ইরানের পরমাণু সংকট সমাধানে অগ্রগতি, খসড়া প্রস্তাবে মতৈক্য

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ভিয়েনায় কয়েক দিনের আলোচনার পর বিশ্বের তিন পরাশক্তি রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে। ওই প্রস্তাবের কপি গত বুধবার ইরানসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পাঠানো হয়েছে। আজ শুক্রবারের মধ্যে এ নিয়ে চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংকট নিরসনে মধ্যস্থতাকারী আইএইএ। সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এলবারাদি বার্তা সংস্থাকে বুধবার এ কথা বলেছেন।
আইএইএ প্রস্তাবিত ওই চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে বার্তা সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে, এই চুক্তিতে ইরানকে তার অপরিশোধিত ইউরেনিয়ামের মজুদ ফ্রান্স ও রাশিয়ায় পাঠাতে বলা হয়েছে। এ দুটি দেশে ওই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পর তা ইরানের কাছে ফেরত পাঠানো হবে। ওই ইউরেনিয়াম ইরান তার বেসামরিক পরমাণু চুল্লিতে ব্যবহার করে জ্বালানি ও বিদ্যুত্ উত্পাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। তবে ওই ইউরেনিয়াম তারা পরমাণু বোমা তৈরিতে ব্যবহার করতে পারবে না। পশ্চিমা বিশ্ব এই খসড়া চুক্তিকে একটি সাফল্য হিসেবেই বিবেচনা করছে। কারণ, তারা এত দিন সন্দেহ করে আসছিল, ইরান তার বেসামরিক পরমাণু কমসূচির আড়ালে বোমা তৈরির চেষ্টা করছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সে আশঙ্কা দূর হবে।
আইএইএ প্রধান এলবারাদি ওই বৈঠকের ব্যাপারে খুবই আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বৈঠকে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া সব পক্ষই চেয়েছে সংকটের সুন্দর সমাধান বের করে আনতে। এ লক্ষ্যে তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করতে অতীতকে পেছনে ফেলে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর চেষ্টা করেছেন। সংকট সমাধানে আমি একটি খসড়া চুক্তি তৈরি করেছি। খসড়ায় সব পক্ষের দাবিদাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে। এটা আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
রাশিয়ার একজন পরমাণুবিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইরান তার ইউরেনিয়ামের মজুদ আইএইএর কাছে হস্তান্তর করবে। এরপর আইএইএ তা রাশিয়ার কাছে পাঠাবে। রাশিয়ায় ওই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পর আইএইএর মাধ্যমে তা ফ্রান্সের কাছে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তেহরানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে ওই ইউরেনিয়াম তেহরান তাদের পরমাণু চুল্লিতে জ্বালানি ও বিদ্যুত্ উত্পাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
ইরানের প্রধান আলোচক আলী আসগর সুলতানিয়া আলোচনা ও খসড়া প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন। তবে ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। যুক্তরাষ্ট্রও খসড়া চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা আশা করছে, কয়েক দিনের মধ্যেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এতে ইরানের সঙ্গে অন্যান্য দেশের উত্তেজনাও কমে আসবে। আলোচনা ফলপ্রসূ করায় এলবারাদির প্রশংসাও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

No comments

Powered by Blogger.