প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওসামার সবচেয়ে প্রিয়

স্ত্রীদের মধ্যে প্রথম স্ত্রী নাজওয়া ছিলেন ওসামা বিন লাদেনের সবচেয়ে প্রিয়। একমাত্র তাঁকেই ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন আল-কায়েদার এই নেতা। অন্য স্ত্রীদের সঙ্গে সে রকম প্রেম, ভালোবাসা গড়ে ওঠেনি তাঁর। পারিবারিক আয়োজনে তাঁদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তাঁর। বিয়ের আগে একটিবারের জন্যও দেখা হয়নি কাউকে।
মার্কিন লেখক জিন স্যাসন তাঁর নতুন বইয়ে এসব কথা বলেছেন। তিনি গ্রোয়িং আপ বিন লাদেন: ওসামাস ওয়াইফ অ্যান্ড সান টেইক আস ইনসাইড দেয়ার সিক্রেট ওয়ার্ল্ড নামের বইটিতে ওসামার পারিবারিক জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তুলে ধরেছেন।
স্যাসন তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ওসামার মামাতো বোন ছিলেন নাজওয়া। ওসামাকে বিয়ে করার পর সারাটা জীবন তাঁর দুর্ভোগে কেটেছে। বিশেষ করে, আফগানিস্তানে থাকাকালে সেখানকার রুঢ় পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা তাঁকে পুড়িয়েছে সারাক্ষণ।
বইটি লিখতে গিয়ে নাজওয়া ও তাঁর ছেলে ওমর বিন লাদেনের সহায়তা নিয়েছেন লেখক। তাঁদের কয়েকটি ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ওসামার সঙ্গে নাজওয়ার ভাব-ভালোবাসার নানা গল্প তুলে ধরেছেন স্যাসন।
সানডে টাইমস ও টাইম ম্যাগাজিন এ বইটিকে ‘আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে এখানে আল-কায়েদার নেতার যৌনজীবন উঠে আসায় গত সপ্তাহে এর সমালোচনাও করা হয়েছে।
বইটিতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক প্রেম ও শ্রদ্ধাবোধ থেকেই নাজওয়া ও ওসামা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে নাজওয়ার মা চাননি তাঁর মেয়ে ওসামাকে বিয়ে করুক। কেননা, বিয়ের পর মেয়ে সিরিয়া ছেড়ে সৌদি আরবে চলে যাক, তা তিনি চাননি। কিন্তু ১৫ বছরের নাজওয়া তাঁর ১৭ বছরের ফুফাতো ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। তাই তাঁকে আটকানো যায়নি।
বিয়ের পর সৌদি আরবে গিয়ে নাজওয়াকে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে। সিরিয়ার মতো একটি তুলনামূলক উদার সমাজ থেকে গিয়ে সেখানে নতুন অনেক কিছুর সঙ্গে তাঁকে খাপ খাওয়াতে হয়েছে। সবচেয়ে কঠিন কাজটি ছিল রান্নাঘর সামলানো এবং মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।
ঘন ঘন সন্তান নেওয়ায় নাজওয়ার দুর্ভোগটা বেড়ে গিয়েছিল আরও বহু গুণ। তা ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস স্টোভসহ এ ধরনের জিনিসের ব্যবহারে তাঁর ওপর ছিল স্বামীর নিষেধাজ্ঞা। তাই বাধ্য হয়ে বিশাল একটি পরিবারের সব খাবার তাঁকে একটিমাত্র ছোট চুলায় রান্না করতে হয়েছে।
বিয়ের আগে ছবি আঁকতে ও ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করতেন নাজওয়া। এ ছাড়া টেনিস খেলা ও বাইসাইকেল চালানো উপভোগ করতেন। কিন্তু বিয়ের পর তাঁর এই সবকিছুই শেষ হয়ে যায়।
লেখক বলেছেন, নাজওয়া ছবি তুলতেও পছন্দ করতেন। ওসামা তাঁকে সন্তান ও পরিবারের ছবি তুলতে দিলেও অন্য কিছু ক্যামেরাবন্দী করতে ছিল মানা।
আফগানিস্তানে পাড়ি জমানোর আগে মাঝেমধ্যেই ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয়েছে তাঁদের। তবু ওসামা ও নাজওয়ার দাম্পত্য-জীবন ছিল সুখময়।
স্বামীর সঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় নাজওয়াকে থাকতে হয়েছে, যেখানে মাথার ওপর ছিল পাথরের ছাদ। কিছুদিন কাটে পরিত্যাক্ত একটি সামরিক ঘাঁটিতে, যেখানে বিদ্যুৎ ছিল না। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সব প্রতিকূল পরিবেশেই খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন নাজওয়া।

No comments

Powered by Blogger.