যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি বড় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন লাদেন

মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে হটাতে ৯/১১-এর মতো আরও একটি ব্যাপক বিধ্বংসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন। তিনি মনে করছিলেন, মার্কিন স্বার্থের ওপর যে ছোট ছোট আঘাত হানা হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিতাড়িত করার জন্য যথেষ্ট নয়। অ্যাবোটাবাদের গোপন আস্তানা থেকে উদ্ধার করা লাদেনের ডায়েরি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, লাদেন তাঁর শেষ দিনগুলোতে কতসংখ্যক মার্কিন নাগরিককে হত্যা করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাততাড়ি গোটাবে, সেই হিসাব কষছিলেন। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, লাদেন ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নিজের হাতে লিখেছেন, ছোট ছোট হামলায় আল-কায়েদা তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। ৯/১১-এর মতো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত আরেকটি আঘাত হানতে পারলে মার্কিনদের টনক নড়বে। এটা করতে পারলে তারা মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে তাদের নীতি বদলাতে বাধ্য হবে। তবে লাদেন তাঁর অনুসারীদের ছোট ছোট শহরের স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন লাইনে হামলা চালানোরও আহ্বান জানিয়েছেন বলে ওই সব নথিপত্রে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নথিপত্রে দেখা গেছে, বড় ধরনের হামলার সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাই এবং ৯/১১ হামলার দশম বার্ষিকীর মতো তাৎপর্যপূর্ণ দিনকে লাদেন বেছে নিয়েছিলেন। হামলার লক্ষ্য হিসেবে শুধু নিউইয়র্ক নয়, লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহরগুলোও তাঁর পছন্দের তালিকায় ছিল।
কর্মকর্তারা বলেছেন, অ্যাবোটাবাদের বাড়ি থেকে ডায়েরি ও কাগজপত্র ছাড়াও প্রায় এক শ ফ্ল্যাশ ড্রাইভ এবং পাঁচটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়। মার্কিন বিশেষজ্ঞরা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বাড়িতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ না রেখে লাদেন ফ্ল্যাশ ড্রাইভের মাধ্যমে অনুসারীদের নির্দেশনা দিতেন।
লাদেনের লাশের ছবি: মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির একজন রিপাবলিকান সদস্য গত বুধবার সিএনএনকে বলেছেন, তিনি স্বচক্ষে বিন লাদেনের লাশের ছবি দেখেছেন। ওকলাহোমা থেকে নির্বাচিত জেমস ইনহোফ নামের ওই সিনেটর বলেছেন, সিআইএ আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সদস্যদের মোট ১৫টি ছবি দেখিয়েছে। এর মধ্যে অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে ওসামার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তোলা নয়টি ছবি রয়েছে। তিনটি ছবিতে ইউএসএস.ভিনসেন নামের বিমানবাহী রণতরীতে রাখা লাদেনের লাশ দেখা গেছে। ওই রণতরী থেকে তাঁর লাশ আরব সাগরে সমাহিত করা হয়। বাকি তিনটি ছবি ছিল লাদেনের আগের ছবি। লাশটি যে আসলেই লাদেনের, তা বোঝার জন্য তুলনামূলক প্রমাণ হিসেবে শেষোক্ত তিনটি ছবি তাঁদের দেখানো হয়।
ইনহোফ বলেছেন, ছবিগুলো দেখে তিনি শতভাগ নিশ্চিত হয়েছেন যে লাশটি আসলেই লাদেনের। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, সে (লাদেন) নেই। সে এখন কেবলই ইতিহাস।’ তিনি আরও বলেন, তিনি দেখেছেন, একটি চোখের কোটরে বিশাল গর্ত। মাথার পেছন দিক থেকে মগজ বেরিয়ে গেছে। ছবিগুলো দেখতে আসলেই বীভৎস। ছবিগুলোকে ‘বীভৎস’ বলে স্বীকার করলেও তিনি এ ছবি প্রকাশ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এ ছবি প্রকাশ করলে মুসলমানদের মধ্যে মার্কিন-বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.