাউল। তাতেই বড় জয়।
বাংলাদেশ দল আজ রাতেই উড়ে যাচ্ছে লাহোরে। ফেরার সময় হাতে থাকবে পরের রাউন্ডের টিকিট—এই প্রতিশ্রুতি যেন দিয়েই রাখলেন এমিলি, রাজুরা।
বাংলাদেশ দল: বিপ্লব, রেজাউল, মিশু, আরিফুল, নাসির (মামুন মিয়া), লিংকন, জাহিদ (মিঠুন), মামুনুল, শাকিল (কোমল), রাজু, এমিলি।

No comments

Powered by Blogger.