অথচ তায়কোয়ান্দোতে আসতে চাননি by আবিদুল ইসলাম

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) ভেতরে বসে বাইরে নামা অন্ধকারকে উপলব্ধি করার উপায় ছিল না। বিজলিবাতির কারণে নয়। বিজলিবাতির ঝা চকচকে আলোকে হার মানিয়ে এনএসসি জিমনেসিয়ামে ঠিকরে পড়ছিল সোনার ছটা। একটু আগেই যে তায়কোয়ান্দোতে বাংলাদেশকে কাল সোনা এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের থানা তেঁতুলিয়ার আজিজপুর গ্রামের মেয়ে শারমিন ফারজানা রুমি।
সোনালি হাসি ঠিকরে পড়ছিল শারমিনের মুখ থেকেও। সেই হাসি মুখে নিয়ে তায়কোয়ান্দো কোটটা দুবার ঘুরে এলেন শারমিন। এসে বসতেই একটা প্রশ্ন ছুটে গেল তাঁর দিকে—এ পর্যন্ত কয়টা পা ভেঙেছেন, নাকই বা বোঁচা করেছেন কয় ডজন? ‘না, না; আমি ভাই মারামারি করি না। মারামারি একদমই পছন্দই করি না’—ত্বরিত উত্তর শারমিনের। অথচ একটু আগে ‘মারামারি করেই কিন্তু জিতে এলেন। তবে, ‘এটা খেলা!’
এই মারামারির খেলায় কীভাবে এলেন? শারমিন তাঁর গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেন। সে গল্প তাঁর হ্যান্ডবল খেলোয়াড় থেকে তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় হয়ে যাওয়ার গল্প। ‘জানেন, আমি এই খেলাটায় আসতে চাইনি। আমিও ভাবতাম এটা আবার কেমন খেলা। ভাবতাম আর হাসতাম একা একা। কিন্তু রানা স্যার (মাহমুদুল ইসলাম) আমাকে জোর করে নিয়ে এলেন। বলেছেন, তুমিই পারবে।’
শারমিন সত্যি পেরেছেন। কীভাবে পারলেন ব্যাখ্যা করলেন সেটিও। তাতে মিশে থাকল কৃতজ্ঞতা, ‘আসলে আমার সোনা জয়ে বড় অবদান রানা ও লি জু সাং স্যারেরই। ওনারা আমাকে সব সময় প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন।’ পরিবার আপনাকে কেমন সমর্থন দিয়েছে? ‘মা, বড় ভাই সবাই খুব অনুপ্রাণিত করেছেন’—বললেন শারমিন।
আফগানিস্তানের মেয়ে লায়লা হুসেইনকে হারিয়ে সোনা জয়ের পর কার কথা প্রথম মনে পড়েছে? ‘মা এবং বাবাকেই খুব মনে পড়েছে। আমার বাবা নেই। আমার যখন ৬ বছর বয়স, তখন মারা গেছেন তিনি। সোনা জয়ের পর আমার কাছে মনে হয়েছে বাবা এসে যেন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, তুমি দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছ। মা, তোমাকে আশীর্বাদ।’

No comments

Powered by Blogger.