ল্যাপটপ জ্যোতিষী

নেপালি গৃহবধূ দীপশ্রী জোশি। নিজের ভূত-ভবিষ্যত্ জানতে একসময় ধরনা দিতেন জ্যোতিষীর চেম্বারে। ভবিষ্যত্ জানার জন্য তাঁকে সেখানে অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু দীপশ্রীকে এখন কোনো জ্যেতিষীর চেম্বারে যেতে হয় না, অপেক্ষা করতে হয় না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ললাটের লিখন জানার জন্য এখন শুধু একটি ফোনের কলই যথেষ্ট। দীপশ্রী এখন শুধু একটি ফোন করেই জেনে নিচ্ছেন নিজের ভাগ্যের লিখন।
বাসুদেব কৃষ্ণ শাস্ত্রী। তিনি সবার কাছে পরিচিত ‘ল্যাপটপ জ্যোতিষী’ হিসেবে। ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে টেলিভিশনে ফোন-ইন শো নামের একটি অনুষ্ঠান চালু করেন তিনি। তাঁর ওই অনুষ্ঠানে ফোন করে দর্শকেরা জেনে নিচ্ছেন নিজের ভাগ্যের লিখন। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানটি। জাতীয় সেলিব্রিটিতে পরিণত হন শাস্ত্রী। গড়ে ওঠে তাঁর বিশাল ভক্ত শ্রেণী।
এখন জ্যোতিষীর চেম্বারে না গিয়ে ওই অনুষ্ঠানে ফোন করে নিজের ভাগ্য জেনে নিচ্ছেন দীপশ্রী জোশির (৩৯) মতো হাজারো মানুষ। দীপশ্রী বলেন, এটা এতটাই সুবিধাজনক ও চমকপ্রদ যে টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে শুধু একটি ফোন করেই নিজের ভাগ্য জেনে নেওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের বিশ্বাস করি। কারণ তাঁদের দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণী প্রায়ই সঠিক প্রমাণিত হয়। আমার অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অনুষ্ঠানটি আমাকে সহায়তা করছে।’
ফোনদাতা ব্যক্তিদের ভবিষ্যত্ জানতে বিশেষভাবে তৈরি একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন শাস্ত্রী (৩৪)। অনুষ্ঠানে তাঁকে সহযোগিতা করেন একজন নারী উপস্থাপক। ফোনদাতা ব্যক্তির বিভিন্ন তথ্য কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করেন তিনি।
প্রথম দিকে অনুষ্ঠানটি সপ্তাহে এক দিন প্রচার করা হতো। কিন্তু অনুষ্ঠানটি এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে টেলিভিশন চ্যানেল কান্তিপুর টেলিভিশন এ অনুষ্ঠানটি প্রতিদিন প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়। সপ্তাহে প্রায় ৫০০ মানুষ অনুষ্ঠানে ফোন করে থাকে।
শাস্ত্রী বলেন, ‘গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের পরিবর্তন বিশ্বের সবাইকে প্রভাবিত করে থাকে। আজকের এই দিনে আপনি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছেন। জ্ঞান পুরোনো, কিন্তু আপনি নতুন নতুন চিন্তাধারা একীভূত করতে পারেন। এটা একটা ফিউশন।’ অনলাইনে গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য এখন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করছেন বাসুদেব কৃষ্ণ শাস্ত্রী।
শাস্ত্রীর অনুষ্ঠানে ফোন করছে স্কুলের শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ লোকজন। নানাজন নানা বিষয়ে জানতে চায়। জানতে চায় পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু করে বিয়ের খবর পর্যন্ত। স্কুলের শিশুরা ফোন করছে পরীক্ষার ফল জানতে। নাতি-নাতনিরা কাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, সেটা জানতে ফোন করছেন বয়োজ্যেষ্ঠ দাদুরা।
তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি জানতে চায় তিনটি বিষয়। এগুলো হচ্ছে তাঁরা কাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তাঁরা কী পরিমাণ আয় করবেন এবং কপালে বিদেশ ভ্রমণ আছে কি না? শাস্ত্রী জানান, তরুণেরা বিশেষ করে জানতে চান, তাঁরা মনের মানুষকে পাবেন কি না?
হিন্দু অধ্যুষিত নেপালে জ্যোতিষবিদ্যার শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। যেখানে বিয়ে, এমনকি নির্বাচনের তারিখও নির্ধারণ করা হয় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে। আর এ কারণেই অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
শাস্ত্রী বলেন, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই কৌতূহলী। মানুষ নিজের ও নিজের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি জানান, ভবিষ্যত্ জানতে তাঁর কাছে যাঁরা আসেন, তাঁদের মধ্যে অনেক বড় রাজনীতিকও রয়েছেন।
শাস্ত্রী বলেন, রাজনীতিকদের জিজ্ঞাস্য হচ্ছে, তাঁরা ক্ষমতায় যেতে পারবেন কি না, ভবিষ্যতে সরকারে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? তিনি বলেন, অনেক কমিউনিস্ট নেতা তাঁর কাছে এসে নিজেদের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাঁর গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছেন অনেক জ্যেষ্ঠ মাওবাদী নেতাও।
এএফপি অবলম্বনে দাউদ ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.