যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যায় ভাটা by ইব্রাহীম চৌধুরী,

যুক্তরাষ্ট্রে গত ছয় মাসে সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যায় ব্যাপক ভাটা পড়েছে। মন্দা অর্থনীতি ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির দাপটে প্রচারসংখ্যা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে এ দেশের সংবাদপত্র শিল্প। প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো আত্মরক্ষার জন্য তাদের পত্রিকার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞাপন ও বিপণনব্যবস্থায় পরিবর্তিত কৌশল নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিরীক্ষা ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশের ৩৭৯টি সংবাদপত্রে গত ছয় মাসে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ প্রচারসংখ্যা কমেছে। অনলাইন প্রযুক্তির কারণে এক দশক ধরেই সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিম্নগামী ছিল। কিন্তু গত ছয় মাসে এ দশকের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে পত্রিকার প্রচারসংখ্যা।
বনেদি পত্রিকা হিসেবে পরিচিত দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বহুল বিক্রীত সংবাদপত্র। সর্বশেষ নিরীক্ষা তথ্য অনুযায়ী, দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর প্রচারসংখ্যা ২২ লাখ। ইতিপূর্বে সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা হিসেবে পরিচিত ইউএসএ টুডে গত ২৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রচার ঘাটতিতে পড়েছে। গত ছয় মাসে তাদের প্রচারসংখ্যা কমেছে ১৭ শতাংশ। ইউএসএ টুডের প্রচারসংখ্যা এখন ১৯ লাখ। বিমানবন্দর ও হোটেলগুলোতে বেশি বিক্রি হয় পত্রিকাটি। মন্দা অর্থনীতিতে বিমানযাত্রী হ্রাস ও হোটেলগুলোতে পর্যটক ঘাটতিকেই পত্রিকাটির প্রচারসংখ্যা কমার কারণ মনে করা হচ্ছে।
২০০৮ সালে প্রচারসংখ্যায় নিউইয়র্ক টাইমস-এর অবস্থান ছিল তৃতীয়। পত্রিকাটির প্রচারসংখ্যা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ কমলেও তৃতীয় সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকার অবস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানে গড়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রচারসংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় লাখ। ছুটির দিন রোববার পত্রিকাটির প্রচারসংখ্যা গড়ে ১৪ লাখ বলে নিরীক্ষার তথ্যে জানা গেছে।
টিকে থাকার জন্য বেশির ভাগ সংবাদপত্রই কর্মী ছাঁটাই করছে। এ ছাড়া পত্রিকার দামও বাড়িয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস ইতিমধ্যে গত গ্রীষ্মে দাম বাড়িয়েছে এক দফা। প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো পত্রিকার অংশবিশেষ অনলাইনে বিনামূল্যে দেওয়ার পাশাপাশি কোনো কোনো অংশের জন্য ফি আরোপের চিন্তা করছে। অঙ্গরাজ্যভিত্তিক পত্রিকাগুলো বিপণনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনছে। সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত গ্রাহকদের পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া হবে। সপ্তাহান্তের শনি ও রোববার গ্রাহকেরা অনলাইনে পত্রিকা পড়বে অথবা নিউজ স্ট্যান্ডে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে।
মিশিগান ও টেক্সাসে একাধিক সংবাদপত্র এ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে অনলাইন পাঠকের সংখ্যা কমবে। অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রাপ্তিও ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র শিল্প এখন একদিকে প্রচারসংখ্যা ধরে রাখা, অন্যদিকে বিজ্ঞাপন প্রাপ্তি ও টিকে থাকার জন্য আয় নিশ্চিত করার সংঘাতে ভুগছে। সংকটের এ সময়ে প্রচারসংখ্যা বৃদ্ধির বদলে টিকে থাকার জন্য অর্থ সংগ্রহ ও অর্থ সাশ্রয়কেই গুরুত্ব দিচ্ছে এখানকার সংবাদপত্রগুলো।

No comments

Powered by Blogger.