জয়ের আনন্দ ছাপিয়ে নতুন বিতর্ক

আবদুল রাজ্জাকের বলে জেমস অ্যান্ডারসন বোল্ড হতেই ‘বিশ্বজয়ের’ আনন্দ করেছে পাকিস্তান। চোটের কারণে বাইরে চলে যাওয়া কামরান আকমল ও বোলিং স্পেল শেষ করে বাইরে যাওয়া শোয়েব আখতার ড্রেসিংরুমে জড়াজড়ি ধরে লাফাচ্ছিলেন। স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত দলের বহু কাঙ্ক্ষিত জয়—উল্লাসটা বাঁধভাঙাই হওয়ার কথা। কিন্তু ২৩ রানের দারুণ এক জয়ে সিরিজে টিকে থাকা বা উমর গুলের ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং (৬/৪২), সবকিছুই এখন পানসে লাগতে পারে পাকিস্তানিদের কাছে। পরশু ওভালের এই ম্যাচ নিয়েই যে নতুন করে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে!
নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর পর এবার বোমা ফাটিয়েছে একই মালিকানাধীন আরেক ট্যাবলয়েড দ্য সান। স্পট ফিক্সিংয়ের চেয়েও নতুন অভিযোগটি আরও সুনির্দিষ্ট। দ্য সান-এর দাবি, তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তান ইনিংসের গতিপথ নির্ধারিত ছিল আগেই! দুবাইভিত্তিক এক কুখ্যাত ম্যাচ পাতানোর কারিগর ও দিল্লির এক বাজিকরের টেলিফোন কথোপথকন থেকে পত্রিকাটির ‘আন্ডারকাভার টিম’ পুরো ব্যাপারটা জানতে পারে। জানার পরপরই সাবেক পুলিশ প্রধান স্যার রোনি ফ্ল্যানাগানের নেতৃত্বাধীন আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে ব্যাপারটা জানায় দ্য সান। পত্রিকাটি বারবার জানানোর পর আইসিসি পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ শুরু হয়ে যায়।
দ্য সান আইসিসিকে যা যা বলেছিল, পাকিস্তানের ইনিংসটাও ঠিক সেভাবেই এগিয়েছে। পাকিস্তানে ইনিংস চলার সময় পত্রিকাটির দাবির সপক্ষে প্রমাণ পাওয়ার পর ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই তদন্ত শুরু করে দেয় আইসিসি। প্রাথমিকভাবে তদন্ত এগোচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে পাকিস্তানের রান করার ধরন ও নির্দিষ্ট দুটি ওভারকে কেন্দ্র করে। ধারণা করা হচ্ছে, দলে একজন নাটের গুরু আছেন যিনি বাজিকরদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের চাহিদামতো খেলতে সবাইকে সংগঠিত করেন। তবে তদন্তের স্বার্থে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি দ্য সান বা আইসিসি।
তদন্ত শুরুর কথা নিশ্চিত করেছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত। তবে তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ছিল সতর্ক, ‘একটি সূত্র দ্য সানকে জানিয়েছিল, ম্যাচের নির্দিষ্ট কিছু পর্যায়ে রান করার ধরন হবে নির্দিষ্ট এবং খোলামেলাভাবে বলতে গেলে, সত্যি সত্যি তাই হয়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত করা তাই আমাদের অবশ্যকর্তব্য, তবে এখনই আমরা বলছি না অনভিপ্রেত বা অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছে।’ তথ্য দেওয়ার জন্য দ্য সানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন লরগাত। দ্য সান-এর দাবি, শুধু এই ম্যাচ নয়, গত জুলাইয়ে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার একটি টেস্ট নিয়েও নাকি তদন্ত করছে আইসিসি। ওই টেস্টে বাজিকরদের নির্দেশনা অনুযায়ী খেলার জন্য কয়েকজনকে নাকি ৭ লাখ পাউন্ড দেওয়া হয়েছিল।
নতুন ‘কলঙ্ক’ জানার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসবকে ‘ফালতু অভিযোগ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। অনেকটা একই সুর ছিল পিসিবির প্রধান ইজাজ বাটের কণ্ঠেও, ‘এগুলো প্রমাণহীন সব অর্থহীন অভিযোগ। সবকিছুই বানোয়াট, কোনো সত্যতা নেই। আইসিসি এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানায়নি। পত্রিকার প্রতিবেদন আমি পড়িনি, তাই আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পাকিস্তানের ম্যানেজার ইয়াওয়ার সাঈদও। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছেন পাকিস্তানের ক্রীড়ামন্ত্রী আইজাজ জাখরানি। ভারতীয় টিভি চ্যানেল সিএনএন-আইবিএনকে জাখরানি বলেছেন, ‘আইসিসির ক্ষমতা আছে, দুর্নীতি দমন বিভাগ আছে, তারা আগে এগিয়ে যাক। তারা যদি কিছু প্রমাণ করতে পারে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
এমন অভিযোগ সত্ত্বেও কাল জরুরি সভায় বসে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিরিজটি চলবে। আরও স্বস্তির দিক, সন্দেহ শুধু পাকিস্তানের ইনিংস নিয়েই, ম্যাচের ফলাফল নিয়ে নয়। পাকিস্তানের জয় বা উমর গুলের ৬ উইকেটকে তাই বলা যায় মাঠের পারফরম্যান্সের ফসল, আগে থেকেই তৈরি করা চিত্রনাট্যের বাস্তবায়ন নয়। এএফপি, রয়টার্স, ওয়েবসাইট।
কলঙ্কিত ক্রিকেট
পাকিস্তানের ইনিংসের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে রান করার ধরন আগে থেকেই নির্ধারিত বলে ম্যাচের আগেই আইসিসিকে জানিয়েছিলদ্য সান। পরে সত্যিই হয়েছে তাই।
পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই তদন্তে নেমেছে আইসিসি। ধারণা করা হচ্ছে, দলে একজন নাটের গুরু আছেন যিনি বাজিকরদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের চাহিদামতো খেলতে সবাইকে সংগঠিত করেন।
সন্দেহ শুধু পাকিস্তানের ইনিংস নিয়ে, ম্যাচের ফলাফল নিয়ে নয়।

No comments

Powered by Blogger.