অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারও হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়াল্লেম গতকাল বুধবার বলেছেন, তাঁর দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। সিরিয়ার বাইরের কেউ তাঁদের ওপর কোনো মতামত চাপিয়ে দিতে পারবে না। ইউরোপীয়দের সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় সিরীয় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এদিকে সিরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগসূত্র আছে, এমন চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুয়াল্লেম বলেন, ‘সিরিয়ার জনগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তার পরও আমরা নিজেরাই মতৈক্যে পৌঁছাতে পারব।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালাবে, তিনি তা মনে করেন না। মুয়াল্লেম অভিযোগ করেন, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁলা জুপে ঔপনিবেশিক মোহে আচ্ছন্ন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার মন্তব্য করেছিলেন, জনগণকে নিপীড়নের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যে অবস্থানে পৌঁছেছেন, সেখান থেকে ফিরে আসা যায় না।
সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সংস্কারকামীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সরকারি বাহিনীও কঠোরভাবে তা মোকাবিলা করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আরও সাতজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
ইইউ ইতিমধ্যে সিরিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর আওতায় সিরিয়া সরকারের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং তাঁদের ভিসা দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরও কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স একটি তালিকা তৈরি করেছে।
যুক্তরাজ্যের তালিকায় অন্তত দুজন ইরানি নাগরিকের নাম রয়েছে, যাঁরা সিরিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে সমর্থন দিচ্ছেন। ইইউয়ের এক কূটনীতিক জানান, জোটটির ২৭ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে একটি এখনো যুক্তরাজ্যের তালিকা অনুমোদন করেনি। তবে ফ্রান্সের তালিকা সব সদস্যরাষ্ট্রেরই অনুমোদন পেয়েছে।
ইইউয়ের ওই কূটনীতিক জানান, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা সরকারবিরোধীদের দমন-পীড়নে জড়িত আর প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগসূত্র রয়েছে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে।
গত মে মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং দেশটির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ।
সরকারবিরোধীরা জানান, হোমস, হামা ও মায়াদিনে মঙ্গলবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত সাতজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। মায়াদিন এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সেনারা গুলি চালালে সাতজন নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় কয়েকজন।
হোমস শহরের দুজন বাসিন্দা জানান, গোপন পুলিশের সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে মিছিল বের হয়। এর জবাব দিতে সরকারবিরোধীরা সমাবেশ করতে চাইলে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এদিকে দেরা শহরে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক হাজার মানুষ সরকারবিরোধী মিছিল বের করলে, তা ছত্রভঙ্গ করে দিতে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী।
সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। মহাসচিব হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বিভক্তির কারণে সিরিয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না—এ কথা অস্বীকার করেন বান কি মুন।
সিরিয়ায় গত মার্চ মাস থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত এক হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আসাদের পদত্যাগ, রাজনৈতিক স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারবিরোধীরা।

No comments

Powered by Blogger.