উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আন্তসীমান্ত আলোচনা পণ্ড

উত্তেজনা প্রশমনে দুই কোরিয়ার মধ্যকার সামরিক আলোচনা ভেস্তে গেছে। গতকাল বুধবার কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনা থেকে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিরা বেরিয়ে যাওয়ায় আলোচনা পণ্ড হয়ে যায়। এর ফলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হলো। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। গত নভেম্বরে দুই কোরিয়ার মধ্যে গোলা বিনিময়ের ঘটনার পর এটাই ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রথম আন্তসীমান্ত আলোচনা।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আলোচনা শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদল আলোচনার টেবিল ছেড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে চলে যায়। এমনকি ফের কবে আলোচনায় বসা যেতে পারে, সে বিষয়টি নিয়েও তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে পারি, প্রাথমিক আলোচনা ভেস্তে গেছে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঠিক কী কারণে আলোচনা ভেস্তে গেছে, সে সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শীর্ষ পর্যায়ের আলোচ্যসূচি নির্ধারণ নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় এ আলোচনা ভেস্তে গেছে।
স্থানীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়া গত বছর সিউলের বিরুদ্ধে দুটি বড় ধরনের হামলার জন্য উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশের দাবি জানিয়েছিল। ওই দুটি হামলায় ৫০ জন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক মারা যায়। কিন্তু উত্তর কোরিয়া এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়েও আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নপিয়ং দ্বীপে উত্তর কোরিয়ার গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় চারজন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক নিহত হয়। এ ছাড়া মার্চে দক্ষিণ কোরীয় যুদ্ধজাহাজে উত্তর কোরিয়া টর্পেডো হামলা চালায়। এতে মারা যায় ৪৬ জন। তবে পিয়ংইয়ং টর্পেডো নিক্ষেপের অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী পানমুনজম গ্রামে কর্মকর্তা পর্যায়ের এ আলোচনা শুরু হয়। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন ও পরবর্তী শীর্ষ পর্যায়ের আলোচ্যসূচি ও দিনক্ষণ নির্ধারণই ছিল এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য।
দক্ষিণ কোরিয়া গতকাল দিনের শুরুতে বলেছিল, উত্তর কোরিয়া বিভিন্ন মানবিক বিষয় নিয়ে আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে তারা নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। এর মধ্যে ছিল কোরীয় যুদ্ধের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর পুনর্মিলন, যৌথ পর্যটন বাণিজ্য ও শিল্প প্রকল্প।
দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রণালয় বলেছে, তবে এখন আলোচনা পুনরায় শুরু হলেও এসব বিষয় নিয়ে আর আলোচনা হবে না।
সিউল বলেছে, ২০১০ সালের ওই দুটি হামলার ঘটনায় উত্তর কোরিয়া দুঃখ প্রকাশ করলে এবং এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিলেই দুই কোরিয়ার মধ্যে ফের সুসম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় আসবে। তবে পিয়ংইয়ং বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে সব সামরিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে উসকানিমূলক তৎপরতা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.