নতুন সামরিক নীতি প্রকাশ করল রাশিয়া

ন্যাটোর সম্প্রসারণকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে একটি নতুন সামরিক পরমাণু মতবাদ বা নীতি নিয়েছে রাশিয়া। তাদের ওই মতবাদের সারকথা হলো, নিজেদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়লে রাশিয়া তাদের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে এবং সেই অধিকার তাদের রয়েছে। শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ওই নীতি অনুমোদন করেছেন।
সামরিক ওই মতবাদের ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো শক্তির বিস্তার এবং ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ জন্য রাশিয়া নতুন ওই নীতি নিয়েছে।
রাশিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রেমলিনের বর্তমান সামরিক বাহিনীতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব রয়েছে। একটি পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে সংস্কার চলছে তাও বেশ কষ্টসাধ্য। এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত হলে পারমাণবিক শক্তিকে শেষ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করছে রাশিয়া।
তবে নতুন নীতিমালায় আঞ্চলিক সংঘাতের ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের কথা বলা হয়নি। গত বছরই রুশ নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান নিকোলাই পাতরুশেভ ওই সুপারিশ করেছিলেন। সম্প্রতি ওই নীতিমালাটি প্রকাশ করা হয়।
সামরিক গবেষক আলেকজান্ডার গোল্টস বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি নিয়ে যারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়াতে চায়, কয়েকজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাদের পরাজিত করতে পেরেছেন। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার পাঁচ দিনব্যাপী এক সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ হয়। নতুন সামরিক মতবাদ বলছে, এখনো এ ধরনের আঞ্চলিক সংঘাত ও যুদ্ধের হুমকিতে রয়েছে রাশিয়া। এতে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার মূল হুমকির মধ্যে রয়েছে রুশ সীমানা ঘেঁষে ন্যাটো শক্তির বিস্তার, সীমানাজুড়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ঘটনা এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্রের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া।
কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিক বলেছেন, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা ডিঙিয়ে রাশিয়ার এই নীতি নেওয়ার একটি উদ্দেশ্য হলো উদীয়মান চীন ও ন্যাটো শক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া।
রাশিয়ার একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল শুক্রবার বার্তাসংস্থাকে বলেছেন, ১৯৬৮ সালে চীনের সঙ্গে সীমান্তবিরোধের পর থেকেই রাশিয়া তাদের এশীয় প্রতিবেশী ওই দেশটির সঙ্গে প্রচলিত যুদ্ধের ধারণা থেকে কার্যত সরে আসে। এখন রাশিয়া ফের আগের নীতিতে ফিরে যাচ্ছে।
এই মতবাদটি এমন সময় প্রকাশ করা হলো, যখন রুশ-মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার কমিয়ে আনার ব্যাপারে দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চলছে। দুদেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময় করা ঐতিহাসিক একটি চুক্তির মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়। এর পর গত ডিসেম্বরে ওই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। এ নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.