ওমরের বাবা ছেলের চরম পন্থা সম্পর্কে আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন! -মার্কিন বিমান উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা

যাত্রীবাহী মার্কিন বিমান উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার নাইজেরীয় যুবক ওমর ফারুক আবদুল মোতালেবকে (২৩) যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিমান ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওমর ফারুকের বাবা আলহাজি ওমারু মোতালেব দাবি করেছেন, তিনি আগেই তাঁর ছেলের এই পরিকল্পনা ও চরম পন্থার কথা মার্কিন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন।
ওমারু মোতালেব ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। দেশের রাজনীতিতেও তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি মার্কিন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেন, তাঁর ছেলে ধর্মীয়ভাবে প্রচণ্ড গোঁড়া। ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমস-এর কাছে স্বীকার করেছেন, তাঁরা এ রকম তথ্য পেয়েছিলেন। তবে তথ্যের উত্স ছিল অজ্ঞাত এক ব্যক্তি।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও কেন ওমরের নাম ‘নো ফ্লাইং’ তালিকায় ওঠেনি, এ নিয়ে ব্যাপক তদন্ত শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এফবিআই প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, ওমর যে তরল বিস্ফোরক ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন তা ছিল শক্তিশালী পিইটিএন। এটা পেন্টাইরিথ্রিটল নামেও পরিচিত। ওমর ওই দিন ৮০ গ্রাম পিইটিএন পলিথিনে মুড়িয়ে অন্তর্বাসে করে বিমানে ওঠেন। ইয়েমেনের আল-কায়েদার বোমা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে তিনি ওই বিস্ফোরক সংগ্রহ করেন।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে বড়দিনের প্রাক্কালে প্যারিস থেকে মিয়ামিগামী বিমানে জুতার মধ্যে বহন করা বোমা দিয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছিল। ওই ঘটনায় জড়িত ব্রিটিশ নাগরিক রিচার্ড রেইড এখন কারাগারে।
যেভাবে নস্যাত্ হলো হামলা: ডেট্রয়েটের বিমানবন্দরে অবতরণের কয়েক মিনিট আগে ওমর তাঁর কাছে থাকা সিরিঞ্জ বোমা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেন। যাত্রীদের মধ্যে এক ডাচ পর্যটক জেসপার শুরিঙ্গা (৩২) বিষয়টি টের পেয়েই ওমরকে প্রথমে জাপটে ধরেন। এরপর অন্যরা গিয়ে ওমরকে পাকড়াও করে।
জেসপার একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাও। ওই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বিমানটিতে হঠাত্ প্রচণ্ড শব্দ পেয়ে তিনি ফিরে তাকান। এ সময় তিনি ধোঁয়ার কটু গন্ধ পান। মুহূর্তের মধ্যে তিনি বুঝে যান এটা সন্ত্রাসী হামলা। তত্ক্ষণাত্ তিনি ওমরকে জাপটে ধরেন। বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ওমরকে অবশ্য আক্রমণাত্মক দেখা যায়নি। আটক করার সময়ও তিনি কাউকে বাধা দেননি।
নিরাপত্তা জোরদার: কথিত মার্কিন বিমান উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার ঘটনার খবরে বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দরগুলোয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রগামী সব বিমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গত শনিবার বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে যাত্রীদের জন্য কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। যাত্রীদের আপাদমস্তক তল্লাশির পর বিমানে উঠতে দেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণের শেষ এক ঘণ্টা যাত্রীদের আসন থেকে না ওঠার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভিসা দেওয়া হয়নি ওমরকে: দ্য সানডে টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, ওমর ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সম্প্রতি তিনি লন্ডনে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভিসা দেয়নি। ওমরের লন্ডনে অবস্থান নিয়ে স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্তে নেমেছে। প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেছেন, কথিত ওমরের লন্ডনের অবস্থানকালীন বাসস্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রেখে কাজ করা হচ্ছে।
শুক্রবার নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইনসের ওই বিমানটি ১১ জন ক্রু ও ২৭৮ জন যাত্রী নিয়ে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটে যাচ্ছিল। ডেট্রয়েটে অবতরণের কিছুক্ষণ আগে ওমর বিমানটি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান।

No comments

Powered by Blogger.